For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

চলনবিলও রক্ষা পাচ্ছেনা পুকুর খেকোদের হাত থেকে !

Published : Thursday, 16 May, 2024 at 6:19 PM Count : 255


জেল জরিমানা কোন কিছুতেই থামছে না পুকুর খনন। চলনবিলে রাত-দিন প্রকাশ্যে কৃষি জমিতে চলছে পুকুর খননের মহোৎসব। কৃষি জমির মাটি যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায় খোলা ডাম ট্রাক ও ট্রাক্টর যোগে মাটি পরিবহণ করায় নষ্ট হচ্ছে পাকা, আধাপাকা ও ঢালাই রাস্তাঘাট। ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয় হচ্ছে। মাটিবাহী গাড়ির বেপরোয়া গতির ধুলোবালিতে জনজীবন অতিষ্ঠসহ ঘটছে দুর্ঘটনাও। অবাধে পুকুর খননে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্টের পাশাপাশি ক্রমাগত কমছে কৃষি জমি। দ্রæতই কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়া গেলে চলনবিল ও কৃষিজমি বিলুপ্তির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পরিবেশবিদরা।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুকুর খননের মাটি বাণিজ্যে নেমেছেন স্থানীয় জনপ্রনিধি, সরকার দলীয় আওয়ামীলীগ,যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নামধারী নেতাকর্মীসহ অসাধু একশ্রেণির মাটি ব্যবসায়ীরা। নাটোর ৪ অসনের সংসদ সদস্য ডাক্তার সিদ্দিকুর রহমানের আইন শৃংখলা মিটিংয়ে টেবিল চাপড়িয়ে কথা বলা কিংবা মহান সংসদে বক্তব্য দেওয়া কোনটাই কাজে আসছে না। উল্টো তারই লোকজন প্রকাশ্যে দাম্ভিকতা দেখিয়ে হাজার হাজার হেক্টর কৃষি জমি গিলে খাচ্ছে বলে দাবি এলাকা বাসীর। ফলে চলনবিল অধ্যুসিত এলাকা নাটোরের গুরুদাসপুর,সিংড়া, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ ও পাবনার চাটমোহরসহ কমপক্ষে ৭ থেকে ৮টি উপজেলায় চলছে অবৈধ্য বেআইনি ফসলি জমিতে পুকুর কাটার কাজ। এতে হুমকিতে পরেছে চলনবিলের মৎসজীবি,জলজপ্রাণী, কৃষক ও কৃষিজমিসহ জীববৈচিত্র।

গুরুদাসপুর কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১১ সালে গুরুদাসপুরে ফসলি জমির পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার ৬০৯ হেক্টর। এই জমির চলতি বছরে এসে দাঁড়িয়ে ১৫ হাজার হেক্টরে। অর্থাৎ ২০১১ সাল থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত পুকুর খননের কারণে উপজেলাজুড়ে ১ হাজার ৫১০ হেক্টর ফসলি জমি পুকুর হয়েছে। তথ্যমতে, ১১ সালে ফসলি জমি কমেছে ৭০ হেক্টর, ২০১২ সালে কমেছে ৮০ হেক্টর, ২০১৩ সালে কমেছে ৯৫, ২০১৪ সালে কমেছে ১০৫, ২০১৫ সালে কমেছে ১২০, ২০১৬ সালে কমেছে ১৩০, ২০১৭ সালে কমেছে ১১৫ হেক্টর এবং ২০১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪১০ হেক্টর ফসলি জমি কমেছে। একইভাবে চলনবিল অধ্যুসিত নাটোরে সিংড়া,সিড়াজগঞ্জে তাড়াশ,পাবনার চাটমোহরে হাজার হাজার বিঘা জমি পুকুরের পেটে যাচ্ছে। এ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না  দেশের সর্ব বৃহৎ চলনবিলও।
কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. হারুনর রশিদ জানান, এভাবে ফসলি জমি নষ্ট করে পুকুর খনন করায় মারাত্মক ফসল হানি ঘটছে। নিয়মনীতি উপেক্ষা করে নির্বিচারে পুকুর খনন করায় প্রতি বছরই আশঙ্কাজনক হারে কমছে ফসলি জমি। এভাবে চলতে থাকলে মাছে ভাতে নয় মাছে মাছে বাঙ্গালী হতে হবে। পর বর্তীতে ইচ্ছা করলেও এই ক্ষতি কমানো সম্ভব নয়।

বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় গুরুদাসপুরের বিয়ঘাট ইউনিয়নের চিকুরমোড় বাবলাতলা, জ্ঞানদা নগর ধলার বিল ও হাড়িভাঙ্গা বিলে গিয়ে দেখাযায়, নাটোর জেলা পরিষদের সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা সরকার মেহেদী হাসান প্রায় শতাধিক বিঘা এবং ধারাবারিষা ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েনেটে অর্ধশত বিঘা জমিতে পুকুর খনন করছেন যুবলীগনেতা মন্ডল হাবীব। এরকম অসংখ্য নেতার নামে বেনামে পুকুর খনন চলছে বলে এলাকাবাসী জানান। এলাকাবাসী আরো জানান, তারা সরকার দলীয় এমপির লোক হওয়ায় ক্ষমতার দাপটে প্রকাশ্যেই ত্রিফসলী জমি নিধন করলেও প্রতিবাদ করতে গেলে মার খেতে হচ্ছে। কয়েক মাসে উপজেলার নাজিরপুর,মশিন্দা ও মকিমপুরে প্রায় ১২ থেকে ১৪ জন প্রতিবাদকারী পুকুর খেকোদের হাতে মার খেয়েছে বলেও এলাকাবাসী জানান। এভাবেই চলনবিলের আনাছে কানাছে চলছে অবাধে পুকুর খনন। যার কারনে বিল সংকুচিত হয়ে পরছে। হারিয়ে যাচ্ছে চলবিলের যৌলুস।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ভেকু ব্যবসায়ী সরকার মেহেদী হাসান ও মন্ডল হাবীবকে একাধিকবার  মুঠোফোনে কল দিলেও তারা কল ধরেন নি।
 
এদিকে সিংড়া উপজেলার সুকাশ ইউনিয়নের হাঁসপুকুরিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে ফয়সাল আহমেদ নামের এক ব্যক্তি পুকুর খনন করছেন। আর সেই পুকুরের মাটি বাণিজ্যে নেমেছেন ভেকু ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন। এখানে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা গাড়ি মাটি বিক্রয় হচ্ছে। এখানে খোলা ড্রাম ট্রাক ও ট্রাক্টর যোগে দূর-দূরান্তে মাটি বহনের ফলে ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে মেরামত করা সদ্য সমাপ্তকৃত এলজিইডির হাঁসপুকুরিয়া-ছিলামপুর পাকা সড়ক নষ্ট হতে বসেছে।

রাজশাহী বিশ্ব বিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যপক ড. এফএম আলী হায়দার চলনবিলে কৃষির বিলুপ্তি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, অবাধে পুকুর খননে বিলের জীবকূল অস্তিত্ব সংকটে পড়ছে।

গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সালমা আক্তার বলেন, গুরুদাসপুর, তাড়াশ, চাটমোহর এবং সিংড়া উপজেলা চলনবিল অধ্যুসিত এলাকা। বিলে পুকুর খনন করায় ফসলি জমি কমে যাওয়ার পাশাপাশি মারাত্মকভাবে চলনবিলের সৌন্দর্য্য হানি হচ্ছে। এ কারণে পুকুর কনন বন্ধে প্রচার প্রচারনা ও জেল জরিমানাসহ অভিযান অব্যাহত রেখেছেন তিনি।
 
এবিষয়ে নাটোর ৪ আসনের সংসদ সদস্য ডাঃ সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী তার মুঠোফোনে জানান, আপনারা সরকারের পাশে থাকেন। আমাদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন,তাহলে কেউ ত্রিফসলী জমিতে পুকুর খনন করে পার পাবেনা । সে যেই হোক তাদের আইনের আওতায় আসতেই হবে।

এমএ/এমবি

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,