For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

রাজশাহীতে ১০ বছরে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত, থইথই পথঘাট

Published : Thursday, 5 October, 2023 at 6:47 PM Count : 270



রাজশাহীতে এক দিনের বৃষ্টিপাতে ১০ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। গত বুধবার বেলা ১টা থেকে বৃহস্পতিবার বেলা ১টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২৫৫ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

এদিকে, মুষলধারে টানা বৃষ্টিতে থই থই করছে মহানগরী পথ-ঘাট। মহানগরীর নিচু এলাকাগুলো তো বটেই, উঁচু এলাকাতেও সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। এতে বিপাকে পড়েছেন মহানগরবাসী। আর এ জন্য অপরিকল্পিত নগরায়ণকে দুষছেন তারা।
বুধবার দিবাগত রাত ১টা থেকে বৃষ্টি শুরু হয়ে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত থামেনি। শুধু তাই নয়, বৃষ্টি থামার কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মহানগরীর সব সড়কে হাঁটুসমান পানি জমেছে। বৃষ্টির পানিতে মহানগরীর লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রাকে) হাসপাতাল এলাকা, ঘোষপাড়া, সাহেববাজার, গণকপাড়া, কাদিরগঞ্জ, বর্ণালী মোড়, উপ-শহর, টিকাপাড়াসহ সব এলাকায় পানি জমে গেছে। জমে থাকা পানির পরিমাণ কোথাও হাঁটুসমান আবার কোথাও কোমরসমান। শহরের টিকাপাড়াসহ কয়েটি এলাকায় সড়কের ওপর দিয়ে নৌকা চলাচল করতেও দেখা গেছে।

নৌকায় করে স্থানীয়দের পার করা একজন স্বেচ্ছাসেবী বলেন, একটি কোচিং সেন্টার ও স্থানীয়দের সহায়তায় নৌকায় পারাপারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এজন্য কারও কাছ থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছে না।

সড়কে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে অনেকে জাল দিয়ে মাছ ধরতে শুরু করেছেন। তবে বেকায়দায় পড়েছেন তারা, যাদের বাড়িতে এমনকি ঘরেও পানি ঢুকে পড়েছে।

বর্ণালির মোড়ের একটি মেসে থাকেন শহিদুল ইলাম। তিনি বলেন, কাল রাত থেকেই ঘরে পানি উঠেছে। এখানে আমাদের চাল, ডাল সব ভিজে গেছে। ঘরে এখনো পানি আছে। এসব পানি অনেক নোংরা।

শহরের বাইরের গ্রামাঞ্চলে বৃষ্টির কারণে পুকুর উপড়ে পানি চলে যাচ্ছে বিলে। এতে ভেসে যাচ্ছে পুকুরের মাছ। এছাড়া মাঠে মাঠে কৃষকের শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।

স্থানীয় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার দুপুর ১টা থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২৫৫ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে বেশি বৃষ্টি হয়েছে বুধবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত। সকাল থেকে বৃষ্টি একটু কমলেও পুরোপুরি থামেনি। বিকেল পর্যন্ত এভাবে বৃষ্টি চলছিলই। আরও বৃষ্টি হতে পারে।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম জানান, তাঁরা ২০১৩ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের তথ্য আলাদা করে সংরক্ষণ করেছেন। সেই তালিকার তথ্য অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, এবারের বৃষ্টিপাতই সর্বোচ্চ।

হিসাব বলছে, ২০১৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৯৯ মিলিমিটার, ২০১৪ সালের ২৭ মে একদিনে সর্বোচ্চ ৯৮ দশমিক ৩ মিলিমিটার, ২০১৫ সালের ২৬ জুন ১০০ মিলিমিটার, ২০১৬ সালের ৩ এপ্রিল ১০২ মিলিমিটার, ২০১৭ সালের ১৩ জুলাই ১০৭ দশমিক ২ মিলিমিটার, ২০১৮ সালের ১ মে ৬৮ দশমিক ৮ মিলিমিটার, ২০১৯ সালের ২৬ অক্টোবর ৭৮ মিলিমিটার, ২০২০ সালের ২১ মে ৮১ মিলিমিটার ও ২০২১ সালের ২১ জুলাই ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১১১ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল।

রাজশাহীর পবা উপজেলার দুয়ারি এলাকার মাছচাষি আনিসুর রহমান জানান, বৃষ্টির পানিতে রাতেই তার তিনটি বড় বড় পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। সকালে পুকুরে গিয়ে তিনি যখন এ দৃশ্য দেখেন, তখন আর কিছু করার ছিল না। এতে তার অন্তত ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন।

মহানগরীর তেরোখাদিয়া উত্তরপাড়া এলাকায় বাস করেন শহিদুল ইসলাম। তার ঘরের ভেতরেও বৃষ্টির পানি ঢুকে পড়েছে। তিনি বলেন, রাস্তাঘাট, বাড়ির আঙিনা সবই ডুবে গেছে। পানি ঢুকে পড়েছে শোয়ার ঘরেও। রান্নাবান্না বন্ধ হয়ে গেছে। পানি কবে নামবে তা বুঝতে পারছি না। শহরের নিম্নাঞ্চলগুলোর অসংখ্য পরিবার এ রকম দুর্ভোগে পড়েছেন।

মহানগরীর সপুরা এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ জামাল বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে শহরে এমন জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এ দায় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের।

তিনি বলেন, শহরে প্রচুর টাকা খরচ করে নতুন নতুন ড্রেন করা হচ্ছে। কিন্তু সেই ড্রেন যদি পানি নিষ্কাশন করতে না পারে, তাহলে জনগণের টাকা খরচের দরকার কী!

এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) প্রধান প্রকৌশলী নূর ইসলাম তুষার বলেন, শহরে জলাবদ্ধতার বেশ কয়েকটি কারণ দেখা যাচ্ছে। শহরের পুকুর ও ডোবাগুলো ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। সেখানে বড় বড় দালান উঠছে। এতে বৃষ্টির পানি আর সেসব পুকুর-ডোবায় যেতে পারছে না।

তিনি আরও বলেন, আগে পদ্মা নদীতে শহরের পানি নেমে যেত। কিন্তু নদী দূষণ হবে বলে সেসব ড্রেনও বন্ধ করা আছে। আবার বারনই নদীতে পানি যে ড্রেন দিয়ে পাঠানো হয়, সেই ড্রেনেও পাট জাগ দেওয়া হয়েছে। ফলে পানি নামার জায়গা পাচ্ছে না। রাস্তাঘাটে নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখার কারণেও পানি নামার প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। এসব কারণেই এভাবে পানি জমে গেছে। এসব সমস্যার সমাধানে এবার কাজ শুরু করা হবে।

প্রকৌশলী নূর ইসলাম জানান, শহরের বর্জ্য পানি পদ্মা নদীতে পাঠানো হবে। তবে তা পরিশোধন করেই। এ জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করার ব্যাপারেও তারা সজাগ থাকবেন। বড় বড় কিছু ড্রেনও নির্মাণ করা হবে।

এসব কাজ করা গেলে শহরে আর পানি জমবে না বলেই মনে করছেন নগর সংস্থার ওই প্রকৌশলী।

আরএইচএফ/এসআর

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,