For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

নিবন্ধনহীন ভূয়া সমিতির ফাঁদে নিঃস্ব অনেকেই

Published : Friday, 24 September, 2021 at 12:24 PM Count : 454

মৌলভীবাজারেশ্রীমঙ্গলে নাম ও নিবন্ধনবিহীন এক ভূয়া সমিতি দীর্ঘদিন ধরে সুদ বাবদ সদস্যদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। নতুন সদস্যদেরকে ঋণ দিয়ে সেই ঋণের সুদ বাবদ ৪০-৫০ শতাংশের বেশি নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে কথিত এই ভূয়া সমিতির নামে।

যেখানে বিভিন্ন সমিতিগুলো সুদ নিচ্ছে ১৩ শতাংশ, সেখানে এই সমিতি সুদ নিচ্ছে ৫০ শতাংশের উপরে। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই সমিতি আবার টিউবওয়েল মিস্ত্রি দ্বারা পরিচালিত। 

তবে, নাম ও নিবন্ধনবিহীন সমিতির সভাপতি মো. লতিফ মিয়া বলেন, কারো কাছ থেকে বেশি সুদ নেই না। 
সমিতির নিবন্ধন ও নাম না থাকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমরা পড়াশোনা জানি না, তাই নিবন্ধনের বিষয়ে জানতাম না। আর যেহেতু আমরা টিউবওয়েলের মিস্ত্রি দ্বারা পরিচালিত তাই আর সমিতির নাম দেইনি। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার কোর্ট রোডে এক ফার্নিচারের দোকানে বসে কথিত সমিতির ব্যক্তিরা অর্থ লেনদেন করেন। তাদের কোন অফিস নেই, নেই কোন কাগজপত্রের হিসাব। সমিতির কোন নাম নেই, কোন নিবন্ধনও নেই। 

অভিযোগ রয়েছে, অবৈধ ভাবে প্রায় চার/পাঁচ বছর ধরে সমিতির নামে এভাবেই সুদের ব্যবসা চালিয়ে আসছে নামবিহীন কথিত সমিতি। 

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি অবজারভারকে বলেন, 'আমি ওই সমিতির সদস্য হয়েছিলাম। আমাকে ওরা ব্যবহার করছে। নাম দেওয়ার পর টাকা এনেছিলাম ৫০ হাজার। তার সুদ বাবদ এখন এক বছরে দিতে হয় এক লক্ষ টাকা। এখন কি করবো। আমি টিউবওয়েলের কাজ করি। এখন তো আমার এতো টাকা দেওয়ার কোন সামর্থ নাই। আমি বড় কষ্ট করে বসবাস করার জন্য দুই শতক জায়গা কিনেছিলাম, এখন সেই জায়গা বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করতে হবে। আমি ইতিমধ্যে ৫০ হাজার টাকার সুদ পরিশোধ করেছি। তারপরও এখন এক লক্ষ টাকা দিতে হবে।'

৫০ হাজার টাকা কিভাবে এক লক্ষ টাকা হলো?- এমন প্রশ্নের উত্তরে ভুক্তভোগী বলেয়, '৫০ হাজার টাকার সপ্তাহে দেওয়া লাভের টাকা এবং কোন সপ্তাহে লাভ না দিতে পারলে জরিমানা হিসেবে সেই লাভের অর্ধেক লাভ মিলিয়ে এক লক্ষ টাকা হয়েছে, এখন সেই টাকা দিতে হবে।'

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী জানায়, আমরা এই সমিতির টাকার সুদ দিতে দিতে এখন নিঃস্ব হবার পথে। তাদের এতো বেশি সুদ, যা দিয়েও শেষ করা যাচ্ছে না। সুদ বেশি নিচ্ছে, এই বিষয়ে তাদের বলেও লাভ হচ্ছে না। আবার এ ব্যপারে কাউকে কিছু বলতেও পারছি না তাদের ভয়ে। পরে আমাদের উপর হামলা করবে। 

ভূয়া সমিতির ভুক্তভোগী আরেক সদস্য অবজারভারকে বলেন, 'করোনার লকডাউনের সময় যখন কাজকর্ম বন্ধ হয়ে গেছে, তখন সে সমিতিকে বলছে, এখন আমার কাজকর্ম কিছু নাই, আমি খেতেও পারছি না। টাকা দিমু কেমনে। আর লকডাউনে তো সমিতি বন্ধ। তাহলে আমি কিভাবে টাকা দেব। তখন তারা বলে কিস্তি না দিলে কিস্তির জরিমানা ও লাভও দিতে হবে। সমিতি থেকে ৫০ হাজার টাকা নেওয়ার পর, সেই টাকার সুদ বাবদ এক বছরে ৩৫ হাজার টাকা সুদ দিয়েছি।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে জায়গা বিক্রি করে নিঃস্ব হওয়া আরেক ভুক্তভোগী অবজারভারকে বলেন, 'কোর্ট রোডে কিছু টিউবওয়েল মিস্ত্রি আছে, তারা সুদের ব্যবসা করে। বিভিন্নজনের কাছে প্রতারণা করে। টিউবওয়েল মিস্ত্রি কয়েকজন মিলে একটা নাম ও নিবন্ধন ছাড়া সমিতি খুলছে, আর সেখানে ২৫ জন মিলে প্রথমে এই অবৈধ সমিতি চালু করছিল। এ পর্যন্ত তারা দুই হাজার গ্রাহক নিয়েছে। প্রথমে তাদের সমিতি দেখে আমার ভালো লেগেছিল। তাই সমিতির সদস্য হয়েছি। এরপরই বুঝতে পারি তারা সমিতির নামে সুদের ব্যবসা করছে। তারা এমন ভাবে টাকার লভাংশ নেয়, প্রতি সপ্তাহে এক হাজারে ১০ টাকা সুদ নেয়। আর যদি চলতি সপ্তাহে ১০ টাকা দিতে না পারে, তাহলে এর পরের সপ্তাহে তার অর্ধেক ৫ টাকা মিলিয়ে ১৫ টাকা দিতে হয়। এবং সঞ্চয় প্রতি সপ্তাহে ৫০ টাকা। আর যদি না দিতে পারে তাহলে পরবর্তীতে আরও ১০ টাকা জরিমানা দিতে হয়।'

