বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জে হোগলাপাশায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৬০ পরিবার ভাঙনের মুখে। নদীভাঙন থেকে রক্ষা পেতে দেড় কিলোমিটার স্থায়ী ভেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছে এসব পরিবার।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বলেশ্বর নদীর তীরবর্তী মোরেলগঞ্জের হোগলাপাশায় ২০০০ সালে ৬ একর জমির ওপর নির্মিত হয় এ প্রকল্পটি। পিরোজপুর-বাগেরহাট দুটি জেলার সিমান্তবর্তী এ আশ্রয়ণে ৬টি ব্যারাক রয়েছে। প্রতিটি ব্যারাকে ১০টি পরিবার। সর্বমোট ৬০টি পরিবারের এখানে বসবাস। তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নোয়নে হয়নি কোন পরিবর্তন।
নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত এ আশ্রয়ণের বাসিন্দারা। প্রতিটি ঘরের কক্ষে খুটি বেড়া জরাজীর্ণ। টিনের চালা ঝাজরা হয়ে সামান্ন বৃষ্টি হলেই পানিতে একাকার হয়ে যায়। নদীর প্রবল স্রোতে প্রতিনিয়ত ভাঙনের মুখে বসতবাড়ি, পুকুর ও গাছপালা ৬ একর জমির অধিকাংশই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সুপেয় খাবার পানির নেই কোন ব্যবস্থা, নদীর পানি খেতে হচ্ছে তাদের। দিনমজুর শ্রমিক শ্রেণির মানুষগুলোর ভোগান্তির অন্ত নেই। সরকারিভাবে প্রতি পরিবারের জন্য ৭ শতক জমির দলিল দিলেও বাস্তবে পেয়েছে ৪ শতক।
ছেলেমেয়েদের লেখা পড়ার জন্য নিজেদের উদ্যোগে একটি বিদ্যালয় থাকলেও টাকার অভাবে শিক্ষক পাচ্ছে না। লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আশ্রয়ণের অর্ধশত শিশু শিক্ষার্থীরা। প্রকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় দুই কিলোমিটারে নেই কোনো সাইক্লোন শেল্টার।
আশ্রয়ণ প্রকল্পটি নির্মাণের শুরু থেকেই দুটি পিএসএফ সরকারিভাবে নির্মাণ করা হলেও তা এখন অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। নেই সেনিটেশনের ব্যবস্থা। কর্মের তাগিদে ব্যারাক ছেড়ে চলে গেছে জাহাঙ্গীর শেখ, অধীর শীল, সুবাস পাইক, অমল বৈরাগী, নিরঞ্জন সাহাসহ অনেকেই।
কথা হয় স্বপন কুমার মিস্ত্রী, সঞ্জয় মিস্ত্রী, হৃদয় সাহা, ইদ্রিস তালুকদার, দিলিপ কুমার মাঝি, অনিতা হালদার ও আলো রানীসহ একাধিক বাসিন্দারা সঙ্গে। তারা জানান, সিডর পরবর্তী ২০০৮ সালে সংস্কারের নামে কোন মতে কয়েকটি ঘরের টিন পরিবর্তন করে দিয়েছিলো দায়সারাভাবে। পরবর্তীতে আর কোন সংস্কার হয়নি। দেড় কিলোমিটার টেকশই স্থায়ী ভেড়িবাঁধ, ব্যারাকগুলো সংস্কার, সুপেয় পানির জন্য টিউবয়েল স্থাপন জোর দাবি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন প্রশাসনের নিকট।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের সভাপতি আব্দুল হালিম শেখ বলেন, এ আশ্রয়ণে ৬০টি পরিবারের ১৫০ জন মানুষ বসবাস। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে সরকারিভাবে ভিজিডি, ভিজিএফ, ১০ টাকার চাল, বয়স্ক ভাতা, বিধাব ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতাসহ কোন না কোন সুবিধার আওতায় রয়েছে বাসিন্দারা। তবে গোবিন্দপুর, হোগলাপাশা দুই গ্রামের মানুষের প্রতিনিয়ত চলাচলের একমাত্র বাসের সাঁকোটি কাঠের পুল অথবা কালভার্ট নির্মাণ ও একটি সাইক্লোন শেল্টারের দাবি জানান।
এ সর্ম্পকে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান মো. রেজাউল ইসলাম নান্না বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের জরাজীর্ণ অবস্থা ইতোপূর্বে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারি কমিশনার ভূমি কর্মকর্তা সরেজমিনে এসেছিলেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হলেও অদ্যবধী কোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা হয়নি। তিনি বাগেরহাট-৪, সংসদ সদস্য এ্যাড. আমিরুল আলম মিলন মহোদয়ের মধ্যেমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ভাঙ্গন প্রতিরোধে ভেড়িবাঁধসহ আশ্রয়ণ প্রকল্পের সংস্কারের জোর দাবি জানান।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, হোগলাপাশা আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ সকল আশ্রয়নের জরাজীর্ণ ঘরগুলোর বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেছেন তিনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নতুন ঘর নির্মাণের কার্যক্রম শেষ হলেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের সংস্কারের কাজ শুরু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
-এসআই/এনএন