গ্রামীণ রাস্তাগুলোর বেহাল দশা
Published : Friday, 25 June, 2021 at 12:36 PM Count : 656
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা একডালা ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের গ্রামীণ রাস্তাগুলোর বেহাল দশা। উপজেলার শেষ সীমানায় অবস্থিত এই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যে এখনো শহরের সুযোগ-সুবিধা জোটেনি।
দেশ স্বাধীনের পর থেকে এই অঞ্চলের গ্রামীণ জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোতে এখনো মাটির পরিবর্তে ইটের ছোঁয়াও স্পর্শ করেনি। যে কারণে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাকা থমকে আছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, একডালা ইউনিয়নের ঘাটাগন ব্রিজ থেকে গুলিয়া পর্যন্ত প্রায় ৫শত ফুট, পার্শ্ববর্তী বগুড়ার আদমদীঘি ইউনিয়নের চাঁপাপুর কালিগঞ্জ রাস্তার জিসি থেকে দীঘিরপাড় হয়ে গুচ্ছগ্রামের গুলিয়াব্রিজ পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার ও উপর তালিমপুর কাঁঠালতলী থেকে নিচতালিমপুর পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার মাটির রাস্তায় দেশ স্বাধীনের পর থেকে এখন পর্যন্ত ইটের ছোঁয়া স্পর্শ করেনি।
যে কারণে ঘাটাগন, গুলিয়া, চাঁপাপুর, কালিগঞ্জ, দীঘিরপাড়, উপর তালিমপুর, নিচতালিমপুরসহ শতাধিক গ্রামের হাজার হাজার মানুষকে বর্ষা মৌসুমে হাটু কাঁদার মধ্যে দিয়ে চলাচল করতে হয়। গ্রামীণ এই রাস্তাগুলোর বেহাল দশা হওয়ার কারণে বিশেষ করে কৃষি প্রধান এই অঞ্চলের কৃষকরা বছরের পর বছর কৃষিপণ্যের নায্য দাম থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন।
অপরদিকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে গ্রামীণ জনপদের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন করার কোন বিকল্প নেই। বর্তমান উন্নয়নের সরকার ক্ষমতায় আসার একযুগ পার হলেও গ্রামীণ এসব জনপদে আধুনিকতার কোন ছোঁয়াই স্পর্শ করেনি।
স্থানীয়রা মনে করছেন, গ্রামীণ জনপদের উন্নয়নের জন্য সরকার প্রতি বছর স্থানীয় সরকার বরাবর লাখ লাখ টাকার যে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে আসছে সেই বরাদ্দগুলো শুধুমাত্র কাগজে নামকাওয়াস্তে দেখিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের সীমাহীন লুটপাটের কারণে এই উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবে রূপ পাচ্ছে না। যার খেসারত দিতে হচ্ছে গ্রামীণ জনপদের হাজার হাজার সুবিধাবঞ্চিত বাসিন্দাদের। একডালা ইউনিয়নের শুধুমাত্র এই তিনটি গ্রামীণ রাস্তাই নয় অধিকাংশ গ্রামের রাস্তাগুলোর বেহাল দশা। শুষ্ক মৌসুমে কোন মতে চলাচল করা গেলেও বর্ষা মৌসুমে এই মাটির গ্রামীণ রাস্তাগুলো এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের গলার কাটায় পরিণত হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা রুহুল আমীন বলেন, সরকারের দেওয়া অর্থ স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারদের লুটপাটের কারণে দেশ স্বাধীনের পরও এই ইউনিয়নের গ্রামীণ জনপদের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এখন পর্যন্ত মাটির জায়গায় ইট সোলিং এর ছোঁয়াও স্পর্শ করেনি। আমরা তো মনে করি উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নের গ্রামীণ রাস্তাগুলোতে আধুনিকতার ছোঁয়া স্পর্শ করলেও অবহেলিত একডালা ইউনিয়নের প্রায় সকল গ্রামের মাটির রাস্তায় এখন পর্যন্ত একটি ইটও বসানো হয়নি। আমরা বিশেষ করে এই অঞ্চলের কৃষকরা এই রাস্তাগুলোর কারণে অনেক পিছিয়ে রয়েছি।
একডালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল ইসলাম বলেন, প্রতি বছর সরকারের কাছ থেকে যে পরিমাণ বরাদ্দ পেয়ে থাকি তা দিয়ে এসব রাস্তার কাজ করার চেষ্টা করে আসছি। চাহিদার চেয়ে বরাদ্দ অনেক কম হওয়ার কারণে সকল গ্রামীণ রাস্তাগুলোর সংস্কার করা সম্ভব হয়ে উঠছে না। এই তিনটি রাস্তার চাহিদা ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ এলেই আগামীতে এই মাটির রাস্তাগুলোর পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে গ্রামীণ জনপদের উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই। প্রতি বছর সংস্কার কাজের জন্য যে বরাদ্দ পাওয়া যায় তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। তবুও গ্রামীণ জনপদের জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোর তালিকা করে ঊর্ধ্বতন বিভাগে পাঠিয়েছি। বরাদ্দ এলেই জরুরী ভিত্তিতে তালিকায় থাকা গ্রামীণ রাস্তাগুলোর সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।
-এমএ