করোনার ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চান ফুল চাষীরা
Published : Saturday, 13 February, 2021 at 6:38 PM Count : 175
ফুলকে ভালবাসে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। জন্মদিন থেকে মৃত্যু দিনে সর্বত্র ভালবাসার প্রতীক হিসেবে ফুলের ব্যবহার হয়। এর সুবাস ও সৌন্দর্য্য প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে দোলা দিয়ে যায়।
সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নে বাণিজ্যিক ভাবে গোলাপ ফুল চাষাবাদ করায় দর্শণার্থীদের কাছে এলাকাটি গোলাপ গ্রাম নামেই পরিচিত। গোলাপ ছাড়াও অন্যান্য ফুলের চাষও হয় এখানে। সারা বছর জুড়েই নদী ও সড়ক পথে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পরিবার এবং বন্ধুদের নিয়ে এই গোলাপ গ্রামের ঘুরতে আসেন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।
সরেজমিনে গোলাপ গ্রাম ঘুরে ফুল চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বছরের শেষ দিকে ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত এখানে উৎপাদিত বিভিন্ন জাতের ফুলের চাহিদা এবং দাম বেশি থাকে। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারী মাসে ফুলের চাহিদা বৃদ্ধি ও দাম ভালো থাকায় দিন-রাত পরিশ্রম করে কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠে। ইউনিয়নটির কালিয়াকৈর, বাগ্নিবাড়ি, সাদুল্লাহপুর, মৈস্তাপাড়া ও শ্যামপুরসহ প্রায় প্রতিটি গ্রামেই বছর জুড়ে বাণিজ্যিক ভাবে ফুল চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন প্রায় ৮০ ভাগ লোক।
রাজধানীর বিখ্যাত ফুলের বাজার শাহবাগ, আগারগাঁও ছাড়াও এখানকার আকর্ষণীয় গোলাপের চাহিদা রয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। সাড়া বছর জুড়ে গোলাপের চাহিদা থাকলেও বিশেষ উৎসবের দিনগুলোতে এর চাহিদা বহুগুণ বেড়ে যায়। নিজেদের প্রয়োজনেই চাষিরা গড়ে তুলেছেন ফুলের বাজার। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে বেচাকেনা চলে রাত পর্যন্ত। প্রতিদিন ৬-৮ লাখ টাকার গোলাপ কেনা-বেচা হয় এই বাজারে। তবে বিশ্বব্যাপী করোনার কারণে গত ৬-৭ মাস ফুল বিক্রি না হওয়ায় ফুল চাষীদের জীবনে নেমে আসে হতাশা। ফুল বিক্রি করতে না পারায় স্বপ্নের বাগানের ফুল বাগানেই শুকিয়ে ঝড়ে গেছে। গত এক মাস ধরে আবারও দর্শণার্থীরা ভিড় জমাচ্ছেন সাভারের গোলাপ গ্রামখ্যাত বিরুলিয়া এলাকায়। বাগান ঘুরে দেখার পাশাপাশি নিজেদের চাহিদা ও পছন্দ অনুযায়ী ফুল কিনছেন তারা।
এছাড়া, পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস ও অমর একুশে ফেব্রুয়ারীকে ঘিরে বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষীরা। দাম ভালো থাকায় করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রকৃতিজুড়ে উৎসবের আগমনী বার্তা ঘিরে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন এখানকার চাষীরা।
ফুল চাষী নজরুল ইসলাম বলেন, করোনার কারণে গত এক বছরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন বন্ধ থাকায় ফুল বিক্রি করতে পারিনি। ওই সময় বাগানের ফুল বাগানেই শুকিয়ে ঝড়ে গেছে। একমাত্র আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় টিকে থাকার জন্য বাধ্য হয়ে পেশা পরিবর্তন করেছেন অনেকেই।'
আরেক চাষী জহিরুল হক বলেন, 'গত ৬ মাস ফুল বিক্রি না হওয়ায় আমরা আর্থিক ভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। এরপরও ফেব্রুয়ারী মাসকে ঘিরে ক্ষতি পুষিয়ে লাভবান হওয়ার স্বপ্নে বাগানে সার, বিষ দিয়ে পরিচর্যা করে গেছি। করোনার পরিস্থিতির উন্নতির কারণে আগের চেয়ে ফুল বিক্রি ও দামও ভালো পাচ্ছি। আর কোন সমস্যা না হলে এই মাসেই পূর্বের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবো।
প্রান্তিক চাষী সুরুজ মিয়া বলেন, সারা বছর ধরে গোলাপের চাষ হলেও ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত গোলাপ ফুলের জমজমাট মৌসুম থাকে। এ সময় তিন’শটি ফুলের একটি বান্ডিল বিক্রি হয় ১ হাজার ৫শ থেকে দুই হাজার টাকা। তবে অফ সিজনে বান্ডিল বিক্রি হয় ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকায়। এ জন্য অনেক কৃষক বিভিন্ন দিবসকে টার্গেট করে ফুলের চাষ বেশি করেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত আহমেদ বলেন, ফুল চাষীদের টিকিয়ে রাখতে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে উদ্বুদ্ধ করা হয়। করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ ফুল চাষীদের সহায়তার জন্য উপজেলা পরিষদ থেকে অর্থায়ন পেয়েছি, যা খুব শীঘ্রই প্রদান করা হবে। প্রতি বছর প্রায় ৩শ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হলেও এবার করোনার প্রভাবে কিছুটা কমেছে। এরপরও এবার দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার ফুল বিক্রি হতে পারে।
-এমএ