পর্যটক শূন্য লাউয়াছড়া, স্বস্তিতে বন্যপ্রাণী
Published : Thursday, 25 July, 2024 at 12:33 PM Count : 891
কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংস পরিস্থিতিতে জরুরী অবস্থা জারি ও সাধারণ ছুটি ঘোষণায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে শূন্যের কোটায় নেমেছে পর্যটকের সংখ্যা। এ কয়েকদিনে পর্যটকের হইহুল্লোড় ও ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় স্বস্তিতে বন্যপ্রাণী। ফলে বন্যপ্রাণীর অবাধ চলাচলে নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে বন ফাঁকা, গাছ উজাড় হওয়ায় বন্যপ্রাণীরা খাদ্য ও বাসস্থান সংকটে পড়েছে। তাছাড়া বনের ভেতর দিয়ে রেলপথ, সড়ক পথ ও প্রধান বৈদ্যুতিক লাইনের কারণে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বন্যপ্রাণী।
বন সংকোচন, অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ, অবাধে পর্যটক, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বিদ্যুতের আলো, নতুন বনায়ন না হওয়া, বন বেদখল হওয়া, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল হ্রাস ও খাদ্য সংকট এসব নানা কার্যক্রমে বন্যপ্রাণীর প্রজনন বাঁধাগ্রস্ত হওয়ায় বনের জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিচ্ছে। রেল ও সড়কপথে কিংবা বিদ্যুৎ লাইনে পৃষ্ট হয়েও নানা সময়ে বন্যপ্রাণী মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে।
খাবারের সন্ধানে বানর, শূকরসহ নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী লোকালয়েও হানা দিচ্ছে। বানরের উৎপাতে নানা সময়ে পর্যটকরাও আতঙ্কে থাকেন। তবে দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিদ্যমান পরিস্থিতি জরুরী অবস্থা ও সাধারণ ছুটি থাকায় বন্ধ রয়েছে লাউয়াছড়া উদ্যানের গেট। পর্যটকদের উপস্থিতিও নেই বললেই চলে। ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় বনের ভেতর দিয়ে ট্রেনের ঝনঝনানি শব্দও নেই। সড়কপথে যান চলাচলের পরিমাণও কম। ফলে বন্যপ্রাণীর অবাধ চলাচলে নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন। মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির হেডম্যান ও পরিবেশবিদ জিডিসন প্রধান সুচিয়ান বলেন, ‘এখন পর্যটক নেই, মানুষের হইহুল্লোড়ও নইে। ট্রেনের ঝনঝনানি শব্দও নেই। নিরব নিস্তব্ধ পরিবেশে বন্যপ্রাণী। এটি বন্যপ্রাণীর জন্য স্বস্তির পরিবেশ।’
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের দায়িত্বরত ব্যবস্থাপক শাহিন আহমেদ বলেন, ‘লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে এই সময়ে প্রতিদিন ৫০০-৭০০ দেশি-বিদেশি ট্যুরিস্ট আসতেন। তখন টিকিট বিক্রি করে সরকারের রাজস্ব আয় হতো ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। এখন গড়ে ৭ থেকে ৮ জন পর্যটক আসছেন। এই কয়েকদিনে সরকারের রাজস্ব নেই বললেই চলে।’
এ ব্যাপারে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের লাউয়াছড়া বন রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের চলমান পরিস্থিতির কারণে লাউয়াছড়া উদ্যানের গেট বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া পর্যটকরাও আসতে দেখা যায়নি। পর্যটক শূন্য, ট্রেন চলাচল বন্ধ ও যানবাহন চলাচল কম থাকার কারণে বন্যপ্রাণীর মধ্যে স্বস্তিবোধ হওয়া স্বাভাবিক।’
১৯৯৬ সালে লাউয়াছড়া বনকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণার পর থেকে সেখানে পর্যটকদের ঢল নামছে। বনকে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলতে রেস্ট হাউস, ইকো-কটেজ, স্টুডেন্ট ডরমিটরি, প্রকৃতি ব্যাখ্যা কেন্দ্র স্থাপনের ফলে পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। উদ্যানের গাঁ ঘেষে বন জঙ্গল ও মাটি কেটে স্থাপিত হচ্ছে বিভিন্ন কর্টেজ। ফলে বনের ভেতরে দল বেঁধে মানুষের অবাধ বিচরণ, বন্যপ্রাণীর খাবার সংগ্রহ, বাসস্থান ও চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। যে কারণে খাবারের সন্ধানে জঙ্গলের দূর্লভ প্রাণীগুলো জনপদে ছুটে এসে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষের হাতে ধরা পড়ে অথবা গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যাচ্ছে।
লাউয়াছড়া উদ্যানে ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, চার প্রজাতির উভচর, ছয় প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি এবং ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে।
-এসএস/এমএ