শরতের কাঁশফুলে সেজেছে ববি
Published : Tuesday, 3 October, 2023 at 6:17 PM Count : 1008
কাঁশফুলের অপরুপ শুভ্রতায় সেজেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি)। ক্যাম্পাস জুড়ে কাঁশফুলের মিছিল আর নীলাকাশের নীলাভ রুপ দেখতে অনেকেই ছুটে যান নগরের যান্ত্রিকতা ছেড়ে। ভাদ্র পেরিয়ে আশ্বিনের এমন অপরূপ রূপ মাধুর্যতা প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে ধরা দেয় ভিন্ন নন্দনে।
জানা যায়, বরিশাল বিভাগে বৃহৎ আয়তনের এলাকা জুড়ে কাঁশফুল জন্মে একমাত্র বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।
কীর্তনখোলা নদীর কোলে পটুয়াখালী-বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের পাশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাস জুড়ে মাথা উঁচু করে মৃদু বাতাসের মিতালীতে শুভ্র সাদা কাঁশফুলের দোল খাওয়া প্রকৃতি শুধুই মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে। প্রকৃতির নিয়মেই যেন তৈরী হয়েছে কাঁশফুলের বাগান। আর এই নজরকাড়া কাঁশফুলের স্নিগ্ধতা হাতছানি দিচ্ছে প্রকৃতি প্রেমীদের। অপরূপ এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে ক্যাম্পাসটিতে ভিড় বাড়ছে স্থানীয়সহ আশপাশের জেলাগুলোর মানুষের।
সরেজমিনে দেখা যায়, সবুজ চিরল পাতার ডগায় শুভ্রতার শ্লোগান শরতের কাঁশবন জুড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা ক্লাশ শেষে প্রকৃতির রাজ্যে ভালোবাসার রঙ মাখানো সাদা কাঁশফুলের সঙ্গে মিশে যায়। এছাড়াও এমন সৌন্দর্য উপভোগ করতে সর্বদাই ক্যাম্পাসে ভিড় জমাচ্ছেন বরিশাল মহানগরীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। কেউবা স্বপরিবারে ঘুরতে এসেছেন আবার কেউ এসেছেন প্রিয়জনের সঙ্গে সোনালী শরতের মিষ্টি গন্ধের স্বাদ নিতে। নগর জীবনের ব্যস্ততাকে পাশ কাটিয়ে ক্যাম্পাসটিতে আসা দর্শণার্থীরা সবাই শরৎ প্রেমে নিজেকে মেলে ধরেছেন শুভ্রতার কাঁশফুলে। কাঁশফুলের শুভ্রতায় শিশুরাও ছুটে বেড়ায় মনের আনন্দে। শুভ্রতার চাদর মোড়ানো তুলার মেঘেদের এই রৌদ্র ছায়ার মিছিলে মহানগরীর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের নৃত্যশিল্পীদের নৃত্যের তালের অপরূপ এই বিভায় ঋতুরাণী শরৎ নিজেকে তুলেছে আপন মহিমায়। স্মৃতি হিসেবে ক্যামেরাবন্দী করতেও ভুল হয়না কারো।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী সামসুন্নাহার সাথী ডেইলি অবজারভারকে বলেন, 'ক্যাম্পাস জুড়ে কাঁশফুলের সমাহার যেন এক শুভ্রতারই রাজ্য।'
সরকারি বিএম কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী কামরুন্নাহার টুপুর বলেন, 'আমাদের দেশটা এতো সুন্দর, প্রত্যেকটি ঋতুর আলাদা একটা বৈশিষ্ট আছে। কাশফুলগুলো বাতাসে যখন দোলা দেয় সেটার অন্যরকম সৌন্দর্য দেখলেই মনটা জুড়িয়ে যায়।'
একই কলেজের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মালিহা রহমান বলেন, 'গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি, সাদা মেঘের ভেলা এবং শরতের বিকেল সবকিছু মিলিয়ে অনবদ্য এক প্রকৃতির ছোঁয়া বিদ্যমান।'
বরিশাল মহানগরীর বৌদ্ধ পাড়া এলাকার বাসিন্দা জাফরিন দিনা বলেন, 'কাঁশফুল দেখতে খুবই সুন্দর লাগতেছে। নগরীর ব্যস্ত কোলাহলের মধ্যে এগুলো দেখা যায়না। তাই প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পরিবার পরিজন নিয়ে এখানে ঘুরতে আসা।'
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক মো. উজ্জ্বল হোসেন ডেইলি অবজারভারকে বলেন, 'কাঁশফুল মূলত বহুবর্ষজীবী, চিরল ও ধারালো পাতা বিশিষ্ট ছন গোত্রীয় ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ। এরা উচ্চতায় সাধারণত ১ থেকে ৩ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এশিয়া, আফ্রিকা ও অষ্ট্রেলিয়া মহাদেশীয় অঞ্চলে এর আদিবাস। নদী তীর, চরাঞ্চল, খড়া প্রবণ ও পাহাড় সংলগ্ন এলাকায় বীজ এবং রাইজোমের মাধ্যমে বংশবিস্তার হয়ে কাঁশবন বেড়ে ওঠে। গ্রামীণ এলাকায় ঘরের ছাউনি, পানের বরজের ছাউনি ও জ্বালানী হিসেবে এর ব্যবহার রয়েছে। বর্তমানে পরীক্ষামূলক ভাবে নদীভাঙন রোধে, জৈব প্রযুক্তির ক্ষেত্রে, বিভিন্ন শিল্প হতে নির্গত ভারী পদার্থজনিত দূষণ হ্রাসে এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়াও আয়ুর্বেদীয় শাস্ত্র, বিভিন্ন উপজাতি ও আদিবাসীদের মধ্যে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় এটি ব্যবহারের প্রচলন আছে।
-এমএ