For English Version
শনিবার ৪ মে ২০২৪
হোম

নবীনগরে ত্রাণের তালিকায় কোটিপতি পুত্রবধূ বোন ভাগ্নে শাশুড়ি ও শ্যালক

Published : Sunday, 26 July, 2020 at 9:15 PM Count : 695

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরে প্রাণঘাতী করোনার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া অসহায়, হতদরিদ্রদের নামের তালিকা করার জন্য যাঁকে দায়িত্ব দেয়া হল (ত্রাণের তালিকা), সেই দায়িত্বপ্রাপ্ত হিন্দু নেতাই দরিদ্রদের বদলে নিজের একমাত্র কোটিপতি পুত্রবধূ, একাধিক ভ্রাতুষ্পুত্র (কোটিপতি), বোন, ভাগ্নে, শাশুড়ি ও নিজের শ্যালকসহ বহু আত্মীয় স্বজনের নাম ঢুকিয়ে দিলেন সেই তালিকায়।

আর যাঁর বিরুদ্ধে এতবড় গুরুতর অভিযোগ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে এলাকার সর্বত্র তোলপাড় চলছে, তিনি হলেন, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর শাখার সাধারণ সম্পাদক ও নবীনগর কেন্দ্রীয় কালীবাড়ি কমিটির সভাপতি সীতানাথ সূত্রধর।

তবে শুধু ঐক্য পরিষদের সেক্রেটারিই নয়, সরজমিনে অনুসন্ধ্যানে করে এবার দেখা গেল, হতদরিদ্রদের ওই বহুল আলোচিত ত্রাণের তালিকায় নবীনগর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুনীল দেব জীবনের প্রতিষ্ঠিত আপন দুই ছোট ভাইয়ের স্ত্রীদের নামও অন্তর্ভূক্ত করে দেয়া হয়েছে।

২১০ জন হতদরিদ্রের পুরো তালিকাটিতে নবীনগর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও সেক্রেটারির একাধিক বিত্তবান আত্মীয় স্বজনের নাম ছাড়াও স্থানীয় বহু প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও বিত্তবানদের নামও খুঁজে পাওয়া গেছে।  তবে অভিযোগ ওঠেছে, নবীনগর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি (যিনি দীর্ঘ ছয়মাস ধরে অসুস্থ অবস্থায় ঢাকায় চিকিৎসাধীন) অ্যাডভোকেট সুনীল দেব জীবনের স্বাক্ষরও নাকি ওই বহুল আলোচিত তালিকাটিতে জালিয়াতি করা হয়েছে।
তালিকার নীচে দেয়া সভাপতির স্বাক্ষরের ঘরে সভাপতি স্বাক্ষর করেননি বলে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করে ঘটনাটির তদন্ত দাবি করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রাণঘাতী করোনা মহামারিতে সারাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যে সব হতদরিদ্ররা এখনও সরকারি ত্রাণ সহায়তা পাননি, সেইসব কর্মহীন মানুষের তালিকা প্রস্তত করে জুনের মধ্যে কেন্দ্রীয় দপ্তরে পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ সব জেলা ও উপজেলা কমিটিকে চিঠি পাঠায়।  কিন্তু কেন্দ্রে পাঠানো বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলা কমিটির প্রেরিত ওই তালিকায় অনুসন্ধ্যানে এ ধরণের বড় অনিয়ম ও অসংগতি ধরা পড়ে।

অ্যাডভোকেট সুনীল দেব জীবন ও সীতানাথ সূত্রধরের স্বাক্ষরযুক্ত ২১০ জনের ওই তালিকাটির ২০৩ নম্বরে স্বয়ং সাধারণ সম্পাদক ধণাঢ্য ব্যবসায়ী সীতানাথ সূত্রধরের একমাত্র পুত্রবধূ স্মৃতিরানী সূত্রধরের নাম রয়েছে। আর নামের পাশে মোবাইল নম্বরটি দেয়া আছে (যেই নম্বরে সরকারি টাকা আসবে) সীতানাথের একমাত্র পুত্র স্থানীয় বসুন্ধরা মার্কেটের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী সুভাষ সূত্রধরের। 

