দেশের লাইফলাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। এই মহাসড়কের মধ্যখানে প্রায় পুরোটাতে রয়েছে ডিভাইডার (সড়ক বিভাজন)। মহাসড়কের ৩১ কিলোমিটার ফেনী অংশে ডিভাইডারে চাষ করা হচ্ছে নানা জাতের শীতকালীন আগাম শাক-সবজি। এতে যেমন পতিত জায়গার সদ্ব্যবহার হচ্ছে, তেমনই মানুষ সামান্য খায় খাটুনি খেটে তরতাজা সবজি পাচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফেনী সদর উপজেলা অংশে মহাসড়কের ছনুয়া, লেমুয়া, ফরহাদ নগর, ফাজিলপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ৩১ কিলোমিটার এলাকায় এই শাক-সবজি চাষ করা হয়েছে। মহাসড়কের পাশে বসবাসরত সাধারণ কৃষক, ভূমিহীন কিছু মানুষ মহাসড়কে ডিভাইডার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে মরিচ, মুলা, পালং শাক, লাল শাক, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, শিম, ঢেরস, ধনেপাতাসহ শীতকালীন বিভিন্ন সবজির চাষাবাদ করছেন। দূর থেকে দেখলে মনে হয় পিচ ঢালা কালো মহাসড়কের মাঝে যেন লাল-সবুজের সমারোহ।
বিভিন্ন জাতের রং-বেরঙের এসব শাক-সবজি মহাসড়কের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। শাক-সবজি চাষ করে ওই কৃষকরা একদিকে যেমন তাদের সংসারের সবজির চাহিদা পূরণ করছেন অন্যদিকে সবজি বিক্রি করে বাড়তি রোজগারও করছেন।
তবে কিছু কিছু মানুষ মনে করছেন, সবজি চাষ করতে গিয়ে রাস্তা পারাপারে প্রাণহানির শংকাও রয়েছে।
তাদের এই উদ্যোগে খুশি উপজেলা কৃষি অফিসও। তারা বলছে, কৃষকদের তালিকা করে সবজির বীজ প্রদানসহ চাষের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
মহাসড়কের লেমুয়া এলাকায় শাক-সবজি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষকরা। তারা বলছেন, মহাসড়কের মাঝখানের ডিভাইডারের মাটিগুলো অত্যন্ত উর্বর। বৃষ্টির পানি জমে না বলে এখানে শাক-সবজি ভালো হয়।
মহাসড়কের পাশে কালিদহ ইউনিয়নের মাইজবাড়িয়া এলাকার কৃষক শেখ ফরিদ বলেন, 'সড়কের ডিভাইডারের কিছু জায়গায় শীতকালীন সবজি মুলা, পালং শাক, লাল শাক, মিষ্টি কুমড়া ও ধনেপাতার চাষ করেছি। এরই মধ্যে কিছু লাল শাক ও মুলা শাক বিক্রি করেছি। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাড়তিগুলো বাজারে বিক্রি করে সংসারের কিছু চাহিদা পূরণ করছি।'
ছনুয়া নেয়াজপুর এলাকার কৃষক আজিজুল হক বলেন, 'আমার শাক-সবজি চাষের জমি নেই, বাজারে শাক-সবজির অনেক দাম। বাজার থেকে কিনে খাওয়ার তৌফিক নেই। তাই রাস্তার মধ্যখানের জায়গায় শাক-সবজি লাগালাম। আশা করছি, আর বাজার থেকে কিনতে হবে না, বরং বিক্রি করতে পারব।'
একজন কৃষক বলেছেন, 'ডিভাইডারে বড় বড় গাছ লাগানো হয়েছে। সে গাছগুলো না লাগিয়ে যদি ঔষধি সাজিনা গাছ লাগানো হলে দুই দিকে উপকার হতো।'
ফাজিলপুর এলাকার জালাল আহম্মেদ লিটন বলেন, 'রাস্তার মাঝখানের অংশে জন্মানো ঘাস পরিষ্কার করে আমি সবজির আবাদ করেছি। এতে লাভ হওয়ায় বেশ আনন্দ লাগছে। এখানে রোদ-বৃষ্টি যা-ই হোক, ফসলের তেমন ক্ষতি হয় না। বৃষ্টি বেশি হলেও পানি জমে না। তবে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ পেলে সবজির ফলন আরও ভালো হবে।'
মহাসড়কের মাঝখানে লাল-সবুজের এই হাসি দেখতে অনেক চালক গাড়ি থামান। অনেকে আবার সবজি ক্রয় করে নিয়ে যান।
ফেনী সদর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবু তৈয়ব বলেন, ‘মহাসড়কের ডিভাইডারে দীর্ঘ অংশজুড়ে বিভিন্ন জাতের শাক-সবজির চাষ করছে কিছু উৎসাহী মানুষ। আমরা এরই মধ্যে এই কৃষকদের তালিকা তৈরি করার পরিকল্পনা করছি। আমরা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তাদের সবজির বীজ প্রদান করব এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব।’
-এটি/এমএ