রংপুর-৪: মুখোমুখি নৌকার টিপু মুনশি-লাঙ্গলের সেলিম
Published : Thursday, 7 December, 2023 at 4:15 PM Count : 223
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে এরই মধ্যে রংপুর-৪ আসনে জমে উঠেছে কথার লড়াই। এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর অভিযোগ, আওয়ামীলীগ মনোনিত প্রার্থী বাণিজ্যমন্ত্রী বাহিরের মানুষ। সেকারণে এখানে তার টান কম। তিনি সেভাবে উন্নয়ন করেন নি। তার সাথে দেখা করতে গেলে ১০ হাজার টাকা লাগে। তবুও সেটা অনিশ্চিত। এখানে ভোটের মাঠ জাতীয় পার্টির, ভোটের মাঠে তিনি জিরো। তাই এবার সুষ্ঠু ভোট হলে মানুষ স্থাণীয় প্রতিনিধি হিসেবে তাকেই বিপুল ভোটে বিজয়ী করবে।
অন্যদিকে একথার উত্তরে এই আসনের আওয়ামীলীগের প্রার্থী বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, উনি যে দল করেন সেই দলের প্রতিষ্ঠাতার বাড়ি কুচবিহার। এছাড়াও তিনি নিজেও সকাল সন্ধ্যা দল বদল করা মানুষ। একসময় যুবলীগে ছিলেন, এখন জাতীয় পার্টিতে গেছেন। যাদের প্রতিনিয়ত দল বদলায় তাদের জিনুইনিটি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। ৭০ বছর ধরে আমরা এখানে আছি। কি উন্নয়ন হয়েছে সেটা এলাকার জনগন জানে। জনগনই ৭ তারিখে প্রমান দিবে কে জিরো আর কে হিরো।
ভোটের তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিভিন্ন কর্মসূটি ও মিডিয়ায় সরব রংপুর-৪ (পীরগাছা-কাউনিয়া) আসনের জাতীয় পার্টি মনোনিত প্রার্থী মোস্তফা সেলিম বেঙ্গল।
বুধবার সন্ধ্যায় হারাগাছের খানসামা বাজারে গনসংযোগের মাঝে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘রংপুর-৪ সব সময় জাতীয় পার্টির সিট ছিল। ২০০৮ সালে জোট মহাজোটের খেলায় এই আসনটি আওয়ামীলীগের হস্তগত হয়। ২০১৪ তে কোন ভোটই হয় নি। বিনা ভোটে তারা এখানে জয়লাভ করে। ২০১৮ তে মধ্যরাতের ভোটে টিপু ভাই নির্বাচিত হন। তাই ভোটের রাজনীতিতে বা ভোটের খেলায় এখানে জাতীয় পার্টি সবসময় অবস্থান একদম শীর্ষে। কারণ রংপুর জাতীয় পার্টির ঘাটি। কাউনিয়া পীরগাছা জাতীয় পার্টির ঘাটি। বিশেষ করে এই অঞ্চলটি জাতীয় পার্টির মানুষ দ্বারা আবৃত।
সেলিম বেঙ্গল আরও বলেন, ‘সুতরাং এখানে ভোটের মাঠে আমাদের মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রী মহোদয় উনি একেবারেই জিরো। প্রথমত: উনি বাহিরের মানুষ। দ্বিতীয় এখানে নৌকার কোন ভোট নাই। তৃতীয়ত কাউনিয়া পীরগাছার মানুষ তার কাছে যে প্রত্যাশা ছিল তা থেকে তারা বঞ্ছিত হয়েছেন। কারণ তার সাথে দেখা করতে গেলে পকেটে ১০ হাজার টাকা নিতে হয়। তারপরে (ঢাকায় থাকার কারনে) সাক্ষাত পাওয়া যাবে কি যাবে না। সেটা একটা অনিশ্চিত। উন্নয়নের জন্য উনি কিছু করেন নাই। সাধারণ মানুষের কর্মকসংস্থানের জন্য কোন ব্যবস্থা করে নাই। নেশাগ্রস্ত মানুষকে ফিরিয়ে আনতে উনি কিছু করেন না। সর্বোপরি সর্বস্তরের জনগন দলমত নির্বিশেষে সবাই আমরা