লাউয়াছড়ায় সমৃদ্ধ হচ্ছে জীববৈচিত্র্য
Published : Thursday, 10 June, 2021 at 11:28 AM Count : 804
করোনা থেকে সবচেয়ে বড় শিক্ষা এটি। পর্যটক না থাকার কারণে বনের স্বাভাবিক পরিবেশে বন্যপ্রাণীর এমন স্বস্তি দেখা দিয়েছে।
লাউয়াছড়ায় ১০ দিনের কর্মশালায় এসে এমন বাস্তবতা উপলব্ধি করে কথাগুলো বলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. মো. আব্দুল আজিজ।
এদিকে, পর্যটকের অপরিকল্পিত আগমন লাউয়াছড়া ও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি বলে মন্তব্য করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. মো. কামরুল ইসলাম।
অপরিকল্পিত পর্যটক জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। তাছাড়া লাউয়াছড়ায় সড়কপথে যানবাহনে কাটা পড়ে বন্যপ্রাণী ও প্রচুর পরিমাণে নানা প্রজাতির সরীসৃপ মারাও যাচ্ছে।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পর্যটকদের জন্য বন্ধ রয়েছে উদ্যানটি। ফলে মানুষের উৎপাত নেই। এক বছরের ব্যবধানেই বনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যে ব্যাপক পরিবর্তন হচ্ছে। পর্যটক শুন্য নিরব, নিস্তব্ধ বনে হাল্লা-চিৎকার ও অবাধ বিচরণ করছে বন্যপ্রাণী।
গাছের ডালে ডালে পাখির কিচিরমিচির শব্দ। বৃক্ষরাজিতে নতুন পত্রপল্লবে সুশোভিত হচ্ছে বন। দিবালোকে বন্যপ্রাণী অবাধে বিচরণ করছে। গর্ভবতী ও প্রসবের পর বাচ্চাদের নিয়ে বিরল প্রজাতির উল্লুক দম্পত্তির দেখা মিলছে। এখন উল্লুকের আওয়াজ, বানরের লাফালাফি, পাখির কলরব, বন মোরগের ডাক শোনারও খবর পাওয়া যাচ্ছে। সাময়িকের জন্য হলেও বনের স্বাভাবিকতা ও বন্যপ্রাণীদের প্রাণচাঞ্চল্য প্রকৃতি ও পরিবেশকে সমৃদ্ধ করে তুলছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে ঘুরে লাউয়াছড়া বনের বিরল প্রজাতির হুল্লুকসহ গর্ভবতী বিভিন্ন প্রাণী ও বাচ্চাদের নিয়ে গাছে গাছে লাফালাফি, খাবারের সন্ধানে ঘুরে বেড়ানোর চিত্র দেখা যায়। উদ্যানে এখন দলবদ্ধ মানুষের তৎপরতা নেই। নেই পর্যটকদের আনাগোনা। করোনাকালীন সময়ে বনের ভেতরে সড়ক ও রেলপথে যানবাহন ও ট্রেন চলাচল না থাকায় গাড়ির শব্দও বন্ধ ছিল। এতে প্রাণচাঞ্চল্য ফেরে বন্যপ্রাণীদের মাঝে।
বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ ও বিভিন্ন উদ্ভিদের পুনর্জন্ম হচ্ছে বনটিতে। গাছের ডালে ডালে মা ও শিশু উল্লুক খাবারের সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দেখা মিলছে বাবা উল্লুককেও। কোন কোনটি গর্ভবতী আবার কোন কোন মা উল্লুক বাচ্চা প্রসব করে মনের আনন্দে বিচরণ করছে। দীর্ঘ সময় ধরেই বিরল প্রজাতির এই প্রাণিদের জন্যে লাউয়াছড়া বনটি গুরুত্ব বহন করে চলছে।
এদিকে, পরিবেশবাদী সংগঠন জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটি কমলগঞ্জের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুহুল ইসলাম হৃদয় অবজারভারকে বলেন, ‘বিশ্বের বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকসহ বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণী, উদ্ভিদ ও বৃক্ষরাজি সমৃদ্ধ লাউয়াছড়া উদ্যান। গত কয়েক দশকে এই বনের গভীরতা অনেক হ্রাস পেয়েছে। প্রাচীন গাছগাছালি চুরি, মাগুরছড়ায় গ্যাসকূপ বিস্ফোরণ, বনের ভেতর দিয়ে উচ্চ শব্দে রেল ও সড়কপথে ট্রেন, যানবাহনের যাতায়াত, গাড়ির হর্ন, অত্যধিক দর্শণার্থীর হইহুল্লোড়, পার্শ্ববর্তী টিলাভূমিতে হোটেল, কটেজ ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম সব মিলিয়ে অস্থিত্ব সংকটে পড়েছে বন ও বন্যপ্রাণী। তবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারি ভাবে ছুটি ঘোষণা ও যানবাহন বন্ধ হওয়ায় বনে পর্যটকের কোন উপস্থিতি নেই। এটিই এখন স্বস্তি।’
লাউয়াছড়ার ট্যুর গাইড আহাদ মিয়া ও স্থানীয় পুঞ্জির বাসিন্দা সাজু মারচিয়াং অবজারভারকে বলেন, ‘এই বনে প্রতিনিয়ত পর্যটকদের ভিড় থাকতো। উদ্যান বন্ধ ঘোষণায় বনে দিনের বেলা উল্লুকের আওয়াজ, বানরের লাফালাফি, পাখির কিচিরমিচির, সন্ধ্যায় বন মোরগের ডাক শোনা যাচ্ছে।’
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের মৌলভীবাজারস্থ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী অবজারভারকে বলেন, ‘এখন বন্যপ্রাণীর ডাক, শিশু ও উল্লুক দম্পতির অবাধ বিচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আগে মানুষের চলাচলের কারণে বন্যপ্রাণীর খাবার সংগ্রহ ও অবাধ চলাচলে প্রতিবন্ধকতা দেখা যেত। বর্তমানে করোনাকালীন সময়ে বন্যপ্রাণী অবাধে চলাচল করছে এবং উল্লুকসহ অন্যান্য প্রাণীও গর্ভবতী হচ্ছে এবং বাচ্চাও প্রসব করছে।’
-এমএ