মৃত্যুকে আপন করেই ওদের বেঁচে থাকা
Published : Tuesday, 1 June, 2021 at 3:24 PM Count : 212
মৃত্যুকে অতি আপন করে প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছে ভোলার চরফ্যাশনের দক্ষিণ উপকূলের চরাঞ্চলের মানুষ। চরফ্যাশন উপজেলার বিচ্ছিন্ন চর পাতিলা, চর মিজান, চর পিয়াল, ঠেলার চর, চর হাসিনা, দারভাঙ্গা, চর ফারুকী, সিকদারের চর, চর মোতাহার, চর লিউলিন, চর ভাসান, চর ময়েজসহ আরও অসংখ্য চরে লাখ লাখ হতদরিদ্র মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতার মাঝেই বছরের পর বছর বসবাস করছে।
এই চরগুলোতে কোন বেড়িবাঁধ নেই। জোয়ার ভাটার পানি মধ্যেই এদের জীবন।
আধুনিক সভ্যতার এই যুগেও এসব চরাঞ্চলে হাজার হাজার জেলেকে আবহাওয়ার সংকেত শোনার জন্য নির্ভর করতে হয় একমাত্র রেডিওর উপর। এসব দূর্গম চরের বেশির ভাগেই মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া খুবই দুস্কর। স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল দেখা তো স্বপ্নের মতো। কোন পত্র পত্রিকাও আসে না এই দূর্গম চরাঞ্চলগুলোতে।
প্রতি বছর ভোলার মূল ভূখন্ড থেকে নদী ভাঙ্গণের শিকার হয়ে সর্বস্ব হারিয়ে ছেলে পুলে নিয়ে রুটি-রুজির সন্ধানে ছুটে আসে মানুষগুলো এসব চরে। একটু মাথা গোঁজার আশায় তারা সেখানে গড়ে তুলে ঝুপড়ির মতো ঘর। নিজেদের কোন জমি নেই। তবুও অন্যের জমি চাষ করে কিংবা মেঘনা, তেতুলিয়া ও বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরে জীবন কাটায়।
জেলেরা যখন বেতার বার্তায় আবহাওয়ার পূর্ব সংকেত পায় তখন আর তাদের আর নৌকা নিয়ে তীরে ফেরার সময় থাকে না।
এখন ইলিশের মৌসুম। চরফ্যাশনের দক্ষিণ উপকূলের মেঘনা, তেতুলিয়া ও বঙ্গোপসাগর এলাকায় হাজার হাজার জেলে নৌকা ও ট্রলার নিয়ে মাছ ধরার আশায় সাগরে নেমেছে। আবহাওয়াও বৈরী। যেকোনো সময় বড় প্রাকৃতিক দূর্যোগ হানা দিতে পারে এই সব চরগুলোতে। এসব দূর্যোগকালীন সময়ে আশ্রয় নেওয়ার মতো পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্রও নেই।
ঢাল চরে প্রায় ১৫ হাজার লোকের বসবাস। সাইক্লোন সেন্টার আছে মাত্র একটি। তাতে ১২শ’ লোকেরও আশ্রয় নেওয়া সম্ভব নয়।
একই অবস্থা চর কুকুরী-মুকুরীর। সেখানে ১৭ হাজার লোকের জন্য সাইক্লোন সেন্টার কাম স্কুল আছে আটটি। চর পাতিলার দুই হাজার লোকের জন্য সাইক্লোন সেন্টার কাম স্কুল আছে মাত্র একটি।
ঢাল চরের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম হাওলাদার বলেন, ইলিশের মৌসুমে এই ইউনিয়ন চরটিতে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার লোকের সমাগম ঘটে। তাদের জলোচ্ছ্বাস থেকে বাঁচার জন্য কোন ব্যবস্থা নেই। ভাগ্যের উপর নির্ভর করে হাজার হাজার মানুষ চরে বসবাস করছে। চরের মানুষের নেই কোন নিরাপত্তা। এই চরে কোন বেড়িবাঁধ নেই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাই বছরের পর বছর বসবাস করছে হাজার হাজার মানুষ। চরফ্যাশনের মূল ভূখন্ড থেকে নদী পথে এর দূরত্ব প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ কিলোমিটার। বুরাগৌরঙ্গ নদীর উতালা ঢেউ পাড়ি দিয়ে এই চরে যেতে হয়। শুধু ঢাল চরেই নয়। চরফ্যাশন উপজেলার চর নিজাম, চর পাতিলাসহ অধিকাংশ চরেই নেই বেড়িবাঁধ। যার ফলেই চরম নিরাপত্বাহীনতায় কাটছে চরে বসবাসরত মানুষের জীবন।
-এমএ