আওয়ামী লীগের ভোলার লালমোহন-তজুমদ্দিনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন এবং যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আলোচিত ইসমাইল হোসেন সম্রাটের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, অবৈধ লেনদেন ও মানি লন্ডারিংয়ের বিষয় অনুসন্ধান করতে শাওন ও সম্রাটের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। তাদের ব্যাংক হিসাবে কী পরিমাণ টাকা লেনদেন হয়েছে, তার হিসাব পাঁচ দিনের মধ্যে তফশিলি ব্যাংকগুলোর কাছে চাওয়া হয়েছে।
এছাড়া ক্যাসিনো–কেলেঙ্কারির ঘটনায় আটক যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, কৃষক লীগের নেতা শফিকুল আলম ফিরোজ ও রিমান্ডে থাকা যুবলীগ অপর নেতা জি কে শামীমের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
একই সঙ্গে তাঁদের স্ত্রী, মা বা স্বজনদের নামে কোনো হিসাব থাকলে তা-ও স্থগিত করা হয়েছে। অর্থপাচার প্রতিরোধ আইনের আওতায় এসব হিসাব ৩০ দিনের জন্য স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সোমবার তফসিলি ব্যাংকগুলোর কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, জি কে শামীম, তার মা–বাবা ও স্ত্রীর নামের ব্যাংক হিসাব ৩০ দিনের জন্য অবরুদ্ধ রাখতে হবে।
এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) সোমবার যুবলীগের নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও কৃষক লীগের নেতা শফিকুল আলম এবং তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট হিসাবের বিস্তারিত চেয়েছে।
যুবলীগের সাবেক নেতা নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন এমপি ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের যাবতীয় তথ্য তলব করেছে এনবিআর। সোমবার এ-সংক্রান্ত চিঠি বিভিন্ন ব্যাংকে পৌঁছেছে বলে জানা গেছে।
জি কে শামীমের পরিবারের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ২৩(১)(গ) ধারার ক্ষমতাবলে অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ-সংক্রান্ত চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
চিঠিতে বলা হয়েছে, এসএম গোলাম কিবরিয়া শামীম, পিতা মো. আফসার উদ্দীন মাস্টার, মা আয়েশা আক্তার, স্ত্রী শামীমা সুলতানা ও তার স্বার্থসংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠান মেসার্স জি কে বিল্ডার্সের নামে বা তাদের স্বার্থসংশ্নিষ্ট অন্য কোনো নামে অতীতে বা বর্তমানে অ্যাকাউন্ট পরিচালিত হয়ে থাকলে অবরুদ্ধ করে জরুরি ভিত্তিতে জানাতে হবে।
অন্য এক চিঠির মাধ্যমে দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, পিতা মো. আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া, মাতা খালেদা বেগম ও তার স্বার্থসংশ্নিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে বর্তমানে বা এর আগে কোনো অ্যাকাউন্ট পরিচালিত হয়ে থাকলে তা ফ্রিজ করে জরুরি ভিত্তিতে জানাতে হবে।
চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগে যুবলীগ নেতা এসএম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমকে শুক্রবার তার নিকেতনের অফিসে অভিযান চালিয়ে সাত দেহরক্ষীসহ তাকে আটক করে র্যাব। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জি কে বিল্ডার্সের মালিক তিনি। নিজেকে পরিচয় দিতেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায়বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে।
এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ক্লাব ব্যবসার নামে অবৈধ জুয়া ও ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে গুলশান-২ এর নিজ বাসায় অভিযান চালিয়ে যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে আটক করে র্যাব। পাশাপাশি তার মালিকানাধীন রাজধানীর ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাবে অভিযান চালিয়ে ১৪২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। সেখান থেকে ২০ লাখ টাকা, বিপুল পরিমাণ ইয়াবা, মদ ও বিয়ার জব্দ করা হয়। একই দিন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাটের মালিকানাধীন ক্যাসিনোতেও অভিযান চালায় র্যাব।
সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। সম্রাটের সহযোগিতায় ও প্রত্যক্ষ মদদে ঢাকার এক অংশ নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন খালেদ। নিজের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে সর্বোচ্চ শক্তি ব্যবহার করেন তিনি। রাজধানীর মতিঝিল, ফকিরাপুল এলাকায় কমপক্ষে ১৭টি ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করেন এ যুবলীগ নেতা। এর মধ্যে ১৬টি ক্লাব নিজের লোকজন দিয়ে আর ফকিরাপুল ইয়াংমেনস নামের ক্লাবটি সরাসরি পরিচালনা করেন তিনি। প্রতি ক্লাব থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে এক লাখ টাকা নেন তিনি। এসব ক্লাবে সকাল ১০টা থেকে ভোর পর্যন্ত ক্যাসিনো বসে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে আনা নানা অভিযোগের একটি প্রতিবেদন এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগরীর চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও তার কিছু লোকজনের দৌরাত্ম্যে।
এইচএস