রাঙ্গাবালীতে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ঝুলছে তালা

Published : Sunday, 12 April, 2020 at 7:38 PM Count : 656

অবজারভার প্রতিনিধি

পটুয়াখালী রাঙ্গাবালীতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা কোন হাসপাতাল নেই। আছে শুধুমাত্র ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিক। আবার ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতেও পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই। যারা আছেন তারাও করোনা ভাইরাসের ভয়ে পালিয়েছেন।

এ কারণে কোন উপায়ান্ত না পেয়ে রোগীরা ছুঁটছেন কমিউনিটি ক্লিনিকে। কিন্তু কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর সামনে ঝুঁলছে তালা। রোগীরা এসে এক এলাকার কমিউনিটি ক্লিনিক তালাবদ্ধ দেখে যাচ্ছেন অন্য এলাকায়। সেখানে গিয়েও দেখছেন একই অবস্থা।

এভাবে হয়রানির শিকার হয়ে চিকিৎসা না পেয়ে বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে রোগীদের। এ কারণে রোগ নিয়ে ঘরেই কাতরাচ্ছে অনেক রোগী।

শনিবার সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গন্ডাদুলা কমিউনিটি ক্লিনিকটি বন্ধ। ঘড়ির কাটায় তখন সকাল ১০টা ২৫ বাজে। সামনের দরজাতেই ঝুলছিল একটি তালা। বাইরের পরিবেশ দেখে মনে হচ্ছিল অনেক দিন ধরে ক্লিনিকটি খোলা হচ্ছেনা।

স্থানীয়রা জানান, করোনা ভাইরাসের আগে সপ্তাহে দু’একদিন খোলা থাকতো। করোনা ভাইরাস শুরু হওয়ার পর থেকে ক্লিনিকটি খুলতে দেখা যায়নি। তবে মাঝে মাঝে রোগীরা এসে ঘুরে যায়। আর এখানে যারা চাকরি করেন তাদের কাউকে আসতেও দেখা যায়না।

কাজিরহাওলা কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়েও দেখা যায় একই অবস্থা। সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে ক্লিনিক তালাবদ্ধ।

স্থানীয়রা জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে এখানকার কর্মচারীরা প্রতিদিন আসেননা।

বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে ‘নেতা কমিউনিটি ক্লিনিক’ এ গিয়ে সেটিও বন্ধ দেখা যায়। সামনের দরজাতে ভেতর দিক থেকে তালা ঝুলানো রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, অনেক দিন আগে থেকেই ক্লিনিকটি বন্ধ রয়েছে। এখানে রোগরীরা এসে মাঝে মাঝে ফিরে যান। তবে এখানে যারা চাকরি করেন তাদেরকে আসতে দেখা যায়না।

বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে ফুলখালী কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে সেটিও বন্ধ দেখা যায়।

গত বুধবার রিয়ামনি নামের এক গর্ভবতী নারী চিকিৎসা নিতে যান গন্ডাদুলা কমিউনিটি ক্লিনিকে। সেখানে গিয়ে সকাল থেকে চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষা করছিল। কিন্তু চিকিৎসক তো দূরের কথা ওখানকার সংশ্লিষ্ট কাউকে পাননি। ক্লিনিকটি তালাবদ্ধ থাকায় বাইরে বসে আপেক্ষা করছিলেন তিনি। পরে কাউকে না পেয়ে দুপুর ২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে পরবর্তীতে বাড়ি ফিরে যান।

জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি একজন গর্ভবতী মহিলা। ডাক্তারের পরামর্শ নেয়ার জন্য ক্লিনিকে গিয়েছিলাম। সারা দিন অপেক্ষা করে আবার ফিরে এসেছি। কাউকে পাইনি। ক্লিনিক তালা দেয়া ছিল তাই ভেতরে ঢুকতেও পারিনি। বাইরেই বসে ছিলাম। মানুষ যেহেতু সেবাই পাইবেনা তাহলে ক্লিনিক করার কি দরকার ছিল?’

গত বৃহস্পতিবার উপজেলার জুগিরহাওলা গ্রামের শারমিন বেগম ঠান্ডা জ্বরের কারণে কয়েকটি কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়েছিল। কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ থাকায় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যান। সেখানে গিয়ে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে আসেন। পরে ইউনিক ডায়াগনস্টিক নামের একটি প্রাইভেট চেম্বারে চিকিৎসা নেন। তার টাইফয়েড সনাক্ত হলে সেখানকার চিকিৎসক ডা. তাজুন নাহার তাকে চিকিৎসা দেন। শনিবার খোঁজ নিয়ে জানা যায় শারমিন বেগম সুস্থ হয়েছেন।

রাঙ্গাবালী উপজেলার নেতা গ্রামের খোদেজা বেগম বলেন, ‘নেতা কমিউনিটি ক্লিনিকটি আগে মাঝে মধ্যে বন্ধ থাকলেও বেশির ভাগ সময় খোলা থাকতো। তবে করোনা ভাইরাস আসার পরে গত এক মাস যাবৎ ক্লিনিকটি বন্ধ আছে। এখানে কেউ আসেননা। রোগীরা এসে মাঝে মধ্যে আমাদের কাছে জিজ্ঞেস করে ডাক্তার আছে কি না। আমরা ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ডাক্তারদের পাইনা।’

রাঙ্গাবালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ডা. মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, 'নিয়ম অনুযায়ী কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। তবে করোনা ভাইরাসের এই সময়ে সরকারি ছুঁটি থাকায় সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২ পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ক্লিনিক বন্ধ রখার কোন সুযোগ নেই। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তাদেরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হবে।'

রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান বলেন, 'রাঙ্গাবালীতে যেহেতু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেই। সেহেতু এখানকার মানুষ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকের ওপর নির্ভরশীল। তাই এগুলো বন্ধ রাখার কোন সুযোগ নেই। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নিচ্ছি।'

এ বিষয়ে পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'বিষয়টি তিনি ইতিমধ্যে অবগত হয়েছেন। আজ থেকে যাতে সকল ক্লিনিকগুলো খোলা থাকে তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।'

-পিএম/এমএ