সাভারে ইয়ামিন হত্যা: শেখ হাসিনাসহ ৪৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা
Published : Monday, 26 August, 2024 at 10:56 AM Count : 162
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গত ১৮ জুলাই সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে শিক্ষার্থী শাইখ আসহাবুল ইয়ামিনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
রোববার ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুল ইসলামের আদালতে মামলা করেন নিহতের মামা আব্দুল্লাহ আল কাবির।
আদালত বাদির জবানবন্দি গ্রহণ করে সাভার মডেল থানাকে মামলাটি নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেন। এডভোকেট মনিরুজ্জামান মারুফ ও সাকিল আহমাদ মামলার আইনজীবী নিযুক্ত হন।
নিহত শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন মিরপুরের মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলো।
মামলার উল্লেখযোগ্য অন্য আসামিরা হলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, পুলিশের সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন, ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অব্স) আব্দুল্লাহ হিল কাফি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) সাহিদুল ইসলাম, সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহজামান সাভার থানা, সাভার থানার উপ-পরিদর্শক সুদীপ, হারুন অর রশিদ ও সাব্বির, সাভারের আন্দোলনে গুলি করে ভাইরাল হওয়া নড়াইলের বাবুল শরিফ (নারী পুলিশ সদস্যের স্বামী), সাভার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজিব ও ঢাকা-১৯ আসনের সাংসদ সদস্য মো. সাইফুল ইসলাম।
মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে মামলার আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মলনে আন্দোলন প্রতিহত করার জন্য উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান করেন। এতে তিনি বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের আন্দোলনকারীদের নির্মূলের নির্দেশ দেন। আসামি ওবায়দুল কাদের বলেন, আন্দোলনকারী ছাত্রদের নির্মূল করার জন্য ছাত্রলীগ যথেষ্ট।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৮ জুলাই দুপুর দেড়টায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সম্মিলিত ভাবে শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা করে। তারা শাইখ আসহাবুুল ইয়ামিনকে ধরে টেনে পুলিশের সাজোয়া যানের কাছে নিয়ে বুকের বাম পাশে গুলি করে। এমতাবস্থায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা ইয়ামিনকে টেনে পুলিশের সাজোয়া যানের উপরে ফেলে রেখে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে ভীতি প্রর্দশনের জন্য গড়িটি চালাতে থাকে। পরে ইয়ামিনকে প্রায় মৃত অবস্থায় রাস্তায় ফেলে দেয় এবং সাজোয়া যানের ভেতর থেকে একজন পুলিশ সদস্য বের হয়ে তার পায়ে পুনরায় গুলির র্নিদেশ দেয়।
ওই পুলিশ সদস্য ইয়ামিনকে মৃত ভেবে গুলি না করে রাস্তার উপরের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে টেনে নিয়ে রোড ডিভাইডারের পাশে ফেলে দেয়। পুলিশ সদস্যরা গুলিবিদ্ধ শাইখ ইয়ামিনকে ধরাধরি করে উঁচু রোড ডিভাইডারের একপাশ হতে আরেক পাশ ছুড়ে ফেলে। তাকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
কোনো ধরনের ময়নাতদন্ত না করে এবং তৎক্ষণাৎ কোনো মৃত্যর সনদ না দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইয়ামিনের মরদেহ হস্তান্তর করে। এ সময় হাসপাতালে উপস্থিত ছাত্র-জনতা প্রতিবাদ করিলেও পুলিশ বাহিনী ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থার লোকজন ছাত্র-জনতাকে হাসপাতাল ত্যাগে বাধ্য করে এবং ইয়ামিনের পরিবারের দায়িত্বশীল সদস্যদের ঢাকা ও সাভার রেঞ্জের পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মৃত্যু নিয়ে কোনোরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাতে বা সংবাদ মাধ্যমে তথ্য দিতে বারণ এবং মামলা না করার জন্য ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। উদ্ভূত বিশেষ পরিস্থিতিতে ইয়ামিনের পরিবার তাকে সাভারের ব্যাংক টাউন এলাকায় কবরস্থানে দাফন করেন।
-ওএফ/এমএ