ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে একটা জয় দলের আত্মবিশ্বাস কতটা বদলে দিতে পারে। ওয়ানডে সিরিজে নাকাল হওয়া ক্যারিবীয়রা চট্টগ্রাম টেস্টে অবিস্মরণীয় জয়ের পর ঢাকায় সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচের শুরুটা দুর্দান্ত করেছে। ম্যাচের প্রথম দিনের প্রথম সেশনে স্বাগতিক বাংলাদেশের বোলারদের তেমন সুযোগ দেয়নি ক্রেইগ ব্রাথওয়েটের দল।
প্রথম সেশনে খুব একটা ভালো করতে না পারলেও দ্বিতীয় সেশনের শুরু থেকে ধারাবাহিক পেসার আবু জায়েদ রাহী। ভালো বোলিংয়ের ধারাবাহিকতায় ডানহাতি পেসার পেলেন উইকেটের স্বাদ। বিরতির পর তার করা তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে বোল্ড হন শেইন মোসলে। অফস্টাম্পের অনেক বাইরের ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটে টেনে আনেন ৭ রান করা মোসলে। তার আউটের সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ২ উইকেটে ৮৭।
এর আগে ঢাকায় ফিরে উদ্বোধনী জুটিতে প্রথম ইনিংসেই ৬৬ রান যোগ করে ফেলেছেন ক্রেইগ ব্রাথওয়েট ও জন ক্যাম্পবেল। এ দুজনের ব্যাটেই মূলত প্রথম সেশনটা নিজেদের করে নিয়েছে ক্যারিবীয়রা। মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার আগে ২৯ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ ১ উইকেটে ৮৪ রান।
মাঘের কুয়াশার মাঝে সূর্যের উঁকিঝুঁকি দেখে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিতীয়বার ভাবেননি ক্যারিবীয় অধিনায়ক। সফরে প্রথমবারের মতো কোনো নতুন খেলোয়াড়ের অভিষেক করায়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কেমার রোচের বদলে আরেক পেসার আলঝারি জোসেফকে একাদশে নিয়ে ব্যাটিং করতে নামে তারা।
অধিনায়কের সঙ্গে শুরু থেকেই আত্মবিশ্বাসী ও ইতিবাচক ব্যাটিং করতে থাকেন বাঁহাতি ওপেনার ক্যাম্পবেল। ইনিংসের প্রথম বলে দুই ও চতুর্থ বলে বাউন্ডারি হাঁকান ব্রাথওয়েট। ক্যাম্পবেল প্রথম বাউন্ডারির দেখা পান ইনিংসের চতুর্থ ওভারে গিয়ে। পরে তার ব্যাট থেকেই আসতে থাকে একের পর এক আক্রমণাত্মক শট।
বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমানের জায়গায় একমাত্র পেসার হিসেবে আবু জায়েদ রাহীকে নিয়ে বোলিং শুরু করে বাংলাদেশ। তার সঙ্গে নতুন বল ভাগ করে নেন অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। দুজনের কেউই নতুন বলের মুভমেন্ট কাজে লাগাতে পারেননি। প্রায় প্রতি ওভারেই এক-দুইটি করে শর্ট লেন্থ ডেলিভারি করেছেন মিরাজ। অন্যদিকে রাহী শুরুতে লাইন-লেন্থ খুঁজে পেতে সমস্যা হলেও ধীরে ধীরে নির্দিষ্ট জায়গায় বোলিং করতে থাকেন।
কিন্তু এতে কোনো সমস্যাই হয়নি দুই ক্যারিবীয় ওপেনারের। স্বাচ্ছন্দ্যে রান নিয়েছেন তারা। ইনিংসের নবম ওভারে ক্যাম্পবেলকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেছিলেন রাহী। কিন্তু রিভিউ নিয়ে সে যাত্রায় নিজের উইকেট বাঁচান বাঁহাতি ওপেনার। রিপ্লেতে দেখা যায়, ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিটি স্ট্যাম্পের ওপর দিয়ে চলে যেত। তখন ১৩ রানে অপরাজিত ছিলেন ক্যাম্পবেল।
নতুন বলে মিরাজ কার্যকরী ভূমিকা রাখতে না পারায় দশম ওভারে আক্রমণে আনা হয় নাঈম হাসানকে। তার ব্যক্তিগত দ্বিতীয় ওভারে প্রথম ছক্কা হাঁকান ক্যাম্পবেল। এর পরের ওভারেই রাহীকে আক্রমণ থেকে সরিয়ে বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামকে ডেকে নেন টাইগার অধিনায়ক মুমিনুল হক। শুরু থেকেই অল্পবিস্তর টার্ন পেতে শুরু করেন এ বাঁহাতি স্পিনার। তবে ব্যাট হাতেও দারুণ জবাব দিচ্ছিলেন ক্যাম্পবেল-ব্রাথওয়েটরা।
ইনিংসের ১৫তম ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলীয় পঞ্চাশ পূরণ করেন ব্রাথওয়েট। দিনের প্রথম ঘণ্টা শেষে ক্যারিবীয়দের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৫ ওভারে বিনা উইকেটে ৫৫ রান।
দ্বিতীয় ঘণ্টায় খানিক ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। এর বড় কৃতিত্ব তাইজুলের। তার করা ২১তম ওভারের চতুর্থ বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন ক্যাম্পবেল। প্রথমবারের মতো এবারও রিভিউ নেন ক্যারিবীয় ওপেনার। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যায়, বলটি আঘাত হানত সোজা মিডল স্ট্যাম্পে।
যদিও এ রিভিউ নিয়ে রয়েছে খানিক ধোঁয়াশা। টিভি রিপ্লে দেখার সময় মনে হচ্ছিল, বলটি হয়তো ক্যাম্পবেলের ব্যাটে হালকা ছুঁয়ে গেছে। তবু থার্ড আম্পায়ার আউট দিয়ে দেয়ায় অসন্তোষ দেখা যায় ক্যারিবীয় কোচ ফিল সিমন্সের অভিব্যক্তিতে। তিনি কথা বলেন বাউন্ডারি লাইনের বাইরে দাঁড়ানো চতুর্থ আম্পায়ার মাসুদুর রহমান মুকুলের সঙ্গে। এতে অবশ্য লাভ হয়নি কোনো। ক্যাম্পবেলকে সাজঘরে ফিরতে হয়েছে ৬৮ বলে ৩৬ রানের ইনিংস নিয়ে।
সেশনের বাকি সময়টায় আর বিপদ ঘটতে দেননি ব্রাথওয়েট ও তিন নম্বরে নামা শেন মোজলি। দ্বিতীয় ঘণ্টায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ করেছে ১৪ ওভারে ১ উইকেটে ২৯ রান। ব্রাথওয়েট ৮২ বলে ৩৯ ও মোজলি ২৫ বলে ৬ রান নিয়ে অপরাজিত রয়েছেন।
এইচএস