করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশনায় সারাদেশের পর্যটন কেন্দ্রের মত মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক ও বীর শ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতি সৌধে পর্যটকের প্রবেশ ও ঘোরাঘুরি নিষেধ ছিল।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ফটক বন্ধ থাকায় ভেতরে প্রবেশ করতে না পারলেও বৃষ্টি উপেক্ষা করে জাতীয় উদ্যানের ভেতরের কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল সড়কধারে আর মাধবপুর চা-বাগানের লেকসহ বিভিন্ন চা-বাগানের লেক ও চা প্লান্টেশন এলাকায় পর্যটকদের উপচেপড়া ভির ছিল।
শুক্রবার বিকেলে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এলাকা ঘুরে দেখা যায়, উদ্যানের প্রধান ফটক তালাবদ্ধ থাকায় ও নিরাপত্তাকর্মীদের সতর্কতায় কোন পর্যটক ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। তবে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটকরা উদ্যানের বাইরে কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল সড়কের পাহাড়ি এলাকায় ঘোরাঘুরি করে ছবি তোলেন ও আড্ডা দেন।
আবার দেখা গেছে, বেশ কয়েকটি পিকআপে মাইক লাগিয়ে নাচ, গান করতে দেখা যায় কম বয়সী পর্যটকদের। এসব পর্যটকরা আবার পরবর্তীতে মাধবপুর লেকে গিয়ে ভির করেন।
আগত পর্যটকরা মানেন নি কোন স্বাস্থ্যবিধি ও কোন বাঁধা। ফলে মাধবপুর লেক এলাকায় শুক্রবার ঈদের দিন দুপুরের পর থেকে আসা পর্যটকদের ছিল অবাধে দল বেধে প্রবেশ আর ঘোরাঘুরি।
একই অবস্থা ছিল ধলই চা-বাগানের বীর শ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতি সৌধ এলাকায়ও।
এছাড়া, চা এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে পদ্মছড়া চা বাগান, শমশেরনগর চা বাগানের লেক, শমশেরনগর চা বাগান গল্ফ মাঠ, ফুলবাড়ি চা বাগানসহ এলাকার বিভিন্ন চা বাগানের পাহাড়ি উঁচু নিচু প্লান্টেশন এলাকায় সব বয়সী পর্যটকদের ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়।
মাধবপুর চা বাগান লেক এলাকায় গেলে দেখা যায়, লেকে যাবার আগে দুটি স্থানে চা বাগানের ফটক রয়েছে। ফটকে পর্যটকদের ব্যবহৃত যানবাহন আটকানোর চেষ্টা করলেও পর্যটকরা বিশেষ করে কম বয়সীরা কোন বাঁধা মানছেন না। মাধবপুর চা -বাগান কারখানা থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার ভেতরে তিন দিকের উঁচু পাহাড়ি টিলা বেষ্টিত লেকে পর্যটকরা দল বেধে যাতায়াত করছেন।
লেক এলাকায় চা গাছ আচ্ছাদিত টিলায় পর্যটকরা উঠে ছবি তুলছেন। উপর থেকে আবার নিচের লেকের সৌন্দর্য ক্যামেরাবন্দিও করছেন। এ সময় স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি কাউকে। প্রায় ৯০ শতাংশ পর্যটকের মুখে ছিল না মাস্ক।
চা বাগান সূত্রে জানা যায়, সকালের দিকে একবার পুলিশ এসে লেকে আসা কম বয়সী উশৃঙ্খল পর্যটকদের তাড়িয়ে দিলেও পুলিশ চলে যাওয়ার পর দুপুরের পর আবার কম বয়সী পর্যটকদের উপস্থিতি বেড়ে যায়। মাধবপুর চা বাগান কর্তৃপক্ষে উপচেপড়া পর্যটকদের কাছে অনেকটা অসহায় বোধ করছেন। নারী-পুরুষ ও শিশু পর্যটকরা ঈদের ছুটির আনন্দ উপভোগ করতে ছিলেন ব্যস্ত। করোনা সংক্রমণকালে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে এভাবে অবাধে চলাচল করছে তারা। তাছাড়া তারা যে কত ঝুঁকির মাঝে আছেন তা জেনেও কোন প্রকার বিধি নিষেধ মানছেন না।
ঘুরতে আসা পর্যটক সুভন, সুজন, রিজভী, তুহিন, আতেফ, ইমনসহ কয়েকজন জানান, ‘দীর্ঘদিন তারা কাজে ব্যস্ত ছিলেন, আবার স্কুল কলেজও বন্ধ ছিল, তাই ঈদের ছুটি পেয়ে এ চা বাগান এলাকাগুলো ঘুড়ে দেখার জন্য এসেছেন।’
স্বাস্থ্যবিধির কথা জানতে চাইলে তারা জানায়, ‘অনেক বিধি নিষেধ মেনেছি তো একদিনের জন্য কিছু হবে না।’
মিজান হোসেন নামে আরও একজন পর্যটক জানান, ‘দীর্ঘদিন তারা সন্তানদের নিয়ে অনেকটা গৃহবন্দি ছিলেন। ঈদের ছুটিতে সন্তানদের অনুরোধে বাধ্য হয়ে মাধবপুর লেকে বেড়াতে এসেছেন।’
মাধবপুর লেকের গেটে থাকা পাহারাদার লক্ষী নারায়ণ জানান, ‘এ সময়ে লেকে প্রবেশ নিষেধ বলে আগত পর্যটকদের প্রবেশে বাঁধা দিয়ে তিনি একা তাদের আটকাতে পারছেন না।’
স্থানীয় মাধবপুর ইউপি চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু জানান, ‘তিনি কমলগঞ্জ থানার ওসিকে অনুরোধ করে কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে এনেছিলেন মাধবপুর লেক এলাকায়। পুলিশ সদস্য থাকাকালীন কোন পর্যটক ভেতরে বা বাইরে ছিল না। পুলিশ চলে যাওয়ার পর কিছু পর্যটক এ এলাকায় ঘুড়তে দেখা যায়।’
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের মৌলভীবাজারের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, ‘করোনার কারণে সরকারি নির্দেশনায় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে পর্যটক প্রবেশ বন্ধ রয়েছে। তবে অসংখ্য আগত পর্যটক উদ্যানের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল সড়কের বেশ কিছু এলাকায় অবস্থা নিয়ে ও ঘোরাঘুরি করেছে। আর পরবর্তীতে পর্যটকরা আবার মাধবপুর লেকে গিয়ে ভির করে।’
এদিকে, মৌলভীবাজারের সকল পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ থাকলেও শ্রীমঙ্গল বদ্ধভূমি ৭১ খোলা ছিল। ফলে করোনার স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে পর্যটকের ঢল নামে সেখানেও। সরকারি নির্দেশনা থাকার পরেও কেন বধ্যভূমি খুলে দেওয়া হয়েছিল, তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা করতে দেখা গেছে।
-এসএস/এমএ