দিনাজপুরে অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষজন। অনেক এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গ্রাম এলাকায় ভেঙ্গে পড়েছে কাঁচা বাড়ি ঘর। যেকোনো সময় নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।
অপরদিকে, বৃষ্টিতে মাছ ধরতে গিয়ে চিরিরবন্দরে বজ্রপাতে একজন নিহত ও দু'জন আহত হয়েছেন।
দিনাজপুর আবহাওয়া অফিস সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ১৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে।
এদিকে অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ অপরদিকে আগাম জাতের রবি শস্যের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশংকা করছেন চাষিরা।
গত বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) থেকে দিনাজপুরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তবে শনিবার থেকে শুরু হয়েছে টানা বৃষ্টি। বৃষ্টিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। শহরেও সৃষ্টি হয়েছে জল জট। দিনমজুররা কাজে যেতে পারেনি।
শহরের উপশহর, শেখপুরা, মিস্ত্রিপাড়া, পুলহাট, মাঝিপাড়া, দপ্তরি পাড়া, জগেন বাবুর মাঠসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ জল জটে পড়েছেন। অনেকের বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। স্কুল কলেজগুলো অঘোষিত ভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। বৃষ্টির কারণে শিক্ষার্থীরা স্কুল কলেজে যেতে পারেনি। অফিস আদালতে উপস্থিতি কিছুটা কম।
উপশহর মিস্ত্রিপাড়া গ্রামের লিটন হোসেন আকাশ। টিন দিয়ে নতুন বাড়ি করেছেন। তার বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। হাঁটু পানিতে ভাসছে হাড়ী পাতিল।
উপশহরস্থ দিনাজপুর ডায়াবেটিক ও স্বাস্থ্য সেবা হাসপাতাল, জিয়া হার্ট ফাউন্ডেশন এন্ড রিচার্স সেন্টার, তৈয়বা বেগম রক্তদান কেন্দ্রসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান চত্তরে পানি ঢুকে পড়েছে।
দিনাজপুর ডায়াবেটিক ও স্বাস্থ্য সেবা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা আবুল কালাম আজাদ জানান, তিনি প্রচন্ড বৃষ্টি মধ্যেও বাধ্য হয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে এসেছেন। কিন্তু হাসপাতালের প্রবেশ মুখে হাঁটু পানি। কিছুটা হলেও বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।
দিনাজপুর ষ্টেশন রোর্ডে চা-বিস্কুটের দোকান করেন শহরের দপ্তরি পাড়ার বাসিন্দা জুযেল ইসলাম। তিনি জানান, আজ তিন দিন হয় দোকান বসাতে পারছিনা বৃষ্টির কারণে। আমরা ফুটপাতে দোকান করে খাই। দোকান দিতে না পারায় ছোট পুঁজি ভেঙ্গে খাচ্ছি। কয়েকদিন বৃষ্টি চললে অনাহারে থাকতে হবে।
টানা বর্ষণে কাঁচা বাড়ি ভেঙ্গে পড়েছে বিরল উপজেলার রবিপুর গ্রামের দীপচন রায়ের। তিনি বর্তমানে পরিবার নিয়ে প্রতিবেশীর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
এদিকে, চিরিরবন্দর উপজেলার আমতলী শাহাপুর গ্রামের মকলেছুর রহমানের ছেলে রশিদুল ইসলাম বাবু (৩০) বাড়ির পাশে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন।
নিহতের মামা সদর উপজেলার পাঁচবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আলতাফ হোসেন জানান, বেলা ১২টার দিকে বাড়ির সামনে বৃষ্টির পানিতে মাছ ধরতে যায় রশিদুল ইসলাম বাবু। হঠাৎ বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়।
আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় ২৩ মিলিমিটার, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় ৪৮ মিলিমিটার এবং শনিবার সকাল ৬টা থেকে রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৫৯ মিলিমিটার বৃর্ষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে রোববার সকাল থেকে অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ১৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ২৬ তারিখ পর্যন্ত এই বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সিদ্দিকুর জামান নয়ন জানান, ১৯টি নদীর মধ্যে আত্রাই নদী পানি বিপদসীমার ১.৫৩ মিলিমিটার, পুনর্ভবা নদীর পানি বিপদসীমার ০.৪৬ মিলিমিটার, ছোট যমুনা নদী পানি বিপদসীমার ০.৯৫ মিলিমিটার এবং টাংগন নদীর পানি বিপদসীমার ১.৯৯ মিলিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি জানান, দিনাজপুর জেলায় গত ২৪ ঘন্টায় ২৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যা সারাদেশে সর্বোচ্চ। দিনাজপুরের নদীগুলোর পানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেকোনো সময় নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করার আশংকা রয়েছে।
-এএইচ/এমএ