নগরায়ণ আমাদের দৃষ্টির দূরত্ব যেমন সীমিত করে দিয়েছে, তেমনি পায়ের নিচের খোলা মাঠ বা বাড়ির আঙিনাও ছোট হতে হতে এখন প্রায় শূন্যের কোঠায়। আগে সব বাড়ির সামনে খোলা উঠানে এক টুকরো বাগান ছিল অনেকটাই আবশ্যক। কিন্তু এখন শহুরে অ্যাপার্টমেন্ট জীবনে সে সুযোগ নেই। তাইতো প্রকৃতিপ্রেমীরা বেছে নেন বাড়ির ছাদ। আজকাল অনেকেই বাসার ছাদেই বাগান তৈরি করেন। যার যতটুকু ছাদ তার ততটুকুই বাগান। সে বাগানে জায়গা পায় ফলের গাছ থেকে শুরু করে, ফুল, সবজির গাছ পর্যন্ত।
গাছ মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু। গাছ না থাকলে মানুষ বেঁচে থাকতে পারবে না। আর ছাদবাগান মানুষের রুচির প্রকাশ ঘটায়। পাশাপাশি তাজা ফল, সবজিও পাওয়া সম্ভব। ছাদবাগান করতে হলে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। প্রথমে প্রয়োজন একটি সুচিন্তিত নকশা। প্রথমে ছাদের আয়তন ভাগ করে নিন। কোন অংশে কোন গাছ লাগবেন, সেটি ঠিক করুন। কোন অংশে সবজি, কোন অংশে ফুল বা অন্যান্য গাছ লাগাবেন, তার ভিত্তিতেও ভাগ করতে পারেন। কোন অংশে বসার ব্যবস্থা করবেন, সেটি ছাউনিযুক্ত হবে না খোলামেলা, হাঁটাচলার পথ কেমন থাকবে— এসব বিষয় মাথায় রাখুন। গাছের ছায়া পড়বে এমন জায়গায় বসার স্থান রাখতে পারেন।
গাছ রোপণ করতে প্রথমেই প্রয়োজন হবে মাটি। ছাদের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী মাটি মজুত করতে হবে। একটা বাগানের জন্য কী পরিমাণ মাটি লাগবে, তার ওজন কত। আবার বৃষ্টিতে কিছুটা পানি আটকে যাবে। এ ছাড়া পরিচর্যার জন্যও নিয়মিত গাছে পানি দিতে হবে। ফলে ভেজা মাটির ওজন আরো বেড়ে যাবে। এসব সমীকরণ আগেই মিলিয়ে নিতে হবে। তা না হলে বাড়ির এবং ছাদের ক্ষতি হতে পারে। তাই বাড়ির ধারণক্ষমতার ওপর নির্ভর করবে কোন ধরনের গাছ লাগাবেন। ধারণক্ষমতা বেশি হলে প্রায় সব রকম গাছই লাগানো যাবে। অল্প মাটিতে ছোট গুল্মজাতীয় গাছের বাগান করাও সম্ভব।
যত্ন-আত্তি
* শুধু গাছ লাগালেই হবে না, প্রয়োজন সঠিক পরিচর্যাও। গাছের পরিচর্যায় অবসর যেমন কাটবে, তেমনি মনও থাকবে সজীব। আবার কিছুটা কায়িক শ্রমও হয়ে যাবে।
* ছাদবাগানের যত্নের মূল বিষয় হচ্ছে পর্যাপ্ত সূর্যালোক, পরিমাণমতো পানি। শীত ও গ্রীষ্মে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় মাটির আর্দ্রতা দেখে পানি দিতে হবে।
* সাধারণত ছাদের গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়। পাখি ও বাদুড়ের উত্পাত খুব বেশি হয়। বাদুড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য ফল বা সবজির ওপর জাল দেয়া যেতে পারে।
* বছরে অন্তত একবার পুরোনো মাটি বদলিয়ে জৈব সারসহ নতুন মাটি দিতে হবে।
* মাঝেমধ্যে রোগাক্রান্ত, বড় হয়ে যাওয়া ডালপালা, পাতা সাবধানে কেটে দিতে হবে। এতে গাছপালা রোগমুক্ত থাকবে।
* ফুল ও সবজিতে প্রয়োজনমাফিক সার দিতে হবে।
* কিন্তু আম, পেয়ারার মতো ফলের ক্ষেত্রে বছরে অন্তত দুবার পরিমাণমতো সার দিতে হবে। একবার বর্ষার আগে, একবার বর্ষার পরে হলে ভালো হয়। সার প্রয়োগের সময় মাটির আর্দ্রতা দেখে নিতে হবে।
* ছাদের বাগানে মিশ্র সার, গুটি ইউরিয়া, খৈল ইত্যাদি ব্যবহার করা ভালো। অবস্থা বুঝে গাছের গোড়ায় সপ্তাহে একবার চুনের পানি ব্যবহার করতে পারেন।
এসআর