For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

রঙমেহের-মোমেনার ঈদ কেটে গেলো নিরবেই

Published : Saturday, 15 May, 2021 at 4:58 PM Count : 292

‘আমাদের আবার ঈদ আনন্দ কিসের? নদী তাড়া করে বেড়াচ্ছে। এখন কোথায় আশ্রয় নেই সেই চিন্তায় আছি। এক সময় আমাদের ১২ গন্ডা জমি ছিলো, পুকুর ছিলো, হাস-মুরগী আর গরু-ছাপগল ছিলো। এখন আর কিছুই নেই। নদীতে ৬ ভাঙ্গা দিয়েছে, সব হারিয়ে এখন নি:স্ব।’

ঈদের দিনের কথা বলতেই এভাবে ক্ষোভ আর দু:খের কথা জানালেন চরফ্যাশনের ঢালচরের বৃদ্বা রঙমেহের (৬৫)। ঈদ নিয়ে বৃদ্বা মোমেনা (৬০) জানালেন একই কষ্টের কথা।
চারদিকে যখন ঈদের আনন্দে আত্মহারা মানুষ, ঠিক তখন ঈদেও মলিন মুখ রঙমেহের ও মোমেনাদের মত হাজারো পরিবারের। যারা ভাঙ্গনের কবলে পড়ে নি:স্ব, নেই নতুন জামা-কাপড় আর খাবার জোগানোর ক্ষমতা।
 
নদী ভাঙ্গন, জোয়ার-ভাটা আর প্রকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ চরফ্যাশনের ঢালচর উপকূলের বিপন্ন মানুষের যেন ঈদের আনন্দ নেই। বশীরভাগ মানুষ ঈদ কাটিয়েছে নিরবে-মলিন মুখে।
দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করে চলা এসব মানুষ পরিবারের সদস্যদের দু’বেলা দু’মুঠো খাবার কিংবা নতুন জামা কাপড় তুলে দিতে পারছেন না তারা। চরম অভাব-অনাটন আর অনিশ্চতার মধ্যেও যেন ভেসে গেছে তাদের ঈদের আনন্দ। সরকরিভাবে সহযোগীতা এলেও অধিকাংশের ভাগ্যে তা জুটছে না। ১’শ বছরের পুরনো দ্বীপের এক তৃতীয়াংশ ভাঙ্গনের বিলীন হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ এসব এলাকায় ঈদের আনন্দ নেই।

জেলে বধু লাকি আক্তার বলেন, নদীতে ৫বার ভেঙ্গেছে আর ৫ বার নতুন করে ঘর তৈরী করেছি, এখন অন্যের জমিতে আশ্রয়। কয়দিন পর এই বাড়িটাও ভেঙ্গে যাবে, কিন্তু অন্য কোথায় যাওয়ার কোন পথ নেই।

একই অবস্থা সালমা বেগমেরও। নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকার জালাল আহমেদ স্ত্রী ও সন্তানের কিনে দিতে পারেননি নতুন কাপড়। তিনি জানান, গত ঈদেও একই অবস্থা ছিলো। হাসির পরিবর্তে ঈদ মানেই দু:খ কষ্ট আর জীবনের কাছে হার মেনে যাওয়া।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মূল ভূ-খন্ড, শহর আর গ্রামে ঈদের আনন্দ বইলেও চরফ্যাশনের ঢালচর উপকূলের চিত্র যেন ভিন্ন। প্রতিদিনের মত এখনও পরিবারের মুখে খাবার তুলে দেয়ার যুদ্ধ তাদের। নদী ভাঙ্গন, জোয়ার আর প্রকৃতিক দুর্যোগের সাথে যুদ্ধে করে তারা কিছুতেই ঘুরে দাড়াতে পারছেনা। জোয়ার-ভাটার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। তারমধ্যে আবার নদীতে মাছ নেই, কামাই নেই। অনেকে সন্তানদের কিনে দিতে পারেনি নতুন জামা-কাপড়। ঈদের দিনও তাদের ভালো ভাবারের পরিবর্তে খেতে হবে ডাল-ভাত।

ভাঙ্গন কবলিত চরফ্যাশনের ঢালচর উপকূলের এলাকার ১২ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশু সামসুন নাহার, রেশমি, নাফিসা, আকলিমা, সবুজ, সালাউদ্দিন ও রিমি জানান, তাদের বয়সী অন্যরা শিশুরা নতুন জামা কাপড় পড়ে ঘুরে বেড়ায়, হাসি আনন্দ করে। কিন্তু আমরা কেউ নতুন জামা পাইনী। পুরনো ছেড়া জামা-কাপড় পড়ে রয়েছি।

ঢালচরের বাসিন্দা আসমা আক্তার, সিরাজ, আলাউদ্দিন, হনুফা আক্তার, জেসমিনসহ অন্যরা জানান, সরকারের দপ্তর থেকে ঈদ উপলক্ষে ঈদ বস্ত্র বিতরণ হলেও আমরা পাইনী, আমাদের দু:খ কষ্টের কথা কেউ শোনেনা। এই যে ঈদ চলছে, চারদিকে হাসি আনন্দ আর উৎসব, কিন্তু আমাদের কষ্ট আর দু:খ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চরফ্যাশনের মূল ভূ-খন্ড বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ও বাধের উপর বাস করে ২ লাখের অধিক মানুষ। দিন মজুর, জেলে ও ক্ষেত খামারে কাজ করে দিন কাটে তাদের। প্রতি বছরই বিভন্নভাবে ক্ষতির সম্মখুন হলেও সরকারের দপ্তরের কোন সাহায্য সহযোগীতা পৌছায় না তাদের কাছে এমন অভিযোগ বাসিন্দাদের। এ অবস্থায় ঈদ তাদের জীবনে খুশির বন্যা বয়ে আনতে পারেনি।

এ ব্যাপারে চরফ্যাশন উপজেলা নিবার্হী কর্মকতা বলেন, ঈদে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি-বেসরকারী সংস্থা থেকে সহযোগীতা করা হয়েছে।

এসআর
 



« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,