নদীবেষ্টিত গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ও সদর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন দূর্গম চরাঞ্চল ও অনগ্রসর এলাকা। এখানকার স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীর উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে শহরে গিয়ে লেখাপড়া করার মতো সামর্থ নেই। তাই প্রাথমিক বা নিম্ম মাধ্যমিক স্তরেই শিক্ষা জীবনের ইতি টানতে হয়। তাই ওইসব ইউনিয়নের মধ্যস্থ কামারজানি নামকস্থানে একটি স্কুল এন্ড কলেজ স্থাপনের দাবি চরাঞ্চলবাসীর।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানী, মোল্লারচর, গিদারী,মালিবাড়ী ও সুন্দরগঞ্জের কাপাসিয়া, শ্রীপুর এই ছয়টি ইউনিয়ন অতিমাত্রায় বন্যা ও নদী ভাঙন এলাকা। এই ছয়টি ইউনিয়নে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের কলেজ না থাকায় সমাজে যাদের স্বচ্ছলতা আছে তাদের ছেলে-মেয়েরা শহরে গিয়ে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারছে এবং স্বল্প আয়ের দিনমজুরে পরিবারের ছেলে-মেয়েরা শহরে বা দূর-দূরান্তে ব্যয়বহুল খরচে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারছে না।
এই দুর্গম চরাঞ্চল ও অনগ্রসর ছয়টি ইউনিয়নে জনসংখ্যা প্রায় লক্ষাধিক হলেও উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ স্থাপনে কোন সামাজিক উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে এখানকার জনগোষ্ঠীর প্রজন্ম প্রাথমিক, নিন্ম মাধ্যমিক বা মাধ্যমিক স্তরেই শিক্ষা জীবনের সমাপনী ঘটে। ফলে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি না করতে পেরে ছেলে-মেয়েরা বাল্যবির দিকে ঝুঁকে পড়ছে।
ওই এলাকার আব্দুল লতিফ মিয়া নামের এক অভিভাক বলেন কামারজানীতে একটি স্কুল এন্ড কলেজ হলে উচ্চ শিক্ষার হার বাড়বে এবং সীমিত আয়ের পরিবার তাদের ছেলে-মেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারবে।
এলাকার বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সামাজিক উন্নয়ন পদক্ষেপ (এস,ইউ,পি) প্রস্তাবিক স্কুল এন্ড কলেজ স্থাপনের আবেদন শিক্ষা বোর্ডে দাখিল করেছে। সেটি একাডেমিক স্বীকৃতি দিয়ে এমপিওভুক্ত করা হলে হয়তো আমাদের সন্তানেরা উচ্চ শিক্ষার আলো দেখবে।
স্থানীয় অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক অমূল্য চন্দ্র সাহা বলেন, মোল্লারচর, কাপাসিয়া, শ্রীপুর, গিদারী ও মালিবাড়ী পাঁচটি ইউনিয়নের মধ্যস্থল কামারজানী এবং এসব ইউনিয়নের সাথে কামারজানীর যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় এখানে একটি উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন হলে সীমিত আয়ের মানুষ তাদের ছেলে-মেয়েদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারবে।
মোল্লারচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান সরকার বলেন, আমাদের ইউনিয়নের বেশিরভাগ মানুষ কামারজানী বাজার কেন্দ্রিক এবং নৌকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো রয়েছে। ফলে কামারজানীতে স্কুল এন্ড কলেজ স্থাপন হলে চরাঞ্চলের জনগোষ্ঠীর উচ্চ শিক্ষার হার বাড়বে। তাই একটি স্কুল এন্ড কলেজ স্থাপনের জন্য স্থানীয় এনজিও সামাজিক উন্নয়ন পদক্ষেপ (এস,ইউ,পি) নির্বাহীকে অনুরোধ করেছি।
কামারজানী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান জানান, কামারজানীতে একটি স্কুল এন্ড কলেজ স্থাপনের জন্য আমরা স্থানীয় এনজিও'র নির্বাহীকে বলেছি এবং সার্বিক ভাবে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মহোদয়ের নিকট অনুরোধ রাখছি দূর্গম চরাঞ্চল ও অনগ্রসর এলাকা হিসাবে সংস্থা পরিচালিত স্কুল এন্ড কলেজের আবেদন মঞ্জুর করবেন।
এ ব্যাপারে সামাজিক উন্নয়ন পদক্ষেপের (এস,ইউ,পি) নির্বাহী পরিচালক এম সাদ্দাম হোসেন পবন বলেন, দূর্গম চরাঞ্চল ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্য একটি স্কুল এন্ড কলেজ স্থাপনের আবেদন সংশ্লিষ্ট বোর্ডে পাঠিয়েছি। মানবিক দৃষ্টিতে শিক্ষা বোর্ড, দিনাজপুর কতৃপক্ষ স্থাপন আবেদন মঞ্জুর করলে আমরা যত দ্রুত সম্ভব অবকাঠামো করে পাঠদানের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে পারবো।
টিএইচ/এমবি