ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে তিন থেকে চারতলা ডজনখানেক বিলাসবহুল লঞ্চ নিয়মিত চলাচল করে। এসব লঞ্চে লিফট, এয়ারকন্ডিশন, টিভি, ফ্রিজসহ নানা বিলাসী পণ্য ও সেবা রয়েছে। চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জায় মুগ্ধ হতে হয় যাত্রীদের। তবে লঞ্চে জীবন রক্ষার উপকরণ ও সেবা নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন তুলেছেন যাত্রীরা।
উচ্চ ভাড়ার এসব লঞ্চে বয়া, লাইফ জ্যাকেট, যাত্রীদের নিরাপত্তা এবং অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা হতাশাজনক। সুগন্ধা নদীতে লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন এ রুটের যাত্রীরা।
ঢাকার একটি বেসরকারি ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার তোহারুল খান বলেন, ‘সুগন্ধা নদীতে একটি লঞ্চ দুর্ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে ভয়াবহতা। আমি প্রতি মাসে লঞ্চে দুবার ঢাকা যাই। কোন কোন লঞ্চে কেবিনের সামনে বয়া দেখি, আবার অনেক লঞ্চে দেখি না। অগ্নিনির্বাপণের কোন ব্যবস্থা চোখে পড়েনি।’
রুবিনা ইসলাম নামে এক শিক্ষিকা বলেন, ‘মালিকরা ভাড়া দিন দিন বাড়াচ্ছেন, সেবা বাড়ছে না। বিলাসবহুল লঞ্চের ওপরে ফিটফাট, কিন্তু আসল বিষয়ে খেয়াল নেই। জীবন রক্ষায় ফাঁকি আছে।’
জহিরুল ইসলাম নামে এক গার্মেন্টস ব্যবসায়ী বলেন, ‘লঞ্চের কোন কেবিনে লাইফ জ্যাকেট নেই। বয়া আছে কেবিনের সামনে, তাও এক সিরিয়ালে থাকা ১৫-২০টি কেবিনের জন্য দু-তিনটি।’
পারাবত-৯ লঞ্চের সুপারভাইজার বাবুল হোসেন বলেন, ‘একটি লঞ্চে যে পরিমাণ নিরাপত্তা থাকা দরকার, তা সব আছে। তবে একটু-আধটু সমস্যা সব লঞ্চেই থাকে। নিরাপত্তার বিষয়ে যদি কোথাও কোন ভুল থেকে থাকে তা মালিককে বলে শিগগিরই সমাধান করা হবে।’
কুয়াকাটা-২ লঞ্চের ম্যানেজার নাসির উদ্দিন বলেন, ‘নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমরা সরকার নির্ধারিত সব ব্যবস্থা রেখেছি। কিন্তু প্রকৃতির ওপর তো আল্লাহ ছাড়া কারও হুকুম চলে না। আমরা চেষ্টা করছি যাত্রীদের নিরাপত্তা দেয়ার। বাকিটা আল্লাহ ভরসা।’
বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা বলেন, ‘যাত্রী সেবার নামে যেভাবে অর্থ আদায় হয়, তার সমপরিমাণ সেবা পাওয়া যায় না। লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে গা-ছাড়া ভাব দূর করে আরও সচেতন হতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনা ঘটার সবচেয়ে বড় কারণ হলো ইঞ্জিন রুমের পাশে চা আর ভাতের দোকান। সেখানে সব সময় আগুন জ্বলতে থাকে। কিছু কিছু লঞ্চে তো লাকড়ি দিয়ে রান্না করা হয়, যা গ্যাসের চেয়েও ভয়াবহ। আমারা চাই লঞ্চ কর্তৃপক্ষ সচেতন হোক।’
বরিশাল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক বেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা সব সময় চেষ্টা করছি লঞ্চগুলো যেন নিরাপদ থাকে। লঞ্চে কর্মরতদের বিনামূল্যে বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ দিয়েছি। প্রয়োজনে আবারও দেব। শিগগিরই সব লঞ্চ আবারও ভিজিট করে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হবে।’
-এমএ