অনুরূপ তালিকার ৫ নম্বরে সীতানাথের কোটিপতি ছোটভাই শ্রীনাথের ছেলে পলাশ সূত্রধর, ১ ও ২ নম্বরে অপর দুই আপন ভ্রাতুস্পুত্র প্রফুল্ল সূত্রধর ও অমর সূত্রধর, ৩৭ নম্বরে শাশুড়ি ঊষা রাণী সূত্রধর, ৩৮ নম্বরে শ্যালক বাদল সূত্রধর, ৪৯ নম্বরে বোন পারুবালা সূত্রধর, ৪৮ নম্বরে ভাগ্নে প্রাণেশ সূত্রধরের নাম রয়েছে। এছাড়া, তালিকাটিতে সীতানাথ সূত্রধরের নিজের সম্প্রদায়ের অসংখ্য স্বজনেরও নাম রয়েছে।

অন্যদিকে তালিকার ১০ ও ১১ নম্বরে ঐক্য পরিষদের সভাপতি সুনীল দেব জীবনের দুই আপন ছোট ভাই বাবুল দেব ও স্বদেশ দেবের দুই স্ত্রী সীমা দেব ও খেলা রাণী দেবের নামও দেখতে পাওয়া যায়। যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।

এবিষয়ে খেলা রাণী দেব  আজ ২৬ শে জুলাই রবিবার দি ডেইলি অবজারভারকে বলেন,“করোনায় মধ্যবিত্তদেরকে সরকার এবার সহায়তা দেবে, এমনটা আমাদেরকে বলায় আমরা সরলভাবে কমিটির কাছে এনআইডি কার্ড জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু কখনও ভাবিনি, এটি নিয়ে এত হৈচৈ হবে।“

তবে অ্যাডভোকেট সুনীল দেব জীবনের মেয়ে অ্যাডভোকেট জয়শ্রী রায় ক্ষোভের সঙ্গে ঢাকা থেকে মুঠোফোনে বলেন, “আমাদের বাবা ছয়মাস ধরে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় শয্যাশায়ী। এমন অবস্থায় কিভাবে বাবার স্বাক্ষর জাল করে এমন বিতর্কিত একটি তালিকা কেন্দ্রে জমা দেয়া হল? আমরা এর সুষ্ঠু তদন্তসহ কঠোর বিচার চাই। নতুবা আমরা আইনের আশ্রয় নেব।“

এবিষয়ে সীতানাথ সূত্রধরের সঙ্গে একাধিকবার চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি। তবে শনিবার বিকেলে তাঁর একমাত্র পুত্র সুভাষ সূত্রধর মুঠোফোনে বলেন,“এসবই মিথ্যা ও আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আমার স্ত্রীর নাম ও আমার ফোন নম্বর কিভাবে এই তালিকায় গেল, এটি আমি বুঝতে পারছিনা।“

নিজের এত আত্মীয়দের নাম তালিকায় দেখে কিভাবে আপনার বাবা তালিকার নীচে সেক্রেটারি হিসেবে স্বাক্ষর করলেন? এমন প্রশ্ন করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি ফোনের লাইন কেটে দেন।  পরে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র নাথের সঙ্গে আজ কথা বললে, তিনি বলেন, “বিষয়টি আমরা শুনেছি।  খুবই অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক।  শিগগিরই বিষয়টির তদন্ত করা হবে।  অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে, কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।“

প্রসঙ্গত, গত ২২ জুলাই 'ত্রাণের তালিকায় অনিয়মের' শিরোনামে একটি সচিত্র সংবাদ অবজারভারে  প্রকাশিত হয়।

এইচএস

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,   [ABOUT US]     [CONTACT US]   [AD RATE]   Developed & Maintenance by i2soft