শীতকাল এলেই বাজারে চোখে পড়ে নানা রঙের সবজির। শুধু দেখার সৌন্দর্যে নয়, আমাদের দেহেও এগুলোর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব। এসব মৌসুমি শাকসবজি গ্রহণের মাধ্যমে সহজেই শরীরের চাহিদা মোতাবেক পুষ্টি উপাদান, বিশেষ করে ভিটামিন ও মিনারেলসের চাহিদা পূরণ সম্ভব। এমনকি বেশ কিছু জটিল রোগ নিরাময়েও এগুলো বেশ কার্যকর।
ফুলকপি: ভিটামিন এ, বি ও সি-এর বড় উৎস এই ফুলকপি। ছাড়াও এতে আছে ফসফরাস, পটাশিয়াম ও সালফার। গর্ভবতী, শিশু ও কঠোর পরিশ্রমীদের সুস্বাস্থ্যের জন্য ফুলকপি বেশ উপাদেয়। এতে আয়রনের পরিমাণও বেশি। তাই রক্ত উৎপাদনে এই সবজি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এতে খারাপ কোলেস্টেরল নেই। পাকস্থলী, মূত্রথলি, প্রোস্টেট, স্তন ও ডিম্বাশয় ক্যানসার প্রতিরোধে ফুলকপি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। শীতকালীন রোগবালাই যেমন জ্বর, কাশি, সর্দি ও টনসিল নিরাময়ে এই সবজি কার্যকর।
বাঁধাকপি: শর্করা, চিনি, ফাইবার, স্নেহ পদার্থ, প্রোটিন, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, নিয়েসিন, প্যানটোথেনিক অ্যাসিড, ভিটামিন বি ও সি, ফোলেট, ক্যালসিয়াম, লোহা, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম ও দস্তার উৎস বাঁধাকপি। ফাইবার জাতীয় খাবার হওয়ায় এটি শরীরের স্থূলতা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। আলসার প্রতিরোধেও সক্ষম বাঁধাকপি। রক্তে চর্বি ও শর্করা কমায়। বিশেষ করে পাকস্থলী ও পেপটিক সারাইয়ে এর জুড়ি নেই। ভিটামিন সি হাড়ের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে।
মুলা: এতে ভিটামিন সি এর পরিমাণ বেশি। এ ছাড়া শর্করা, চিনি, ফাইবার, স্নেহ, প্রোটিন, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, নিয়েসিন, প্যানটোথেনিক অ্যাসিড, ফোলেট, বিটা-ক্যারোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, পটাশিয়াম ও দস্তার আকর। এসব উপাদান নানা রোগের পথ্য। বিটা-ক্যারোটিন হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। মুলা খেলে শরীরের ওজন কমে। আলসার ও বদহজম উপশমে ভূমিকা রাখে। কিডনি ও পিত্তথলিতে পাথর তৈরিতে বাধা দেয়। দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। ত্বকের সৌন্দর্যও ফুটিয়ে তোলে।
গাজর: প্রচলিত আছে গাজর খেলে চোখ ভালো থাকে। এরও সত্যতা রয়েছে। কারণ গাজরে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এ। এ ছাড়া শর্করা, চিনি, ফাইবার, স্নেহ পদার্থ, প্রোটিন, বিটা ক্যারোটিন, লুটিন জিজানথেন, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, নিয়েসিন, প্যানটোথেনিক অ্যাসিড, ফোলেট, ভিটামিন সি ও ই, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, দস্তা ও ফ্লুরাইডের উৎস গাজর। উপাদানগুলো শরীরের কোনো না কোনো রোগ সারায়। গাজর অন্ত্রের ক্যানসার প্রতিরোধ করতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। গাজরের সঙ্গে মধু মিশিয়ে ব্যবহার করলে চামড়ার মরা কোষ দূর হয়।
শিম: আমিষের ভালো একটি উৎস শিম। এ সবজির বীজ ডাল হিসেবেও খাওয়া হয়। তাতে আমিষসহ প্রচুর পরিমাণে স্নেহ পদার্থ থাকে। আঁশসমৃদ্ধ হওয়ায় শিম পরিপাকে সাহায্য করে, কোষ্ঠকাঠিন্য সারায়। সবজিটি খেলে ডায়রিয়া কমে। রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে হৃদরোগ থেকে রেহাই দিতে পারে। পাকস্থলী ও প্লীহার শক্তি বাড়ায় শিম। লিউকোরিয়াসহ নারীর নানা ধরনের রোগ সারায়। এর ফুল আমাশয় রোগের পথ্য।
টমেটো: এতে আছে শর্করা, চিনি, ফাইবার, স্নেহ, প্রোটিন, বিটা ক্যারোটিন, লুটিন জিজানথেন, থায়ামিন, নিয়েসিন, ভিটামিন বি, সি, ই ও কে, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, পটাশিয়াম ও লাইকোপেন। ভিটামিন সি চুলের রুক্ষতা দূর করে। শীতজনিত রোগ সারায়। চর্মরোগ ও স্কার্ভি প্রতিরোধেও সক্ষম টমেটো। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সূর্যের ক্ষতিকর আলট্রা ভায়োলেট রশ্মির বিরুদ্ধে লড়ে। এ ফলের লাইকোপিন পেশি মজবুত করে।
পালংশাক: ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফলিক অ্যাসিড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এসব উপাদান আর্থ্রাইটিস ও অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধের পাশাপাশি কোলন ও ত্বকের ক্যানসার সারায়। প্রচুর ভিটামিন সি থাকায় এই শাক খেলে হাড় সুগঠিত হয়। এ ছাড়া কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে পালংশাক।
এসআর