প্লাস্টিক বল দিয়ে তৈরি হচ্ছে নিরাপত্তা সামগ্রী
Published : Thursday, 7 December, 2023 at 3:53 PM Count : 222
উচ্চমূল্যের কারণে লাইফ জ্যাকেটের মত নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি ছাড়া নদীতে মাছ শিকারে গিয়ে প্রতি বছর প্রাণ হারাচ্ছেন ভোলার চরফ্যাশন এলাকার অনেক জেলে। এমন অবস্থায় নদীতে জাল ভাসিয়ে রাখার কাজে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বল দিয়ে তৈরি হচ্ছে লাইভ জ্যাকেট বা লাইফ বয়া।
ভোলার মেঘনা-তেতুলিয়া নদীতে মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত জেলেরা নিজেরাই এই জীবন রক্ষাকারী লাইফ বয়া তৈরি করছেন। আর তাদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সহযোগিতার আশা দিয়েছে উপজেলা মৎস্য অফিস।
মেঘনা-তেতুলিয়া ও বঙ্গোপসাগর বেষ্টিত দেশের সর্ব দক্ষিণের দ্বীপ জেলা ভোলা। এই জেলার প্রায় দুই লক্ষ মানুষ নদী ও সাগরের মাছ ধরে জীবন জীবিকা চালান। এই জেলার সর্ব দক্ষিণের উপজেলা চরফ্যাশন। এটি সমুদ্র উপকূলবর্তী হওয়ায় এখানকার জেলেদের কাছে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস নৃত্য সঙ্গী। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতি বছর পাল্টাচ্ছে ঝড়ের গতিবিধি। এ কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জেলেদের জানমালের ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই বেড়ে গেছে।
সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় মিধিলি'র প্রভাবে উপকূলীয় উপজেলা মনপুরার নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া একটি ট্রলার ডুবে মারা গেছেন ২০ জেলে। তাদের মরদেহ এখনো পাওয়া যায়নি। আর কখনোই তারা ফিরবেন কি না তাও জানে না তাদের পরিবার।
ওই ট্রলার থেকে বেঁচে ফেরা এক মাঝি জানান, নদীর মাঝখানে ঝড়ের কবলে পড়ে তাদের ট্রলার ডুবে যায়। মাছ, জাল, মানুষ সবই হারাতে হয়।
মেঘনা-তেতুলিয়ায় মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা জানান, নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের জীবন রক্ষাকারী জিনিসপত্র উচ্চমূল্যের হওয়ায় সব ট্রলারে লাইফ জ্যাকেটসহ নিরাপত্তা সামগ্রী থাকে না। তাই প্রতি বছরই বাড়ছে নদী সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের প্রাণহানির সংখ্যা। তবে জেলের মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে সম্প্রতি পানিতে জাল ভাসিয়ে রাখতে ব্যবহৃত বল দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে এক ধরনের লাইফ বয়া। যেখানে একটি লাইভ বয়া বা লাইফ জ্যাকেট ক্রয় করতে এক থেকে পাঁচ হাজার টাকা গুনতে হয় সেখানে এই ভাসমান বল দিয়ে তৈরি লাইভ বয়ায় খরচ হয় মাত্র চার থেকে পাঁচশ টাকা।
জেলেরা জানান, ১৫টি প্লাস্টিকের বল দিয়ে একটি লাইফ বয়া তৈরি করা যায়। এতে ঝড়-বাদলের সময় একটি লাইফ বয়ায় দুই থেকে তিন জন জেলে নদীতে অনায়াসে ভাসতে পারেন।
জেলেদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কম খরচে লাইট বয়া তৈরির প্রশিক্ষণ দেয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কারিতাস।
সংস্থার প্রোগ্রাম অফিসার বাবু অশোক কুমার রায় জানান, এখন জীবন রক্ষার তাগিদে জেলদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে এই লাইফ বয়া তৈরি কৌশল। এ যাবত আমরা ভোলার চরফ্যাশন ও মনপুরা উপকূলীয় এলাকায় মোট এক হাজার ৬৮ জন জেলেকে এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। সামনে আরও সাত হাজার জেলেকে এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা প্রদান করা হবে।
মনপুরা ক্ষুদ্র জেলা সমিতির সভাপতি নাসির মহাজন জানান, যদি প্লাস্টিকের বল দিয়ে তৈরি এই লাইফ বয়ার কৌশল দেশের সব জায়গায় ছড়িয়ে দেওযা যায়। তবে আগামী দিনগুলোতেই আগের মত নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের মৃত্যুর হার অনেকটা কমানো যাবে। জেলেদের শ্রমে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করেন ট্রলার মালিকরা। কিন্তু তারা তাদের (জেলে) জীবন ঝুঁকি কমাতে কোন উদ্যোগ নেন না।
এমন অবস্থায় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় লাইফ বয়া তৈরির কাজকে স্বাগত জানিয়েছেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার। তিনি জানান, জেলেদের এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে এর পরিধি কিভাবে আরও বাড়ানো যায়, যাতে করে জেলেরা উপকৃত হতে পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরিকল্পনা করছি।
-এসএফ/এমএ