রাজশাহীর পুঠিয়ায় মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে সরকারি খাস পুকুর ব্যক্তি মালিকানায় বন্দোবস্ত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে।
ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা খাদেমুল ইসলাম, কম্পিউটার অপারেটর সজিব ও বাপ্পি নামের কয়েকজন জালিয়াতির ঘটনায় জড়িত বলে জানা গেছে। এ খবর শুনে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি খতিয়ানের খাস পুকুর বন্দোবস্তে জেলা প্রশাসকের অনুমোদন না নিয়ে জালিয়াতি করে ভুয়া হোল্ডিং খুলে খাজনা আদায় করেছে নায়েব খাদেমুল। তিনি চলতি বছরের গত ২৮ আগস্ট খাস পুকুরের ভুয়া হোল্ডিং খুলে অনুমোদন করিয়ে দিয়েছেন।
শিলমাড়িয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ১১১ নং পচামাড়িয়া মৌজার ৩৮৫/১ নং জমাবন্দিতে সরকারি খাস পুকুরের তালিকাভুক্ত ২৩৪ দাগে ৩২ শতক, ৫৯৮ দাগে ১৮ শতক, ৩১৩ দাগে ৫৫ শতক ৩২৪ দাগে ২৮ শতক জমি ব্যাক্তি মালিকানায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনলাইনে ভুয়া হোল্ডিং অনুমোদন করে খাজনার চেক প্রদান করেন। এছাড়াও এই খাজনার আদায় বইতে ভুয়া একটি খারিজ কেস নাম্বার ব্যবহার করা হয়। যার কেস নং ৮৯৮/৯-১/৮৯-৯০। প্রকৃতপক্ষে খারিজ নাম্বারটি একই হোল্ডিং এ আছে, যা অন্য ব্যক্তির নামে।
সরবরাহকৃত যে দাখিলা নং দেওয়া হয়েছে ৮১৮২২৩০৪৩৫৩৩- ২৮/৮/২০২৩ ইং তারিখে। পরে কাগজটি পাকাপোক্ত করতে গত ৩ সেপ্টেম্বর একই হোল্ডিংএ বাংলা ১৪৩১-১৪৩৩ সাল পর্যন্ত অগ্রীম খাজনা নেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, ৭১ নং সোবনপাড়া মৌজার ৪২ নং খতিয়ান এর ১৮১ দাগে ৩৮ শতক হোল্ডিং নম্বর ৪১ মূল পাতায় যে জমির হিসাব ছিল সে পাতাটি ছিঁড়ে নতুনভাবে হোল্ডিং খুলে বিপক্ষে খাজনা আদায় করছেন নায়েব খাদেমুল।
ভুক্তভোগী রশিদ বলেন, নায়েব খাদেমুল পুরাতন হোল্ডিং বইয়ের পাতা ছিঁড়ে বইতে নতুন হোল্ডিং পাতা লাগিয়ে আমার কেস নম্বর দিয়ে বিপক্ষের লোকের কাছ থেকে খাজনা আদায় করেছে। আমি অশিক্ষিত নিরীহ মানুষ, ৩/৪ বছর ধরে প্রতিকার পাওয়ার আশায় অফিসের বারান্দায় ঘুরছি।
এছাড়াও নায়েব খাদেমুল শিলমাড়িয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে একটানা প্রায় ৫ বছর যাবত কর্মরত আছেন। তিনি কম্পিউটার অপারেটিংয়ের কোনো কাজ জানেন না। তবে তার পছন্দের কম্পিউটার অপারেটর সজিবকে পাশে বসিয়ে জমিসংক্রান্ত সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মনগড়া সিদ্ধান্ত চাপিয়ে অবৈধভাবে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, খাজনা পরিশোধ, নামজারি-জমাভাগ কাজের জন্য জমির মালিকদের কাছ থেকে একেক সময় একেক কথা বলে অযথা হয়রানি ও ঘুষ বাণিজ্যের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে খাদেমুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। ওই অফিসে ঘুষ না দিলে ধানী, পুকুর, বাড়ির জমিতে সরকারি নিয়ম বহির্ভূতভাবে খাজনা আদায় করে থাকেন। তাদের দাবিকৃত ঘুষের টাকা দিলে মওকুফ করে খাজনা আদায় করা হয়।
এছাড়াও ভূমি অফিসের সকল জমির মালিকদের আইডি পাসওয়ার্ড খুলে খাজনা আদায়ের নিয়ম থাকলেও সেই নিয়মে কোন কাজ হয় না। সব দালালদের নামে আইডি পাসওয়ার্ড খুলে খাজনা আদায় করা হয়।
এর আগে শিলমাড়িয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা খাদেমুল ও বহিরাগত দালালদের ঘুষ বাণিজ্যের সংবাদ প্রকাশিত হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে। পরে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নির্দেশে দালালদের বিতাড়িত করা হয়। কিন্তু বিতাড়িত দালালরা কিছুদিন গা ঢাঁকা দিয়ে থাকলেও আবারও তারা ফিরে আসে ভূমি অফিসে।
এ বিষয়ে জানতে শিলমাড়িয়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা খাদেমুল ইসলামের মোবাইলফোনে বেশ কয়েকবার যোগযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
পুঠিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ বসাক বলেন, সরকারি খাস জমি ব্যক্তি মালিকানায় খাজনা নেওয়ার সুযোগ নাই। যদি এমনটি হয়ে থাকে তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এ কে এম নুর হোসেন নির্ঝর মুঠোফোনে বলেন, রেকর্ডে যদি খাস পুকুর থাকে ব্যক্তি মালিকানায় দেওয়ার সুযোগ নেই। যদি এমনটি হয়ে থাকে তাহলে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরএইচএফ/এসআর