চাচ্ছি একবার স্থানীয় একজনকে প্রতিনিধিত্ব দিবো। যারা জনগনের পাশে থাকবে। উন্নয়ন কর্মকান্ডে অংশ গ্রহন করবে। বিশেষ করে যুবক সম্প্রদায়কে কর্মমুখর পরিবেশের মধ্যে দিয়ে তাদের ভবিষ্যত গড়ার জন্য সেই ব্যক্তিটি কাজ করবে। সেই প্রত্যাশা নিয়ে আমার আগমন। সবার সহযোগিতায় বিশেষ করে ইয়াং জেনারেশনের সহযোগিতায় এবার সরকার যদি সুষ্ঠু ভোট গ্রহন করে। তাহলে এই আসন থেকে বিপুল ভোটে লাঙ্গল নিয়ে আমি জয়ি হবো ইনশাআল্লাহ।’
বুধবার সন্ধ্যায় রংপুর মহানগরীর সেন্ট্রাল রোডের নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সাথে আলাপ করেন রংপুর-৪ আসনে আওয়ামীলীগের চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়া বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এসময় তার প্রতিদ্বন্দ্বি জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তফা সেলিম বেঙ্গলের এমন বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করা হয়। তখন বাণিজ্যমন্ত্রী হেসে দিয়ে বলেন, ‘উন্নয়ন কম হয়েছে এটা উনি বলতে পারেন। কিন্তু আসলে কি তাই, আমরা উন্নয়ন অনেক করেছি। এটা যারা এলাকার মানুষ তারা জানেন। আমি এখানকার বা বাহিরের মানুষের ডেফিনেশনটা জানিনা। আমরা সত্বর বছর ধরে এখানে আছি। উনি যে দলটা করেন। সে দলের যিনি সভাপতি যার নামে তার দল চলে এরশাদ সাহেব। তারা তো ভারত থেকে এখানে এসেছেন। তারাও তো এদেশের মানুষ নয়। তখন এই কথাটা যখন তারা বলে, তখন চিন্তা করা উচিৎ।
বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, ‘উনি যদি এভাবে কথা বলেন তাহলে তখন তাদের বলা উচিৎ, আমার দলের নেতাও এদেশি মানুষ না। উনিও এদেশি মানুষ না। তাহলে কথাটা যুক্তি পায়। এরশাদ সাহেবও তো ৪৭ এর পর এখানে এসেছেন।’
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘উনি (সেলিম বেঙ্গল) তো নিজেই স্থির না। উনি তো সকাল বিকাল চেঞ্জ হন। একসময় তিনি আমাদের দলে ছিলেন। তার বাবা একসময় আওয়ামীলীগের ক্যান্ডিডেট ছিলেন। উনি একসময় আমাদের যুবলীগে ছিলেন। পরে ওখানে (জাতীয় পার্টিতে) গেছেন। তাই যারা প্রতিনিয়ত দল বদলায় তাদের জিনুইনিটি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। তারা কি স্থির মানুষ। আমি ভালো হই মন্দ হই। I Should have one Ideology. সবার একটিই আইডোলোজি হওয়া উচিৎ। তারা যখন বার বার আইডেলোজি বদল ফেলে সেটা তো আর আমার দায় না। আমি কারো সমালোচনা করতে চাই। না। নির্বাচন এসেছে। জনগন যদি ভোট দেয়। আমি নির্বাচিত হবো। জনগন যদি তাকে ভোট দেয় জনগনের রায় মেনে নিবো। তখন বোঝা যাবে কে জিরো আর কে হিরো।’
এসময় তার সাথে ছিলেন পীরগাছা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন, রংপুর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রনি প্রমুখ। বৃহস্পতিবার তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিবেন।
এসআর