ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরায় ঘূর্ণীঝড় রেমালের তান্ডব চলছেই। ঘূর্ণীঝড়ের তান্ডবে প্রচন্ড বাতাস ও মেঘনায় অতি জোয়ারের তোড়ে ৪ স্থানে বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে ৪-৫ ফুট পানিতে ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অর্ধালক্ষাধিকের ওপর মানুষ। জোয়ারের ভেসে গেছে শতাধিকের ওপর পুকুর ও ঘেরের মাছ।
এছাড়াও জোয়ারে পানির চাপে মূল পাকা সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ায় উপজেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ৩নং উত্তর সাকুচিয়া ও ৪নং দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়ন।
এদিকে সোমবার মেঘনার পানি বিপদসীমার ১১২ সেন্টিমিটারের ওপর প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ডিভিশন-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ। তিনি জানান, মনপুরায় ২২০০ মিটার বেড়ীবাঁধের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও ৪ টি স্থানে বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে গ্রাম পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
অপরদিকে সবচেয়ে নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে উপজেলার থেকে বিচ্ছিন্ন বেড়ীবাঁধহীন নবগঠিত কলাতলী ইউনিয়ন। সেখানে সোমবার ৫-৬ ফুট জোয়ারের পানিতে পুরো ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে বলে মুঠোফোনে জানান নির্বাচিত কলাতলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন হাওলাদার। সেখানকার বাসিন্দারা আশ্রয়কেন্দ্র ও ঘরের চালে আশ্রয় নিয়েছেন বলে তিনি জানান।
সোমবার সকাল থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, প্রবল বাতাসের সাথে অতি বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। মেঘনায় অতি জোয়ারের তোড়ে উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের সোনারচর পূর্বপাশে বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। এছাড়াও ৪ নং দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের দখিনা হাওয়া সি-বিচ সংলগ্ন বেড়ীবাঁধ, সূর্যমুখীর উত্তর পাশ ও দক্ষিণ পাশের বেড়ীবাঁধ জোয়ারের তোড়ে ভেঙ্গে গ্রাম পর গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে।
বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে ও জোয়ারের পানিতে হাজিরহাট ইউনিয়নের দাসের হাট, চর মরিয়ম, সোনারচর, চরজ্ঞান, চরযতিন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অপরদিকে ৪ নং দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের রহমানপুর ও দক্ষিণ সাকুচিয়া গ্রাম প্লাবিত হয়। এছাড়াও মনপুরা ইউনিয়নের পূর্ব আন্দিরপাড় গ্রাম ও পশ্চিম আন্দিরপাড় গ্রাম প্লাবিত হয়। বিচ্ছন্ন বেড়ীবাঁধহীন কলাতলী ইউনিয়ন জোয়ারে প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়াও ৩ নং ইুত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের মাষ্টারহাট এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এই ব্যাপারে হাজিরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন হাওলাদার ও ৪ নং দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অলি উল্লা কাজল জানান, জোয়ারের পানিতে ৪ স্থানের বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
এই ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ডিভিশন-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ জানান, জোয়ার থেমে গেলে ভাঙ্গা বেড়ীবাঁধ সংস্কার করা হবে।
এই ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জহিরুল ইসলাম জানান, বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
এদিকে সোমবার বিকেল সাড়ে ৪ টায় এই রির্পোট লেখার সময়, উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের সোনারচর ও চরযতিন এলাকার পূর্বপাশে বেড়ীবাঁধ সম্পূর্ন ভেঙ্গে গেছে। এতে ওই এলাকায় জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে বলে নিশ্চিত করেন ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন হাওলাদার। তিনি জানান, প্রায় আধা কিলোমিটারের ওপরে বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে সমস্ত এলাকা ডুবে গেছে। আনুমানিক ওই এলাকার ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
বিচ্ছিন্ন মনপুরা, লঞ্চ যোগাযোগ বন্ধ, দেড় হাজার বাসিন্দা আটকা হাতিয়ার ৪ নং ঘাটে
ঘূর্ণীঝড়ের কারনে মনপুরার সাথে ঢাকা, তজুমুদ্দিন, চরফ্যাসন ও নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার ৪ নং ঘাটের লঞ্চ যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এতে পুরো দেশের সাথে মনপুরা উপজেলা বিচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। এই সমস্ত ঘাটে দেড় হাজারের ওপরে স্থানীয় বাসিন্দারা মনপুরা আসতে না পারায় আটকা পড়ে আছে। আটকা পড়া বাসিন্দারা হোটেল ও আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। হাতিয়ার ৪ নং ঘাটে এক হাজারের মনপুরা আসার যাত্রীর সাথে মনপুরা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রার্থী জাকির হোসেন মিয়া রযেছেন। তিনি যাত্রীদের খাবার ও থাকার ব্যবস্থা করছেন বলে নিশ্চিত করেন।
এপিজে/এসআর