শিল্পাঞ্চল সাভারের আশুলিয়ায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর, মারপিট, কারখানায় অনুপ্রবেশ করে লুটপাট এবং সরকারি কাজে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেছে শিল্প পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক মামলা দায়ের এবং গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে শিল্প পুলিশ-১ এর উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাশেদ মিয়া বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা এক হাজার ২০০ জনকে আসামি করে আশুলিয়া থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত সোমবার আশুলিয়ার জিরাবো এলাকায় মন্ডল নিটওয়্যার লিমিটেড কারখানায় চলমান শ্রমিক অসস্তোষ নিরসনে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের ভেতরে আলোচনায় বসেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় আন্দোলনকারী শ্রমিকরা কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দুই শ্রমিককে গুম ও দু'জনকে ধর্ষণ করেছে বলে গুজব ছড়ায়।
এছাড়া, পার্শ্ববর্তী এলাকার ন্যাচারাল ডেনিমস ও ন্যাচারাল ইন্ডিগো লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা অযৌক্তিক বিভিন্ন দাবিতে কাজ বন্ধ রেখে কারখানার ভেতরে কর্মবিরতি পালন শুরু করেন। একপর্যায়ে অসন্তোষের কারণে কর্তৃপক্ষ কারখানায় ছুটি ঘোষণা করলে সব শ্রমিক একযোগে বের হয়ে আসে। এ সময় তাদের সঙ্গে ম্যাঙ্গো টেক্স লিমিটেড কারখানার উশৃঙ্খল শ্রমিকরা বহিরাগতদের নিয়ে দলবদ্ধ হয়ে টঙ্গাবাড়ি এলাকায় মন্ডল গার্মেন্টসের সামনে অবস্থান নেন। পরে তারা মন্ডল গার্মেন্টসের ভেতরে শ্রমিকদের যৌথ বাহিনী আটকে রেখেছে বলে গুজব ছড়িয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।
এজাহারে আরও বলা হয়, শিল্প পুলিশ ও র্যাবের কর্মকর্তারা শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু উত্তেজিত শ্রমিকরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এসময় শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম ও র্যাব-৪ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আক্তারুজ্জামানসহ ১০-১২ জন যৌথ বাহিনীর সদস্য গুরুতর আহত হন। একপর্যায়ে সেনাবাহিনীর পাঁচটি, র্যাবের দুটি ও শিল্প পুলিশের একটিসহ ৮টি গাড়িতে ভাঙচুর করে হামলাকারীরা।
মামলার আসামিরা হলেন- কুড়িগ্রামের উলিপুর থানার বকিরা মধুপুর গ্রামের মো. সাফওয়ান, জামালপুরের মেলান্দহ থানার চরমোহাম্মদ গ্রামের মো. ওমর ফারুক, চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার ধলই গ্রামের মো. মিনাজুল আরেফিন, ময়মনসিংহ জেলার মো. মাসুদ রানা, সাতক্ষীরার অশোক কুমার সিংহ, কুষ্টিয়ার মো. অপু, বরিশালের মো. বাদল হোসেন, রংপুরের আপন চন্দ্র, কিশোরগঞ্জের মো. মাজাহারুল ইসলাম, রংপুরের আশিকুর রহমান, দিনাজপুরের নাছির উদ্দিন, সাতক্ষীরার হাসান আলী, নেত্রকোণার সাইদুল ইসলাম, জামালপুরের মনোয়ার হোসেন সুজন, লালমনিরহাটের আ. জলিল, আজিজুল ইসলাম, শরীয়তপুরের মো. মামুন, নোয়াখালী মো. রামিম, মো. কফিল রানা, মো. শাহাদাত হোসেন, হাসানুর রহমান, নাইমুল ইসলাম, আল-আমিন, আল ইমরান, আবু তৈয়ব, মো. সুজিত, মো. ইদ্রিস, জাহিদুল ইসলাম, ওমর ফারুক, শাকিল হোসেন, মুরাদ হোসেন, মো. সুমন, গোলাম রাব্বী, আ. রাকিব, আল আমিন ও আনিস খন্দকার।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনের সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় এক হাজার ২০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন একজন পুলিশ সদস্য। মামলায় ঘটনাস্থল থেকে আটক ৩৬ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে মঙ্গলবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গত সোমবার দুপুরে শ্রমিক অসন্তোষের জেরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় উত্তেজিত শ্রমিকরা পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের উপর হামলাসহ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন।
এছাড়াও, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে কাউসার হোসেন খান নামে এক শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আরও ছয় শ্রমিক গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক ব্যক্তি। নিহত কাওসার হোসেন খান (২৭) ম্যাংগো টেক্স লিমিটেড কারখানার সুইং অপারেটর। তার গ্রামের বাড়ি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের উপজেলার মধ্য রতনপুর এলাকায়।
ওএফ/এমএ