কাঁশফুলের শ্বেত-শুভ্রতা শুধু রাজশাহীর গ্রামঞ্চালের নয়; সৌন্দর্যের মূর্ছনা রাজশাহী মহানগরীতেও। শরতের সাক্ষীরূপে সেজেছে প্রকৃতি। ফুটেছে কাঁশফুল। সেই সৌন্দর্য উপভোগে মেতেছে ভ্রমণ পিপাসুরা।
মহানগরীর পদ্মার চরসহ বেশকিছু জায়গায় শ্বেত-শুভ্র কাশবনের মায়াবী সৌন্দর্য ধরা দিয়েছে। কাঁশবনের দোতানায় অপার সৌন্দর্যের হাতছানিতে মেতেছে ভ্রমণ-পিপাসুর উদ্বেলিত মন। বিশেষ করে মহানগরীর মেহেরচন্ডী এলাকায় দৃষ্টিনন্দন ওভার ব্রিজ ও পার্শ্ববর্তী বাগানগুলোতে ফুটে থাকা কাঁশফুল সৌন্দর্যের ভিন্ন মাত্রা এনেছে।
ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ওভার ব্রিজ ঘুরতে এসে কাঁশফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছেন দর্শণার্থীরা। ফেসবুকের ওয়ালে কাঁশফুলের রঙে নতুন স্মৃতির সংযুক্তিতে মেতেছিলো অনেক তরুণ-তরুণী।
তাদের একজন সাবিহা সুলতানা। তিনিসহ তার দুই বান্ধবী এখানে ঘুরতে এসেছিলেন। সাবিহা বলেন, প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার ছুটির দিনে বান্ধবীদের সঙ্গে ঘোরার পরিকল্পনা থাকে। এরই ধারাবাহিকতাতেই ওভার ব্রিজে ঘুরতে আসা। এই এলাকার পুরো পরিবর্তন হয়ে গেছে। সঙ্গে শরতের কাঁশফুল ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। অন্য সবাই ছবি তুলছিল। দৃশ্যটা খুবই ভালো লাগছিলো। তাই নিজেরাও ছবি তুললাম। সবাই মিলে অনেক মজা করলাম।
এদিকে, মহানগরীর পাশঘেঁষে বয়ে চলা প্রমত্তা পদ্মা এখন ভরা যৌবনায়। এর মধ্যে পদ্মা পাড়জুড়ে বেশকিছু জায়গাজুড়ে কাঁশবন তৈরি হয়েছে। এছাড়া নদীর মাঝে অর্ধডুবন্ত কাঁশবনে ফুটতে থাকা কচি ফুল দর্শনার্থীদের মনজুড়ে মধুর আবহ রচনা করছে।
পদ্মা গাডের্ন, টি-বাঁধ, আই-বাঁধ এলাকাঘুরে দেখা যায়, নদীপাড়জুড়ে বিনোদন প্রেমীদের উপচে পড়া ভিড়। ভ্রমণপিপাসু মানুষদের গল্প-আড্ডার অন্যতম অনুষঙ্গ শরৎ ও কাঁশফুল। এছাড়া কাঁশবনের সৌন্দর্য কাছ থেকে উপভোগ করতে অনেকে নৌকাযোগে চরেও যাচ্ছেন। কেউ কেউ অর্ধ-ডুবন্ত কাঁশবনের কাছে নৌকাযোগে গিয়ে ফটোসেশনও করছে।
টি-বাঁধ এলাকায় কথা হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী তানিয়া তাবাসসুমের সঙ্গে। তিনি জানান, ছুটির দিন, ঘুরতে এসেছি। আর শরতে পদ্মাপাড়সহ পুরো পদ্মার ভিন্ন মায়াবী রূপ ধরা দেয়। এমন সৌন্দর্য উপভোগ মনে ভিন্ন মাত্রার আনন্দ দেয়।
এছাড়া, মহানগরীর পঞ্চবটি এলাকা থেকে টি-বাঁধ পর্যন্ত নৌকা ভ্রমণের সঙ্গে শুভ্র কাঁশফুলের ছোঁয়া নিতে অনেক ভ্রমণপিপাসুই এখানেই আসছেন। মুক্তমঞ্চ ও সীমান্ত নোঙরের পাশে খুব সহজেই কাঁশফুলের সঙ্গে মিশে যাওয়ার সুযোগ মিলছে।
শুধু সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে হারিয়েই যাচ্ছেন না, স্মৃতির পাতায় প্রিয়জনের সঙ্গে ফ্রেমবন্দিও করতে দেখা যাচ্ছে। পরিবার নিয়ে পদ্মা পাড়ে ঘুরতে এসেছিলেন মতিউর-মালিহা দম্পতি। ছোট্ট ফুটফুটে বাচ্চার সঙ্গে কাঁশফুলের সৌন্দর্য উপভোগে মেতেছিলেন তারাও।
তারা জানান, মতিউর একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করেন। খুব একটা ছুটি পান না। শুক্রবারে দুপুর ৩টার দিকে বাসা থেকে তারা ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছেন। পদ্মার পাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন। নৌকায় ভ্রমণ করেছেন। এখন পদ্মায় পানি বেশি। তাই কিছুটা ভয় করছিল। তবে ঘুরতে খুবই ভালো লেগেছে তাদের। তাদের ছোট্ট মেয়ের হাতে বেলুনের সঙ্গে কাঁশফুলও দেখা যায়।
রাজশাহী নিউ গভর্মেন্ট ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী সাদমান সৌমিক জানান, মাঝে মাঝেই পদ্মার পাড়ে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে ঘুরতে আসেন তিনি। সাদমান বলেন, পদ্মার পাড়ের বাতাস, বাতাসে কাঁশফুলের ঢেউ, বিকেলে প্রকৃতির ভিন্ন এক রূপ। এগুলো নিমিষেই মন ভালো করে দেয়। বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে কাশবনের মাঝে ছবি তুলেছি। সবাই মিলে অনেক আনন্দ করেছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের স্মৃতির ওয়ালেও তা ধরে রেখেছি।
পদ্মার পাড় ঘুরে ঘুরে বাদাম বিক্রি করেন রাসেল আহমেদ। তিনি জানান, সারা বছর মহানগরীর বিনোদন স্পটগুলোতে বাদাম বিক্রি করেন। পদ্মার মাঝে কাঁশফুল ফুটলে দর্শণার্থীদের সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি থাকে। এখন বিকেলের চিত্র দেখলে মনে হবে হয়তো কোনো উৎসব চলছে। এ কারণে তার বেচা বিক্রিও ভালো।
-এফএ/এমএ