তিনি বলেন, 'আমি অসুস্থতার কারণে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় ছয় লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা নিয়েছি। এই টাকা নেওয়ার পরে প্রতি সপ্তাহে তাদেরকে আমি ছয় হাজার ৮৫০ টাকা করে লাভ দিছি। এবং সঞ্চয় দিছি। এভাবে লাভ দিতে দিতে আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। তারপর আমার জায়গা বিক্রি করে তাদের টাকা পরিশোধ করছি। এই সমিতিকে এক বছরে ছয় লক্ষ ৮৫ হাজার টাকার লাভ বাবদ প্রায় তিন লক্ষ টাকা দিয়েছি। সব মিলিয়ে মোট নয় লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা দিছি। তারা আমাকে সঞ্চয় বাবদ প্রায় আট/নয় হাজার টাকার মতো দিয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'এই সমিতির উল্লেখিত কোন নাম নেই, তারা বলে ‘টিউবওয়েল মিস্ত্রি সমিতি’। সরকারকে তারা কোন ভ্যাট-টেক্স না দিয়ে নিজেরাই লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করছে। তাদের সমিতির কোন কাগজপত্র নেই, তারা ব্ল্যাংক চেক জমা রেখে টাকা দেয়। এই সমিতির কারণে অনেকে পালিয়ে গেছে এবং বিপদগ্রস্ত হয়েছে।

সমিতির নাম কি?- জানতে চাইলে উক্ত নামবিহীন সমিতির ক্যাশিয়ার মো. ফারুক মিয়া মোবাইলে অবজারভারকে বলেন, 'আমাদের সমিতির কোন নাম নেই। নিবন্ধন নেই। আমরা সবার কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে সমিতি চালাই। আর এই সমিতি করতে গিয়ে যে লাইসেন্স লাগে তা আমি জানি না। আমরা সাপ্তাহিক হিসাবে গ্রাহকদের লোন দেই।'

সমিতি কত টাকা সুদ নেয়?- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, 'কত টাকা সুদ নেই, সেটা ফোনে বলবো না। সামনা সামনি দেখা করলে বলবো, দেখা না হলে বলবো না।'

সমিতির সভাপতি মো. লতিফ মিয়া অবজারভারকে বলেন, 'আমরা এমনি কোন সমিতি করছি না। আমাদের ‘নলকূপ স্থাপন শ্রমিক সংঘ’ রেজিষ্ট্রেশন করা আছে (৯৯৮)। আমরা ২০/২৫ জন লোক, টিউবওয়েল মিস্ত্রি যারা আছি, এলাকার লোক মিলে আমরা একটা সমিতি করেছি কোর্ট রোডে। এই সমিতিটা চলছে প্রায় আট/দশ বছর ধরে। আমরা প্রতি বছরে ভেঙে দেই।'

তিনি বলেন, 'এই সমিতি করার উদ্দেশ্য হলো গরীব যারা আছে এবং টিউবওল মিস্ত্রি যখন বিপদে পড়বে, তখন কেউ কি সুদ ছাড়া টাকা দেবে। তাই আমরা একটা সমিতি করছি, আমরা আমরাই টাকা নেই, আবার টাকা শোধ করি। আমাদের সমিতির কোন নাম নেই। আর আমরা বেশি টাকা সুদ নেই না। 

সমিতির নিবন্ধনের বিষয়ে জানতে চাইলে সমিতির সভাপতি বলেন, 'লাইসেন্সের বিষয়ে সমাজ সেবা কর্মকর্তার সঙ্গে একবার আলাপ হইছিল।'

উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম অবজারভারকে বলেন, 'যদি কেউ সরকার থেকে নিবন্ধন না নিয়ে সমিতি পরিচালনা করে তাহলে সেই সমিতি সম্পূর্ণ অবৈধ। তারা কখনো অর্থ লেনদেন করতে পারবে না। আর ব্ল্যাংক চেক রেখে টাকা দেওয়ার তো কোন নিয়মই নেই। এভাবে অবৈধ ভাবে তারা সমিতি চালাতে পারেন না।'

-এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,