For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

পানগুছি নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে হাজার হাজার বাড়ি ঘর

দীর্ঘ ৫০ বছরেও দেখা মেলেনি বেড়িবাঁধের

Published : Tuesday, 29 August, 2023 at 1:59 PM Count : 122

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপকূলীয় উপজেলা পানগুছি নদীর ভাঙনে দিন দিন বদলে যাচ্ছে মানচিত্র । প্রতিদিন ভাঙছে নতুন নতুন এলাকা। বসতবাড়িসহ বহু প্রতিষ্ঠান ও রাস্তা-ঘাট চলে গেছে নদীগর্ভে। 

গত ৫০ বছরে পানগুছি নদীর আয়তন তিনগুণ বেড়েছে। এখন নদীটির প্রশস্ত এক কিলোমিটারের বেশি। সাড়ে ৩ লাখ লোকের বসতি এখানে। পৌরশহরের প্রাণকেন্দ্র ১নং ওয়ার্ডের ফেরিঘাটসংলগ্ন বারইখালী এলাকায় জোয়ারের সময় এসব পরিবারের সদস্যরা রান্না-খাওয়া ভুলে যুদ্ধ করে পানির সঙ্গে। 

একটানা পাইলিং না থাকার কারণে বারইখালী, ফেরিঘাট এলাকা, কুঠিবাড়ি, লঞ্চঘাট এলাকা, সানকিভাঙ্গা, সোলমবাড়িয়া নদীর তীরবর্তী এলাকার কমপক্ষে পাঁচ হাজার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করছে।

পৌরসভা মেয়র এসএম মনিরুল হক তালুকদার বলেন, পানগুছি নদীর ভাঙনে মূল শহরের চার ভাগের একভাগ এখন অবশিষ্ট আছে। শত শত বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্থাপনা ও সদর বাজারের বেশিরভাগ নদীগর্ভে চলে গেছে। তবে শীঘ্রই পানগুছি নদীর পশ্চিম পাড় থেকে মূল শহরের ভাঙন সুরক্ষাকাজ শুরু হবে। দেশ স্বাধীনের আগে থেকেই এই নদীর তীরে বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে, যার পোল্ডার নং ৩৫/২। কিন্তু দীর্ঘ ৫০ বছরেও সেই স্বপ্নের বেড়িবাঁধের দেখা মেলেনি। বিভিন্ন সময় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী আন্দোলন, মানববন্ধন করেছেন। মন্ত্রী, এমপি ও পাউবোর কর্মকর্তারা পরিদর্শনও করেছেন বহুবার। বেড়িবাঁধের দাবিতে ডিও লেটার দিয়েছেন এমপি কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।সরজমিন দেখা যায়, পানগুছি নদী-তীরবর্তী গ্রামের শত শত বিঘা ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে। 
গত ৪০ বছরে শুধু উপজেলা সদর থেকে নদীগর্ভে চলে গেছে, খাদ্যগুদাম, সাবরেজিস্ট্রি অফিস, টেলিফোন অফিস, আব্দুল আজিজ মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, এসিলাহা উচ্চ বিদ্যালয়ের মূল ভবন, ডাকবাংলো, বারইখালী ইউনিয়ন পরিষদ, পুলিশ কোয়ার্টার, আনছার ময়দান, বারইখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পোস্ট অফিস, স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের অফিস, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, থানা জামে মসজিদ, সার্বজনীন হরিসভা মন্দির, শ্মশান ঘাটসহ বহু প্রতিষ্ঠান ও রাস্তা-ঘাট। 

বর্তমানে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে- গাবতলা, কাঁঠালতলা, বারইখালী, ফেরিঘাট, কুমারখালী, সন্যাসী, শ্রেণিখালী, ঘষিয়াখালী, সোনাখালী, ফুলহাতাসহ ২০টি গ্রাম কমিউনিটি ক্লিনিকটি পরিত্যক্ত হয়েছে। বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, কাঁচা-পাকা রাস্তা। অনেক পরিবার ভাঙনের কবলে বাড়িঘর হারিয়ে শহরমুখী কিংবা অন্যত্র বসবাস করছে। কমিউনিটি ক্লিনিকটিও ভাঙনের মুখে। আতঙ্কে রয়েছে নদী-তীরবর্তী ৩০টি পরিবার। গাবতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার, মসজিদ, খাউলিয়া ও গাবতলা ব্রিজ এখন হুমকির মুখে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সিডর, আইলা, ইয়াসের পর কোনো ভেঙে যাওয়া বাঁধ স্থায়ীভাবে রক্ষার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. মোজাম্মেল হোসেন ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। ওই সময় তিনি গাবতলা হতে পশুরবুনিয়া অভিমুখে আড়াই কিলোমিটার বেড়িবাঁধের জন্য ডিও লেটার দেন। চলতি বছরের মে মাসে স্থানীয় সংসদ সদস্য এডভোকেট আমিরুল আলম মিলন ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। ওই সময় তিনি মোরেলগঞ্জ উপজেলার বারইখালী, বহরবুনিয়া, বলইবুনিয়া ও পঞ্চকরণ ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তী এলাকা পরিদর্শনকালে তিনি বলেন, আগামী ২ মাসের মধ্যে নদী শাসন কার্যক্রম শুরু হবে। রাস্তা-ঘাট পুনঃনির্মাণ করা হবে। সন্যাসী থেকে ঘষিয়াখালী পর্যন্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে। পরিদর্শনকালে নদীর তীরবর্তী হাজার হাজার নারী পুরুষ সংসদ সদস্য এডভোকেট আমিরুল আলম মিলনকে স্লোগান দেয়। 

এলাকাবাসী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে ত্রাণ চাই না, চাই টেকসই বেড়িবাঁধ’। 

এ সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড বাগেরহাটের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মাহামুদুন্নবী, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান, উপজেলা যুবলীগ যুগ্ম আহ্বায়ক এডভোকেট তাজিনুর রহমান পলাশ, পৌর যুবলীগ আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান বিপুসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও তার সফরসঙ্গীরা ছিলেন। 

ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মাহমুদ আলী বলেন, কয়েকশ’ পরিবার তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে ছিন্নমূলে পরিণত হয়েছেন। ধসে গেছে ৫০ একর জমি। পৌর শহর রক্ষার্থে এ পর্যন্ত মাত্র এক কিলোমিটার পায়লিং হয়েছে। খরস্রোতা পানগুছির ভাঙন থেকে মোরেলগঞ্জ পৌর শহরসহ ২০টি গ্রাম রক্ষা করতে প্রয়োজন টেকসই বেড়িবাঁধ। দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে চলছে শুধু পরিদর্শন ও চিঠি চালাচালি। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। 

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড় বাগেরহাট জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুম বিল্লাহ বলেন, নতুন টেন্ডার হয়েছে, ঠিকাদারও পাওয়া গেছে। মোরেলগঞ্জ পৌর এলাকার নদীর তীর প্রতিরক্ষার কাজ বর্ষা মৌসুম শেষ হলেই পুরোদমে শুরু হবে।

তবে, ৯৫ কিলোমিটার স্থায়ী বেড়িবাঁধের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রোপোজাল পাঠানো হয়েছে।


এসএমএস/এমবি


« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,