রুক্ষতার মৌসুম শীত। অনেকেই মনে করে এ সময় বাগানে ফুটবে না কোনো ফুল। পছন্দের ছাদ বা বারান্দার বাগান মলিনই থেকে যাবে। কিন্তু এই শীতে কুয়াশার মলিনতা সরিয়ে রঙ ছড়াতে পারে হলুদ গাঁদা কিংবা চন্দ্রমল্লিকার দল। শীতের কিছু মৌসুমি ফুল যদি আপনার ছাদে বা বাসার করিডরে না ফোটে, তখন শীতকালটা মনে হতে পারে একেবারেই পানসে। তা হলে দেরি না করে শিগগিরই আপনার বাগান, বারান্দা কিংবা করিডর সাজিয়ে ফেলুন বাহারি সব শীতের ফুলগাছ দিয়ে। কিন্তু এই সময়ে বাগানের চাই কিছু যত্ন। বিশেষ করে শহরের ছাদ বা বারান্দার বাগানগুলো টবনির্ভর। তাই টবে কোন ধরনের ফুলের গাছ ভালো হয়, তা জানতে হবে প্রথমেই। জানতে হবে যত্নআত্তি ও পরিচর্যাও।
শীতে যে ফুলগুলো টবে ফোটেদেশি গাঁদা, জাম্বো গাঁদা, বড় ইনকা গাঁদা, ছোট ছোট চায়না গাঁদা, রক্ত গাঁদা, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, সূর্যমুখী, হলিহক, এন্টিরিনাম, জারবেরা, মর্নিংগ্লোরি, অ্যাস্টার, কসমস, সেলভিয়া, ডায়ান্থাস, ফ্লক্স, ভারবেনা, কারনেশান, ক্যালেন্ডুলা, গ্ল্যাডিওলাস, বাগানবিলাস, অ্যাজালিয়া, পিটুনিয়া, নাসস্টারশিয়ামসহ নানা রঙের দেশি-বিদেশি গোলাপ অনায়াসেই টবে লাগানো যেতে পারে। তবে একটি কথা, বাগানের মাটিতে লাগানো গাছের ফুল ফোটার সময় টবের গাছের চেয়ে ১০-১২ দিন বেশি লাগবে। যারা মাত্র কয়েকটি গাছ লাগিয়ে এবারই টবে গাছ লাগানোর হাতে খড়ি দিতে চান, তাদের বলব, সহজে মরে না এবং একটু কম যত্ন নিলেও ফুল ফোটে এমন সব গাছ লাগাতে।
টব প্রস্তুত করতে হবে যেভাবে * প্রথমে গাছের সঙ্গে মানানসই সাইজের টব সংগ্রহ করতে হবে। তবে ছোট গাছের জন্য বড় টব হলে ক্ষতি নেই, কিন্তু বড় গাছের জন্য ছোট টব চলবে না।
* এরপর টবের জন্য সার-মাটি তৈরি করে নিতে হবে। যেকোনো ধরনের দোআঁশ মাটির সঙ্গে সমপরিমাণ পচা গোবর সার অথবা টবপ্রতি ২৫০ গ্রাম প্যাকেটের কম্পোস্ট সার, ৫ চামচ টিএসপি এবং ৩ চামচ এমপি সার ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে।
* একমুঠো হাড়ের গুঁড়া, দুই চা-চামচ চুন, দুমুঠো ছাই মেশাতে পারলে ভালো হয়। এতে টবের মাটি দীর্ঘদিন উর্বর থাকবে। টবে ঝুরঝুরে মাটির সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের সার ভালো করে মিশিয়ে টব এমনভাবে ভরতে হবে যেন ওপরে ১ ইঞ্চি পরিমাণ খালি থাকে।
* ঠিক মাঝখানে চারাটি গোড়ার মাটিসহ টবে লাগিয়ে গোড়ার মাটি হালকাভাবে চেপে দিতে হবে। চারা লাগিয়ে তাতে ঝাঁজরি দিয়ে চারা-মাটি ভিজিয়ে পানি দিতে হবে।
* গাছকে খাড়া রাখার জন্য একটি কাঠি দিয়ে অবলম্বন তৈরি করে দিতে হবে। গাছের চারা অবস্থা থেকেই এ ব্যবস্থা করতে হয়।
* টবে গাছের গোড়ার মাটি একেবারে গুঁড়া না করে চাকা চাকা করে খুঁচে দেয়া ভালো। এ ক্ষেত্রে মাটি খোঁচানোর গভীরতা হবে ৩-১০ সেন্টিমিটার বা ১ থেকে ৪ ইঞ্চি। এ কাজটি ১০ দিনে একবার করতে হবে।
টিপস* টবটি রোদেলা জায়গায় রাখুন।
* কেবল গাছের গোড়ায় পানি না দিয়ে ঝাঁজরি দিয়ে বৃষ্টির মতো ওপর থেকে পানি দিন।
* এক মৌসুমে রাসায়নিক সার তিনবারের বেশি দেয়ার প্রয়োজন নেই।
* রাসায়নিক সার ব্যবহারের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন সার কোনোক্রমেই শিকড়ের ওপর না পড়ে।
* বেশি দিন ধরে ফুল ফোটাতে চাইলে গাছে কখনো ফুল শুকাতে দিতে নেই। শুকানো শুরু হলেই ফুল কেটে দিতে হয়। এতে ভালো ফুল পাওয়া যায়।
* গাঁদা, অ্যাস্টার, চন্দ্রমল্লিকা প্রভৃতি গাছ থেকে বেশি ফুল বেশি দিন ধরে পেতে চাইলে প্রথম দিকে আসা কিছু কুঁড়ি ছেঁটে দিতে হবে।
এসআর