রাজশাহী দুর্গাপুরে টানা বর্ষণে ধান, শবজিসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি পুকুরের পাড় প্লাবিত হয়ে মাছ চাষিদেরও ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া, জলবদ্ধতায় বেশকিছু পরিবার হয়েছেন পানিবন্দি।
এদিকে, উপজেলায় চুনিয়াপাড়া গ্রামের কৃষক মাহাবুর রহমান বৃষ্টির পানিতে ফসল নষ্ট হওয়ায় স্টক করে মারা গেছেন।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার দু’দিনের ভারী বৃষ্টিতে দুর্গাপুরে উপজেলায় বেশ ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে ভারী বর্ষণে সবজি চাষিদের ক্ষেতে পচন ধরায় মাথায় হাত পড়েছে। বৃষ্টির পানিতে খাল-বিল ডুবে গিয়ে আমন ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া শত-শত পুকুর ভেসে গিয়ে মাছ চাষিদেরও শত-শত কোটি টাকার মাছ বেরিয়ে গেছে।
দুর্গাপুর উপজেলার সিংগা গ্রামের আশরাফ আলী বলেন, অনেক কষ্ট করে দেড় বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেছিলাম। দুই দিনের বৃষ্টিতে পুরো ধান তলিয়ে গেছে। আমার মতো শত-শত কৃষকের ধান তলিয়ে গেছে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় পানি স্থির হয়ে রয়েছে। ফলে ধানক্ষেতে পচন ধরেছে।
রেপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল লতিফ বলেন, ১৫ কাঠা জমিতে কলা লাগিয়েছিলাম। ভারী বর্ষণে কলা বাগানে হাটু পানি জমে গেছে। গাছগুলো লাল হতে শুরু করেছে। যদি দু’একদিনের মধ্যে পানি না নামে তাহলে সব গাছ মরে যাবে।
উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামের মাসুম, মনতাজ, নবীসহ অন্তত ২০ জন চাষির বাঁধাকপি ও ফুলকপির ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। চাষি আনিছুর রহমান জানান, তিনি ঋণ করে দেড় বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছিলেন। ক্ষেতে সবেমাত্র ফুল আসতে শুরু করেছিল। এর মধ্যেই বৃষ্টিতে তার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেলো।
একই গ্রামের মাহাবুর রহমান ঋণ করে প্রায় তিন বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছিলেন। এমন ভারী বর্ষণে তার জমিতেও পানি ওঠে যায়। বৃহস্পতিবার জমিতে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখে বাড়ি ফেরার পথে স্টক করে মারা যান। এ উপজেলায় অন্তত কয়েক কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
ভারী বর্ষণে বিশেষ করে বেশ ক্ষতি হয়েছে উপজেলার নওপাড়া, মাড়িয়া, কিসমত গণকৈড়, দেলূয়াবাড়ী, পানানগর,ঝালুকা ও জয়নগরসহ সকল ইউনিয়ন এলাকায়। ওইসব এলাকায় ফসল তলিয়ে যাওয়াসহ শত-শত পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। বেশ কয়েটি কাঁচা ঘরের দেয়াল ঢসে পড়েছে। গতকাল শনিবার পর্যন্ত বেশকিছু এলাকার রাস্তা-ঘাট ডুবে রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
উপজেলার সিংগা গ্রামের মৎস্যচাষি তছলেম উদ্দিন জানান, ভারী বর্ষণের ফলে তার ৮০ বিভাগর মতো পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে তার কয়েক কোটি টাকার মাছ বেরিয়ে গেছে।
উপজেলা মৎস্য বিভাগ হতে জানা গেছে, পুরো উপজেলায় পুকুরের সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রায় ১ হাজারেও বেশি পুকুর তলিয়ে যায়। এসব পুকুরে বিভিন্ন জাতের বড়-ছোট মিলিয়ে শত কোটি টাকার মাছ বেরিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম বলেন, প্রায় কয়েক বছর ধরে এ অঞ্চলে তেমন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পানিয়ে অভাবে মৎস্য ব্যাহত হচ্ছিলো। তবে এবার ভারি বৃষ্টি হয়েছে। এতে তাদের লাভ হয়েছে। তবে বেশকিছু পুকুর প্লাবিত হয়ে মাছ চাষিদের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, দু’দিনের বৃষ্টিতে ফসলের বেশ ক্ষেতি হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা তাদের ক্ষয়-ক্ষতি নিরুপণের কাজ করছেন। রিপোর্ট হাতে পেলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
আরএইচএফ/এসআর