দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে লক্ষ্মীপুর-ভোলা নৌরুটে দু'দিন বন্ধ থাকার পর ফেরি চলাচল গত শুক্রবার থেকে পুনরায় শুরু হয়েছে। তবে ৩টি ফেরির মধ্যে একটি বিকল হওয়ায় পারাপারে দীর্ঘ সময় লাগছে।
মজু চৌধুরীর হাট ঘাট এলাকায় কয়েকদিন ধরে কয়েকশ' যানবাহন আটকে থাকায় তৈরি হয়েছে তীব্র যানজট।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর-ভোলা নৌরুট হয়ে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ যাতায়াতের জন্য ২০০৬ সালের এপ্রিল মাসে কামিনী, কিষাণী ও কস্তুরি নামের ৩টি ফেরি নিয়ে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মজু চৌধুরীর হাট লঞ্চ ঘাটটি চালু করে সরকার।
এরপর আরও একটি ফেরি বাড়ানো হয় এ নৌরুটে। কিছু দিন না যেতেই ত্রুটি দেখা দেওয়ার কারণে একটি ফেরি মেরামতের জন্য পাঠানো হয়। এরপর থেকে ৩টি ফেরি প্রতিদিন দুই প্রান্তের কয়েকশ' যানবাহন পারাপার করে আসছে।
সম্প্রতি মেঘনায় অস্বাভাবিক জোয়ারে প্রায়ই তলিয়ে যায় লক্ষ্মীপুর মজু চৌধুরীর হাট ও ভোলার ইলিশা ফেরিঘাট। তখন ৪-৫ ঘণ্টা ফেরিতে যানবাহন ওঠানামা থাকে বন্ধ। ফলে দুই পাড়ে কয়েকশ' দূরপাল্লার যানবাহন আটকে থাকে। মালামাল নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা।
বুধবার সকালে লক্ষ্মীপুর মজুচৌধুরীর হাট ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। ছোট, বড় এবং ব্যক্তিগত গাড়ি পারাপারের জন্য অপেক্ষা করছে প্রায় আড়াইশ গাড়ি। টার্মিনাল ও সংযোগ সড়কে আটকা পড়েছে আরও অন্তত ৪০০ পণ্যবাহী ট্রাক।
অনেক যাত্রীই দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থেকে লঞ্চ ও নৌকায় মেঘনা পাড়ি দিচ্ছেন।
ভোলাগামী যাত্রী মো. মোজাম্মেল হোসেন বলেন, 'ফেরি ও লঞ্চ না পেয়ে বাধ্য হয়ে নৌকায় যাচ্ছি। জরুরি ভিত্তিতে ওপারে যেতে হবে। তাই এভাবেই ঝুঁকি নিয়ে যাচ্ছি।
মাইক্রোবাসের চালক তাজুল ইসলাম বলেন, 'সকাল ৮টায় চট্টগ্রাম থেকে ঘাটে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। এখনও ফেরিতে উঠতে পারিনি। ছোট গাড়ির অনেক বড় লাইন। কখন পার হতে পারব, জানি না।'
চট্টগ্রাম থেকে ভোলার উদ্দেশে ট্রাক ভর্তি কাঁচামাল নিয়ে এসেছেন ট্রাকচালক জয়নাল আবেদীন।
তিনি বলেন, কয়েকদিন ধরে ঘাটে আটকে থাকায় ট্রাকে কাঁচামাল ও বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া ঘাটে আসার সড়কেরও অবস্থাও খারাপ।
লক্ষ্মীপুর থেকে মজু চৌধুরীর হাট পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়কে অসংখ্য খানাখন্দ রয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান না হলে লক্ষ্মীপুর জেলা শহরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়বে।
ফেরি ইনচার্জ মাস্টার আবদুল রব বলেন, 'এ নৌরুটে ৩টি ফেরিতে প্রতিদিন দুই প্রান্তের কয়েক শত যানবাহন পারাপার করা হয়। অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে প্রায়ই তলিয়ে যায় মজু চৌধুরীর হাট ও ভোলার ইলিশা ফেরিঘাট। তখন ফেরিতে ওঠানামা থাকে বন্ধ। খারাপ আবহাওয়ায় ফেরির ট্রিপ কমে যাওয়ায় দুই পাড়ে কয়েক শত পরিবহন আটকা পড়ে।
তিনি আরও বলেন, 'একটি ফেরি বিকল হয়ে যাওয়ায় যানবাহন পারাপারও কমে গেছে। এ কারণে ঘাটের উভয় পাড়ে যানজট। এমন পরিস্থিতি কত দিন থাকবে, জানি না।'
লক্ষ্মীপুরে দায়িত্বরত বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিসি) টার্মিনাল সুপারেন্ট মোশারফ হোসেন বলেন, 'এ রুটে আগে প্রতিদিন ফেরির ৬টি ট্রিপ চলত। কিন্তু গত কয়েক দিনের তীব্র স্রোতের কারণে ও হঠাৎ করে একটি ফেরি বিকল হওয়ায় মাত্র দুটি ট্রিপ চলছে। এতে করে লক্ষ্মীপুর-ভোলা রুটে যাতায়াতের সময় বেড়ে যায়। ফলে এখন কয়েকশ' গাড়ি দুই পাড়ে অপেক্ষায় রয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'এ সমস্যা সমাধানে বিষয়টি লিখিত ভাবে কয়েকবার (বিআইডব্লিউটিসি) কে জানানো হয়েছে। তবে ২-১ দিনের মধ্যে নতুন একটি ফেরি চলে এলে এবং আবহাওয়া ভালো হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
-আরআইকে/এমএ