সাপ্তাহিক হাট বন্ধ থাকায় নওগাঁয় লোকসানের মুখে ইজারাদাররা
Published : Thursday, 23 April, 2020 at 9:27 AM Count : 179
নওগাঁর রাণীনগরে করোনা ভাইরাসের কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য সাপ্তাহিক হাট বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন ইজারাদাররা। হাট বন্ধ থাকার কারণে লাখ লাখ টাকা লোকসানের মুখে পড়েছেন ছোট-বড় হাট ইজাদাররা। এমতাবস্থায় সরকারি অনুদান প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তারা।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ছোট-বড় মোট ১৬টি সাপ্তাহিক ও দৈনিক হাট ও বাজার রয়েছে। প্রতি বছর সরকার এসব হাট ও বাজার ইজারার মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে আসছে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী মরণঘাতক করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশেও স্থবির হয়ে পড়েছে সবকিছু। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের কারণে জনসমাগম বন্ধ করার লক্ষ্যে সরকার বন্ধ করে দিয়েছে উপজেলার সকল সাপ্তাহিক হাটগুলো।দৈনিক বাজারগুলো দিনের নির্দিষ্ট সময় বসলেও সেগুলোও বন্ধ থাকছে সিংহভাগ সময়।
জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম ধানের হাট হচ্ছে উপজেলার আবাদপুকুর হাট ও গরু-ছাগলের জন্য ত্রিমোহনী হাট। করোনা ভাইরাসের কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে এই দুটি হাট। এতে করে হাটের ইজারাদাররা লাখ লাখ টাকা লোকসানের মুখে পড়েছেন। এছাড়াও হাট বন্ধ থাকায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত বিভিন্ন কৃষি পণ্যগুলো বিক্রি করতে না পারায় লোকসানে পড়েছেন তারাও। কারণ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকাররা এই হাটগুলোতে এসে পণ্য কিনে বিভিন্ন অঞ্চলে চালান করতো।
ত্রিমোহনী হাটের ইজাদার মো. বেদারুল ইসলাম বলেন, সরকারি ইজারার মাধ্যমে আইটি ও ভ্যাট দিয়ে মোট ৬৫ লাখ টাকায় এক বছরের জন্য ত্রিমোহানী হাটটি ইজারা নিয়েছি। কিন্তু করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ১০টি হাট বসানো সম্ভব হয়নি। সপ্তাহের শনিবার ও মঙ্গলবার এই দুই দিন হাটটি বসানো হতো। ধান, পাটসহ অন্যান্য পণ্যের পাশাপাশি গরু ও ছাগল বিক্রি এই হাটের আয়ের প্রধান উৎস। গরু ও ছাগলের জন্য জেলার মধ্যে অন্যতম এই হাট।
তিনি বলেন, প্রতিবার হাট বন্ধ থাকায় আমার প্রায় দেড় লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে। আর কত দিন যে হাট বন্ধ থাকবে তা বলা সম্ভব নয়। ইতিমধ্যেই সরকার কৃষি, গার্মেন্টসসহ অন্যান্য খাতে কোটিকোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। কিন্তু সারাদেশের কয়েক লাখ হাট-বাজার ইজাদারদের জন্য কিছুই ঘোষণা করা হয়নি। হাট ও বাজার বন্ধ থাকার কারণে আমরা লাখ লাখ টাকা পুঁজি হারিয়ে পথে বসতে চলেছি। হাট বসলেও সরকারকে রাজস্ব দিতে হয় আবার না বসলেও দিতে হচ্ছে তাহলে আমরা কোথায় যাবো। সরকারি ভাবে আমাদেরকে যদি কোন সহায়তা না দেওয়া হয় তাহলে পুঁজি হারিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভিক্ষা করেও অন্ন জোটানো সম্ভব হবে না।
আবাদুপুকুর হাটের ইজাদার শহিদুল ইসলাম ফটিক বলেন, চলতি বৈশাখ মাসে প্রায় ১ কোটি টাকা রাজস্ব দিয়ে হাটটি ইজারা নিয়েছি। কিন্তু তারপর থেকেই হাট বসানো বন্ধ করা হয়েছে। এতে আমি কয়েক লাখ টাকার লোকসানে পড়েছি। জানি না আর কত দিন হাট বসানো বন্ধ থাকবে। তাই সরকারের কাছে দাবি যে কয়েক দিন হাট বন্ধ থাকবে সে কয়েক দিনের টাকা হয় মওকুফ করে দিন আর না হয় প্রণোদনা প্রদান করুক। তা না হলে আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কিন্তু সর্বশান্ত হয়ে যাবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, সারাদেশে একই অবস্থা। আমি মনে করি সরকার অবশ্যই কেন্দ্রীয় ভাবে হয়তো এ বিষয়ে কোন না কোন সিদ্ধান্ত নিবেন। এছাড়াও আমি ইজাদারদের এই ক্ষতির বিষয়ে ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা নিশ্চই কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসরাফিল আলম বলেন, হাট ইজারাদাররাও চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তাদেরওকে প্রণোদনার আওতায় আনা উচিৎ তা না হলে তাদের অনেকেই পুজি হারিয়ে পথে বসবে। আমি অবশ্যই সরকারের নীতি নির্ধারকদের এ বিষয়ে দ্রুত পজেটিভ পদক্ষেপ গ্রহণ করার অনুরোধ জানাবো।
-এমএ