মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি ও ক্ষমতাসীন দলের জ্যৈষ্ঠ নেতাদের আটকের পর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। এ ঘটনায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
সামরিক এই অভ্যুত্থানের কারণে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা ও স্থানীয়রা।
এদিকে, সীমান্তে বিজিবি সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।
জানা গেছে, সোমবার (০১ ফেব্রুয়ারি) ভোরে মিয়ানমার সেনাবাহিনী নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে এএলডির নেত্রী অং সান সূ চি, রাষ্ট্রপতিসহ বেশ কিছু জেষ্ঠ নেতাদের আটক করে।
একটি পক্ষ এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলে, নির্বাচিত সরকারকে এভাবে উৎখাত করা নিঃসন্দেহে অপরাধ। মিয়ানমার সেনাবাহিনী ক্ষমতার মসনদে যাওয়ার জন্য মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে সেনা অভুত্থানের ঘটনা ঘটিয়েছে।
২৬ নম্বর ক্যাম্পের হেড মাঝি বজলুর ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় তার ক্যাম্পের বেশির ভাগ রোহিঙ্গারা উৎকন্ঠায় রয়েছে। কেননা তাদের মিয়ানমারে ফেরত যাওয়া অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
২২ নম্বর ক্যাম্পের সৈয়দ হোসেন বলেন, তাদেরকে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করলে সেনাবাহিনী এই অভুত্থানের ঘটনা ঘটায়, এতে তারা মর্মাহত।
অপরদিকে, রোহিঙ্গাদের একটি অংশ আনন্দিত হয়ে বলেছে সু চি ও তার সরকারের পতন হওয়াতে তারা খুশি। দীর্ঘ দিন পরে সু চি সরকার ক্ষমতায় এলেও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য কিছুই করেনি। বরং তার আমলে অর্থাৎ ২০১৭ অগাস্টে সেনাদের অবর্ণনীয় নির্যাতন ও নিগৃহীতের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছে। সূ চি নির্লজ্জ ভাবে সেনাদের সমর্থন করেছে।
রোহিঙ্গা নেতা নুর বশর বলেন, অং সান সু চি সরকারের পতন হওয়াতে তারা আনন্দিত। সূ চি এ পর্যন্ত আমাদের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী আখ্যায়িত করেননি। যা আমাদেরকে ব্যথিত করেছে।
২৬ নং ক্যাম্পের ষাটোর্ধ খদিজা নামক এক রোহিঙ্গা নারী জানান, সূ চির জন্য সোনার বার্মা থেকে পালিয়ে ছোট ছোট ঝুপড়ি ঘর ও ত্রিপলের নিচে অবস্থান করতে হচ্ছে। প্রায় ৪ বছর হলেও রোহিঙ্গাদের ফেরাতে তার সরকারের কার্যত কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
তাই তার পতন হয়েছে বলেও এই নারীর অভিমত।
তবে উভয় পক্ষ মনে করে, এ অভ্যুত্থানের ঘটনায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত দীর্ঘ এক বছর প্রত্যাবাসনের কোন কার্যকলাপ করা যাবে না।
এলাকাবাসী জানান, মিয়ানমারে সেনা অভুত্থানের ঘটনায় রোহিঙ্গাদের ফেরা অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে গেল। ফলে এতদঞ্চলের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে অবনতির দিকে যাবে বলে মনে করেন তারা।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনায় সীমান্তে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। পাশাপাশি রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (০১ ফেব্রুয়ারি) ভোরে দেশটির সেনাবাহিনী মিয়ানমারের নেত্রী ও স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি ও তার ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে আটক করে।
ক্ষমতা দখলের পর মিয়ানমারে এক বছরের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েছেন সেনা সমর্থিত মিন্ট সোয়ে। তবে আইনসভা, নির্বাহী বিভাগ এবং বিচার বিভাগের ক্ষমতা নিয়েছেন সেনাপ্রধান মিং অং হ্লাইং।
-এমএ