যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের ক্যাশ কাউন্টারের রশিদ ছাড়া পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে- সেখানে দায়িত্বরত জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. হাসান আব্দুল্লাহ'র নির্দেশে প্রকাশ্যে এই অনিয়ম হচ্ছে। বর্তমানে ইলেক্টোরাইড পরীক্ষার কোন রাজস্ব জমা হচ্ছে না। আত্মসাত করা টাকার একটি অংশ পৌঁছে যাচ্ছে হাসপাতালের কর্মকর্তার কাছে।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ ক্যাশ কাউন্টারের রশিদ ছাড়া করা পরীক্ষা-নিরীক্ষার নগদ টাকা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত পাঁচ দিনে ১৭ জনের ইলোক্টোরাইড পরীক্ষার টাকা গায়েব করার সত্যতা মিলেছে। এর মধ্যে ১৭ অগাস্টের খাতার ৫ নম্বর সিরিয়ালে আঁখি, ১৪ নম্বরে নুরজাহান, ২৪ নম্বরে মোজাফফর, ৩৫ নম্বরে হাওয়া, ১৮ অগাস্টের খাতায় ৯৫ নম্বর সিরিয়ালে বিমল সরকার, ১৯ অগাস্টের খাতায় ৫ নম্বর সিরিয়ালে রেজাউল ইসলাম, ৩০ নম্বরে জান্নাতি, ৩৭ নম্বরে গনি, ৬৫ নম্বরে রেজাউল, ৭৯ নম্বরে আকাশ, ৮২ নম্বরে নুরজাহান, ৮৮ নম্বরে হাবীব, ২১ অগাস্টের খাতার ১০ নম্বর সিরিয়ালে তৌহিদুর রহমান, ৬৭ নম্বরে শহিদুল ইসলাম, ২৩ অগাস্টের ১৯ নম্বর সিরিয়ালে শহিদুল, ৩৩ নম্বরে জব্বার ও ৬৯ নম্বরে নুরজাহান।
ক্যাশ কাউন্টারের রশিদ ছাড়া ইলেক্টোরাইড পরীক্ষা করতে আসা প্রতি জনের নিকট থেকে ২৫০ টাকা করে নেয়া হয়। এতো গেল শুধু ইলেক্টোরাইড পরীক্ষার হিসেব।
এছাড়া, আরও অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষায় অনিয়ম তো রয়েছেই।
সূত্র জানায়, হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে আর্থিক স্বচ্ছতা আনতে ২০১৮ সালে মে মাসে ক্যাশ কাউন্টার চালু করা হয়। কিন্তু ক্যাশ কাউন্টারের রশিদ ছাড়াই প্যাথলজি বিভাগে নগদ টাকা গ্রহণে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, প্যাথলজি বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. হাসান আব্দুল্লাহ'র নির্দেশে এই অনিয়ম করা হচ্ছে।
হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারী বলেন, প্যাথলজি বিভাগের আর্থিক দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে ক্যাশ কাউন্টারের রশিদ ছাড়া কোন পরীক্ষা নিরীক্ষা নয়। অথচ তা করা হচ্ছে না। ক্যাশ কাউন্টারের রশিদের অর্থ ছাড়া আর কোন টাকা রাজস্ব খাতে জমা করা হয়না। প্যাথলজি বিভাগে প্রকাশ্যে নগদ টাকা গ্রহণ করে তা ভাগাভাগি হচ্ছে। এতে করে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ক্যাশ কাউন্টারের রশিদ ছাড়া গ্রহণ করা টাকার একটি অংশ চলে যাচ্ছে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আরিফ আহমেদের কাছে।
এ বিষয়ে প্যাথলজি বিভাগের ইন চার্জ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) গোলাম মোস্তফার কাছে জানতে চাইলে তিনি কোন কথা না বলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করার পরামর্শ দেন।
প্যাথলজি বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. হাসান আব্দুল্লাহ'র সঙ্গে কথা বলার জন্য কয়েকবার তার দফতরে গেলে তিনি কাজে ব্যস্ততার অজুহাত দেখান।
মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মিটিংয়ে আছি।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ বলেন, প্যাথলজি বিভাগে আর্থিক দুর্নীতি দীর্ঘদিনের। ক্যাশ কাউন্টারের রশিদ ছাড়া পরীক্ষা নিরীক্ষার হাজার হাজার টাকা লোপাট করা হয়। আল্টিমেটাম দিয়েও অনিয়ম বন্ধ করা যায়নি। যে কারণে ক্যাশ কাউন্টারের রশিদ ছাড়া পরীক্ষার নিরীক্ষার কিছু টাকা আমার কাছে জমা রাখা হচ্ছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আখতারুজ্জামান বলেন, ক্যাশ কাউন্টারের রশিদ ছাড়া কখনো পরীক্ষার নিরীক্ষার টাকা জমা নিতে পারেন না। কিন্তু প্যাথলজি বিভাগে আর্থিক দুর্নীতি অনেক পুরাতন। এই প্রথা পরিবর্তনে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
-এমএ