For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

বদলে গেছে দক্ষিণাঞ্চলের জীবনধারা

Published : Friday, 27 August, 2021 at 11:56 AM Count : 909

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভোলার দক্ষিণ উপকূলীয় জনপদ চরফ্যাশন উপজেলার নদীসমূহের লবণাক্ততা ক্রমশ বেড়ে চলছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে উপকূলীয় পানির উৎসগুলো লবণাক্ত হয়ে পড়ায় পানের অযোগ্য হয়ে পড়ছে পানি।

নোনা পানির এলাকার মানুষরা এখন তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। চরফ্যাশনের বুড়া গৌরাঙ্গ, মেঘনা, তেতুলিয়াসহ উপকূলের প্রায় বেশ কিছু খরস্রোতা নদীর পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা বেড়ে গেছে। এসব খরস্রোতা নদীগুলোতে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি প্রবেশ করে পূর্ণিমা, অমাবশ্যা ও জোয়ার চলাকালীন সময়ে।

ঢালচর, চরফ্যাশনের দক্ষিণের নদীতে গড়ে ওঠা একটি চর। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের পর এখানকার মানুষের উপর নেমে এসেছে এক অভিশাপ। নদীতে জোয়ারের উচ্চতা ও ঢেউ বৃদ্ধি পেয়েছে। 

স্থানীয়দের দাবি, গত এক মাসে ইউনিয়নের তিন দিক থেকে (উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিম) ভাঙ্গণে প্রায় ৫৫ একর জমি বিলীন হয়ে গেছে। পুকুরে মিঠা পানির বদলে নোনা পানি, ঝড়, জলোচ্ছ্বাসের তাণ্ডব, জোয়ারের তীব্রতা, নদী ভাঙ্গণ, নদীতে মাছ কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে বহু জেলে পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ এই পেশা এই চরের বাসিন্দা জেলেদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন। বিকল্প জীবিকা কিংবা তাদের নিরাপত্তায় বিশেষ কোন ব্যবস্থা নেই। 
চরফ্যাশন উপকূলীও ঢালচর এলাকায় নদী ও সাগর মোহনায় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহকারী জেলেদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সংকটের এমন চিত্র উঠে আসে। 

জেলেরা জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে মাছ ধরার ওপর নির্ভরশীল এই পরিবারগুলো প্রতিনিয়ত তাদের অবস্থান বদল করছে। কখনো নদীর ভাঙ্গণে, আবার কখনো ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে তাদেরকে বাড়ি ছাড়া হতে হয়। নদীর তীরে বসবাসকারী অধিকাংশ জেলে পরিবার বছরে একাধিকবার বসতি বদলাতে বাধ্য হন। 

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কোষ্ট ট্রাষ্টের গবেষণা তথ্যে জানা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনে দুর্যোগ এবং নদীতে মাছের অপ্রতূলতার কারণে জেলেরা উপার্জনে অক্ষম হয়ে পড়ে। অনেক সময় ঝড়ের কবলে পড়ে জাল, নৌকা সবই হারিয়ে ফেলেন তারা। অথচ অনেকে এই জাল-নৌকা সংগ্রহ করেছেন ধার দেনা করা টাকায়। ফলে তাদের ঋণের বোঝাও বাড়ছে। 

চরফ্যাশনের ঢালচর ঘাটের জেলে ইউসুফ আলী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে জীবিকার ধরণ বদলে গেছে। ঝড়-বন্যায় এখন আর নদীতে বেশি সময় মাছ ধরা যায় না। ঝড়ের সিগন্যাল পেলে মাছধরা ফেলে কিনারে চলে আসতে হয়। আবার কখনো কখনো নিম্নচাপের সংকেত থাকে বলে জাল, নৌকা নিয়ে নদীতে যাওয়া সম্ভব হয় না। 

একই এলাকার জেলে মোহাম্মদ আলী বলেন, ঝড়, জলোচ্ছ্বাসে নদীর পাড়ে বসবাসকারী জেলেদের জীবন ওলট-পালট করে দেয়, বাড়ি ঘরে পানি ওঠে। প্রবল বাতাসে ঘর উড়িয়ে নেয়। তখন মাছ ধরা তো দূরের কথা, ঘর বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র ছুটতে হয়। নদীতে মাছও কমে গেছে। ঢালচর, কুকরি, চরমাদ্রাজ ইউনিয়নের মেঘনার তীরে ঝড়-ঝঞ্জা বিক্ষুব্ধ জনপদে শত শত জেলের বসবাস। মেঘনা নদী আর সমুদ্রে জাল ফেলা, জালে ওঠা মাছ বাজারে বিক্রি করা, বছরের পর বছর তারা এভাবেই জীবিকা নির্বাহ করছে। জলবায়ু পরিবর্তনে নদীতে মাছ শুন্যসহ নানামূখী দুর্যোগে তাদের স্বাভাবিক জীবিকায় সংকট দেখা দিয়েছে। 

চরফ্যাশন মাদ্রাজ ইউনিয়নের সামরাজ ঘাটে মেঘনা থেকে ছোট্ট খাল ঢুকেছে ঘাটের কিনার ঘেঁসে। পড়ন্ত বিকেলে মাছ ধরা নৌকাগুলো খালের ভেতরে অলস পড়ে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রবল জোয়ার ও জোয়ারের উচ্চতা বেড়েছে বলে জানান এই এলাকার জেলেরা। 

ঢালচরের মেঘনা তীর ধরে তাদের লণ্ডভণ্ড বসতি দেখেই তা স্পষ্ট বোঝা যায়। বার বার মেঘনা থেকে উপচে পড়া জোয়ারের পানি জেলে বসতির জীবনধারা বদলে দিচ্ছে। 

জেলেরা জানান, জোয়ারের পানির প্রবল চাপে ভাঙ্গণের তীব্রতা যেমন বাড়ছে, তেমনি গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। 

উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে সমুদ্র-উচ্চতা এক মিটার বৃদ্ধি পেলে আমাদের দেশের ১৮ শতাংশ পানিতে নিমজ্জিত হবে এবং সরাসরি ১১ শতাংশ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় একশ কোটি মানুষ উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রতি সাত জনে একজন জলবায়ু পরিবর্তনের শিকারে পরিণত হবে। 

এ অবস্থা মোকাবিলায় দক্ষিণ উপকূলের সবগুলো বড় নদী ক্যাপিটাল ড্রেজিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ফলে নদীগুলোর স্বাভাবিক গতি বজায় থাকবে, নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, বন্যা নিয়ন্ত্রণ হবে, ডুবে যাওয়া কৃষি জমি পুনরুজ্জীবিত হবে। নদীগুলো নৌ চলাচলের উপযোগী থাকবে মাটির বাঁধ নির্মাণ করা হবে। 

-এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,