For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

হাসপাতালেই করোনা সংক্রমণ, ঝুঁকিতে সাধারণ রোগীরা

Published : Sunday, 27 June, 2021 at 7:51 PM Count : 536

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে সাধারণ রোগীরা

নাবিলের বয়স দশ মাস। গত ১০ দিন ধরে সইছে অসুস্থতার যন্ত্রণা। ঘুমের সময় বাদ দিলে মায়ের কোলেও স্থির থাকতে পারছে না সে। ছোট্ট এই মানুষটার চোখেমুখে তার অব্যক্ত শারীরিক যন্ত্রণার স্পষ্ট ইঙ্গিত।

পরিবারের সদস্যরা জানালেন, অবুঝ শিশুটির বাজে সময়ের শুরু গত ১৬ জুন থেকে। সেদিন ঘুমের ঘোরে নাবিল খাট থেকে মেঝেতে পড়ে যায়। গুরুতর আঘাত পায় মাথায়। নিয়ে যাওয় হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে। সেখানে ভর্তি করা হয়। পরদিন হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসক মাহফুজ রায়হান মাথার সিটি স্ক্যান করার পরার্মশ দেন। সিটি স্ক্যানে ধরা পড়ে আঘাতে রক্ত জমাট বেঁধেছে শিশুটির মাথায়।

বাবা লিয়াকত আলী ওই চিকিৎসকের বরাত দিয়ে জানান, রিপোর্ট দেখে দ্রুত অপারেশনের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। বলা হয় যেভাবেই হোক অপারেশন করে জমাট রক্ত অপসারণ করতে হবে।
 
সেদিনই রামেক হাসপাতালে নিউরো সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয় নাবিলকে। শুরু হয় চিকিৎসা। এর একদিন পর ওই বিভাগের চিকিৎসক উপসর্গ থেকে শিশুটির নমুনা পরীক্ষার নির্দেশ দেন। গত সোমবার রামেক হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ হয় শিশুটির।
নাবিলের মা লতিফা বেগম জানান, করোনা পরীক্ষায় পজিটিভ হওয়ায় অপারেশনে আর রাজি হন না চিকিৎসকরা। তারা সাফ জানিয়ে দেন, অবস্থা যতই খারাপ হোক না কেন, ১৪ দিনের আগে অপারেশন করা হবে না। আগে নেগেটিভ আসুক, তারপর।

মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশু নাবিলকে রিলিজ করে দেয়। আর সেকারণেই মাথার চিকিৎসা ছাড়াই শিশুটিকে ফিরতে হয় নিজ বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের হরিপুরের সাহাপাড়া গ্রামে।

শনিবার সন্ধ্যায় কথা হয় নাবিলের মায়ের সাথে। তিনি জানান, জন্মের পর থেকে নাবিল যেরকম হাশিখুশি ছিল, তেমনটি নেই। মাঝে মধ্যেই কিছুটা অস্বাভাবিক আচরণ করছে। গায়ে কিছুটা জ্বর আছে। চোখ হলদেটে হয়ে গেছে। চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক চলছে।

তিনি বলেন, একটা শিশু কতটা কষ্টা পায় সেটা একমাত্র মা’ই অনুভব করতে পারে, অন্যরা পারে না। আমার ছেলের তো করোনা ছিল না। হাসপাতালে গিয়ে যে তার করোনা হলো এর জন্য কাকে দোষারোপ করব?

এদিকে পরিস্থিতি বিবেচনায় রামেক হাসপাতালে ধাপে ধাপে বাড়ানো হচ্ছে করোনা ওয়ার্ড। বর্তমানে ১২টি ওয়ার্ড, ১৫টি কেবিন ও ২০টি আইসিইউ বেডে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা চলছে। শনিবার রাত পর্যন্ত ৩৫৭ সিটের বিপরীতে চিকিৎসাধীন রোগী ৪৩১ জন। উত্তরাঞ্চলের এই বৃহৎ হাসপাতালটিতে বাড়-বাড়ন্ত করোনাকালে একদিকে কোভিড রোগীর চাপ অন্যদিকে একই ছাদের নিচে ননকোভিড রোগীদের চিকিৎসা চলছে। এতেই গত ১৬ দিনে নাবিলের মত অন্যান্য রোগে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩৪৯ জন। অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন ২২ জন। গত বুধবার রেকর্ড সংখ্যক ৪২ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, আমাদের দুই ধরনের রোগী দেখতে হচ্ছে। একারণেই এতো সংখ্যক মানুষ প্রতিদিন হাসপাতালে এসে করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সাধারণ রোগী এড়িয়ে চলা সম্ভব নয়। হাত-পা ভাঙা, হার্টের রোগী, কিডনি ডায়ালাইসিস, প্রসূতিকালীন রোগী, সিজারিয়ান অপারেশন এগুলোর জন্য জনসাধারণ আসবেই। তাদেরকে ফিরিয়ে দিলে তো তারও মৃত্যুবরণ করবে।

উন্নয়নকর্মী সুব্রত কুমার পাল বলেন, রামেক হাসপাতালের পরিচালক বা কর্তৃপক্ষ যেটা করছে সেটা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। কারণ সীমিত সার্মথ্য দিয়ে সাধ্যমত প্রাণান্তকর চেষ্টা করছে কোভিড রোগীদের সেবা শুশ্রুষা দেয়ার। কিন্তু এটাও বাস্তবতা যে লোকটা কোভিড নন সেই লোকটা ভয়ংকর করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। এবং সেটা খুবই ঝুঁকির।

তিনি জানান, এমন পরিস্থিতির জন্য দায়ী স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তারা এবং স্থানীয় প্রশাসন। কারণ করোনার প্রকোপ গত দুই বছর ধরে চললেও করোনার জন্য একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছেন তারা।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, খোদ হাসপাতালে অনেকেই এখন করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরও ঘুরে বেড়াচ্ছেন৷ তারা আইসোলেশনে বা চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন না বা নিজেরাও বুঝতে পারছেন না যে তারা আক্রান্ত৷ শুধু তাই নয়, হাসপাতালে করোনা রোগীদের সাথে থাকা স্বজন, আয়া ও ওয়ার্ড বয়দের স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতাও ছড়াচ্ছে করোনা।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, একই ছাদের নিচে করোনা ও অন্যান্য রোগের চিকিৎসায়, করোনা সকলকে সংক্রমিত করবে সেটাই স্বাভাবিক।

হাসপাতালটির পরিচালক বলেন, যেসব আয়া বা চিকিৎসাকর্মী মাস্ক পরা বা স্বাস্থ্যবিধি মানতে অনীহা দেখাবে তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। বিদেশের হাসপাতালগুলোর মত আমাদের এতো লোক নেই সকল রোগীকে আমরা দেখব। সঙ্গত কারণেই রোগীর পাশে স্বজনদের থাকার অনুমতি দিতে হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি রোগীর স্বজনরা যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের শুরু থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ৫৬৭ জন রোগী হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মারা গেছেন। চলতি জুন মাসে রেকর্ড সংখ্যক ২৮৭ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। চলতি বছরের শুরু থেকে শুক্রবার পর্যন্ত করোনা ও উপসর্গে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩ হাজার ২৩৯ জন। এরমধ্যে চলতি মাসে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ১১ জন। চলতি বছরে ছাড়পত্র অর্থাৎ সুস্থ্ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ হাজার ২ জন।

-আরএইচ/এনএন

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,