For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

৩৬ বছর ধরে জিয়াউলের কাঁধে হাওয়াই মিঠাই

Published : Thursday, 12 October, 2023 at 5:29 PM Count : 245

হাওয়াই মিঠাই। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী একটি মিঠাইয়ের নাম। গ্রামের মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয়। তবে এখন আর আগের মতো এটি চোখে পড়ে না। এই মিঠাই নিমিষেই হাওয়ায় বিলিন হয়ে যায় বলে নাম ‘হাওয়াই মিঠাই’। বানানোর সঙ্গে সঙ্গে খেতে হয় এটি। পেট ভরে না এ মিঠাইয়ে, তবে খেতে মিষ্টি। মুখের স্বাদ মেটায় শুধু। দেখতে অনেক বড়সড় মনে হলেও নিমিষেই এটি মুখের ভেতর এসে গলে যায়। গ্রামের শিশুরা এই মিঠায়ে বেশি আনন্দ পায়। বড়রাও এর স্বাদ থেকে পিছিয়ে থাকেন না। দাম কম হওয়ায় সবার আগ্রহ থাকে এই মিঠাইয়ের প্রতি।

৩৬ বছরের বেশি সময় ধরে জিয়াউল হক হাওয়াই মিঠাই বিক্রিই করছেন। নিজ বাড়িতে তৈরি করেন গ্রমি বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ খাবার। লাভ অল্প হলেও গ্রামীণ ঐতিহ্যকে আঁকড়ে ধরে ক্ষুদ্র এ ব্যাবসাটি ধরে রেখেছেন তিনি। 

লাঠির মাথায় ঝুলানো স্বচ্ছ কাচের বাক্স কাঁধে আর হাতে ঘণ্টি নিয়ে সকাল হলেই বের হয়ে পড়েন তিনি। তার বাড়ি গাইবান্ধা সদর উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়নের দুলার ভিটা। 
সম্প্রতি গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরস্থ ফ্রেন্ডস এবিআরএস শিবরাম আদর্শ বিদ্যাপীঠের গেটের সামনে দেখা হয় জিয়াউল হকের সঙ্গে। তিনি জানালেন, অন্য পেশায় বেশি লাভজনক হলেও ছাড়ছে না মিঠাই বিক্রির কাজ। গ্রামীণ ঐতিহ্যকে আঁকড়ে ধরে এ কাজটি করে যাচ্ছেন তিনি। 

জিয়াউল হকের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, তার হাওয়াই মিঠাই তৈরির যন্ত্র। একটি কাঠের ফ্রেমের ওপর স্টিলের পাত দিয়ে তৈরি গোলাকার একটি পাত্রের একপাশে একটি সাইকেলের প্যাডেল আকৃতির হ্যান্ডেল। তার ওপর ভর করে ঘুরছে গোলাকার একটি চাকতি। স্থানীয় বাজার থেকে চিনি কিনে তার সঙ্গে কয়েক প্রকার রঙ মেশানো হয়। অল্প পরিমাণে জাফরান মিশিয়ে তৈরি হয় লাল আর হলুদ রঙের মিঠাই। আর সাদা চিনি দিয়ে তৈরি হয় সাদা রঙের মিঠাই। শুরুতে মেশিনের নিচে আগুন দিয়ে তাপ দেয়া হয়। এরপর ওপরের দিকে থাকা নির্দিষ্ট স্থানে চিনি ঢেলে দেয়া হয়। পরে হাত দিয়ে চাকতি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তৈরি করা হয় মিঠাই। এরপর সেগুলো পলিথিনের প্যাকেটে মুড়ে পাইপের সঙ্গে ঝুলিয়ে ফেরি করে বেড়ান কখনও শহরে, কখনও গ্রামে বিক্রি করেন।

জিয়াউল হক জানান, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ৪ সদস্যের সংসার তার। একমাত্র পেশা হাওয়াই মিঠাই বিক্রি। বাড়িতে ছোট একটি মেশিনে চিনি দিয়ে এই মিঠাই তৈরী করে থাকেন। এর পর সকাল হলে গ্রামাঞ্চলে হেঁটে চলেন মিঠাই বিক্রি করতে। এর খরচ বাদে দৈনন্দিন প্রায় ৩০০ টাকা লাভ থাকে। এ দিয়ে কোনরকম সংসার চালাচ্ছেন তিনি।   

জাহাঙ্গীর আলম নামের এক অভিভাবক জানান, তিনি আজো ভুলতে পারেন না ‘হাওয়াই মিঠাই’র স্বাদ। এখনো গ্রামে গ্রামে হাওয়াই মিঠাই বিক্রেতা আসলে তিনি তা কিনে শিশুদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মজা করে খান। 

তিনি বলেন, বাড়ির পাশে আজ হঠাৎ করে ঘণ্টির শব্দ শুনে বের হই। দেখা গেল অতীতের সেই চিরচেনা হাওয়াই মিঠাই। খুব ভালো লাগা থেকে সন্তানকে কিনে দিয়েছি।   
সাদুল্লাপুর বহুমুখী মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক খোরশেদ আলম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে জিয়াউল হক হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করে চলেছেন। আবহমান গ্রামবাংলার এই ঐতিহ্য শৈশবের মতোই জ্বলজ্বল করে বেঁচে থাকুক।

টিএইচজে/এসআর


« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,