আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়পুরহাট-১ (সদর-পাঁচবিবি) আসনে ত্রিমুখী লড়াই বেশ জমে উঠেছে। কাগজ কলমে প্রার্থীর সংখ্যা সাত জন হলেও ভোটের মাঠে চলছে ট্রাক, নৌকা ও কাঁচির ত্রিমুখী লড়াই। বাকী চার জনের নড়াচড়া তেমন চোখে পড়ছে না।
এদিকে, ভোটারদের আকৃষ্ট করতে প্রতিদিনই পাল্টে যাচ্ছে প্রার্থীদের প্রচারণা ও গণসংযোগের ধরণ। দিনে-রাতে ভোটারদের দরজায় কড়া নাড়ছেন তারা।
ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশের ছোঁয়া লেগেছে এবারের প্রচারণায়। বিভিন্ন গানের সুর নকল করে প্রার্থীদের নামে চলছে ভোট প্রার্থনা। ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে সরব প্রচারণা। কর্মী-সমর্থকরা বিভক্ত হয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চল ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে পাড়া মহল্লায় ঘুরে ঘুরে নিজ প্রার্থীর লিফলেট বিতরণ করছেন। আবার রাস্তার মোড়ে মোড়ে করছেন কর্মী সভা। পোষ্টারে পোষ্টারে ছেয়ে গেছে শহরের অলি-গলি থেকে মাঠ-ঘাট পাড়া-মহল্লা। পাশাপাশি চলছে মাইকিং। এবারের মাইকে প্রচারের সময়সীমা হচ্ছে দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।
জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক সালেহীন তানভীর গাজী জানান, জয়পুরহাট সদর ও পাঁচবিবি উপজেলা নিয়ে গঠিত জয়পুরহাট-১ আসন। এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাত জন প্রার্থী। ভোটার সংখ্যা হচ্ছে চার লাখ ৪৩ হাজার ৭২৭ জন। এর মধ্যে মহিলা ভোটার হচ্ছেন দুই লাখ ২২ হাজার ৬৭৭ জন ও হিজড়া ভোটার ছয় জন। আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী সামসুল আলম দুদু (নৌকা) ছাড়াও রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে এম রায়হান মন্ডল মনু (ট্রাক), আব্দুল আজিজ মোল্লা (কাঁচি), জাতীয় পার্টির এ কে এম মোয়াজ্জেম হোসেন (লাঙ্গল) এবং জহুরুল ইসলাম (ঈগল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. রুকুনুজ্জামান (আম), তৃণমূল বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মো. মাসুম (সোনালী আঁশ)।
মাঠ পর্যায়ে ঘুরে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ আসনে প্রচারণায় নৌকা প্রতীকের সামছুল আলম দুদু, স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে এম রায়হান মন্ডল মনু (ট্রাক) ও আব্দুল আজিজ মোল্লা (কাঁচি) এগিয়ে থাকলেও অন্যান্য প্রার্থীদের প্রচারণা তেমন চোখে পড়ছে না। নৌকা মার্কায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য এ্যাড. সামছুল আলম দুদু। বিগত দুই বারের সংসদ সদস্য হিসেবে এলাকার অনেক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম তুলে ধরে প্রচারণা চালালেও সাম্প্রতিককালের কিছু অভিযোগে জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে তার।
স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক জেলা রেজিষ্ট্রার এ কে এম রায়হান মন্ডল মনু পাঁচবিবি উপজেলার আয়মারসুলপুর ইউনিয়নের দুই বারের সাবেক চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। সেই জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে এবার সংসদ সদস্য হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন তিনি এবং বিপুল সংখ্যক কর্মী সমর্থক নিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আর জয়পুরহাট পৌরসভার তিন বারের সাবেক সফল মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল আজিজ মোল্লা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নৌকার বিপক্ষে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন। নানা কারণে বাইরে অবস্থান করলেও গায়ে আওয়ামী লীগের গন্ধ থাকায় জেলা, উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের একটি বৃহৎ অংশ আব্দুল আজিজ মোল্লার পক্ষে মাঠ পর্যায়ে ভোটের প্রচার-প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে। ফলে জয়পুরহাট-১ আসনে মূলত ত্রিমুখী লড়াইয়ের কথা শোনা যাচ্ছে চায়ের দোকানগুলোতে সাধারণ ভোটারদের কৌতুহল ও আলোচনা-সমালোচনায়। ত্রিমুখী লড়াইয়ের কথা বলছেন জেলার রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহলও।
অপরদিকে, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সেক্রেটারী ও দোগাছী ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম ঈগল পাখি নিয়ে মাঠে প্রচারণা চালালেও এ ক্ষেত্রে নৌকা প্রার্থীর ক্ষতি হবে এমন আশংকার কথা জানান সাধারণ ভোটাররা।
এদিকে, জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে লাঙ্গল প্রতীকে ডা. এ কে এম মোয়াজ্জেম হোসেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও জাতীয় পার্টির সঙ্গে তার পূর্বে কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। ফলে চিকিৎসা পেশায় জনপ্রিয়তা থাকলেও জাতীয় পার্টিতে তাকে নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে তেমন আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়নি। প্রচারণায়ও তেমন কাউকে দেখা যাচ্ছে না।
বর্তমান সংসদ সদস্য এ্যাড. সামছুল আলম দুদুর পক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আরিফুর রহমান রকেটসহ কিছু নেতা প্রচারণায় অংশগ্রহণ করলেও অধিকাংশ নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী কাঁচি প্রতীকের সাবেক সভাপতি আব্দুল আজিজ মোল্লার পক্ষে কাজ করছেন বলে জানান আওলাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন।
প্রার্থীরা প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। যা আগামী বছরের ০৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত চলবে। ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ০৭ জানুয়ারি।
-এসআই/এমএ