For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

পদ্মায় পানি বেড়ায় সরানো হচ্ছে বাড়িঘর, ডুবেছে ফসল

Published : Friday, 27 September, 2024 at 8:23 PM Count : 111

রাজশাহীতে বাড়ছে পদ্মা নদীর পানি। বন্যার আতঙ্কে চর এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে গবাদিপশুসহ ঘরবাড়ি। ভেসে যাচ্ছে ফসলি জমি। পদ্মা নদীর ডান তীরে ভারতীয় সীমান্ত লাগোয়া এই চরের কয়েকটি গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে এক সপ্তাহ ধরে।

ভাঙন চলছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাকা এবং নারায়ণপুর এলাকায়ও। চাঁপাইনবাবগঞ্জেই পানিবন্দী রয়েছে প্রায় ছয় হাজার পরিবার। তলিয়ে গেছে নাটোরের লালপুর উপজেলার কয়েক হাজার বিঘা ফসলি জমি। রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরের বাসিন্দাদের অনেকেই এখন ভাঙন আতঙ্কে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন। কেউ কেউ সবকিছু নৌকায় তুলে চলে আসছে এই পারে। খুঁজছে বসবাসের নতুন ঠিকানা।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রেলবাজার ঘাটে এমনই কয়েকটি নৌকা এসে ভেড়ে। নৌকাগুলোর কোনোটিতে গরু-ছাগল, কোনোটিতে বস্তায় বস্তায় ধান আবার কোনোটিতে চর থেকে ভেঙে নিয়ে আসা বাড়ির চাল, টিনের ছাউনি ও আসবাবপত্র।

এসব নৌকায় আসে চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের চর বয়ারমারি গ্রামের আসগর আলীর পরিবার। আসগর আলী নামের এক ব্যক্তি বলেন, প্রতিবছরই তাঁদের গ্রাম পদ্মায় ভাঙে। এরইমধ্যে ১৫ বিঘা কৃষিজমি হারিয়েছেন তিনি। বাড়ি সরিয়েছেন ছয়বার। এবারও নদীর ভাঙন বাড়ির কাছে চলে আসার কারণে তাঁরা চলে এলেন এ পারে। মাছমারা গ্রামে আশ্রয় নেবেন তাঁরা।
চর আমতলা খাসমহলের বাসিন্দা মো. আলাউদ্দিন বলেন, কয়েক দিন ধরে নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে তাদের এলাকায় কয়েকটা রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। ডুবে গেছে টমেটো ও ধানের খেত। চর বয়ারমারি গ্রামের অন্তত ৫০টি বাড়ি সরিয়ে নিতে হয়েছে। চর বয়ারমারির পাশে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার জেলেপাড়া গ্রামেও তীব্র নদীভাঙন চলছে। পোলাডাঙ্গা এলাকায় একটি সেতু ছিল। এই সেতুও ভেঙে গেছে নদীভাঙনের কারণে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আলাতুলি ও নারায়ণপুর ইউনিয়নের প্রায় চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। আগের বছরও এই এলাকার দুই শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এরইমধ্যে ইউনিয়নের এক-তৃতীয়াংশ কৃষিজমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এবারও ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে বাড়িঘর, বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা ইউনিয়নেও চলছে পদ্মা নদীর ভাঙন। এই এলাকার অনেকেই আতঙ্কে বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছেন। শিবগঞ্জের পাকা ইউনিয়নে প্রায় ২৫০, দুর্লভপুর ইউনিয়নে ৪ হাজার ৫০০ ও মনাকষা ইউনিয়নে প্রায় ৩৫০টি পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজির হোসেন বলেন, ২০১৮ সাল থেকেই এই ইউনিয়ন ভাঙছে। এবারও তীব্র ভাঙন চলছে। ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ও হুমকির মুখে। নদীর তীররক্ষায় বিভিন্ন দপ্তরে ছোটাছুটি করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মাহবুব-উল-ইসলাম বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে শোনা যাচ্ছে যে প্রায় ছয় হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় আছে। এটা যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত তালিকা করার জন্য সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বলা হয়েছে। তালিকাটা চূড়ান্ত হলেই আমরা পানিবন্দী মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ শুরু করব।’

এদিকে মহানগরীর ওপারে চর মাজারদিয়াড় এলাকায় কিছু ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেলেও এখন সেখানে ভাঙন নেই। তবে পাড় ভাঙছে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চক নারায়ণপুর ইউনিয়নে।

ফতেপুর পলাশি রাস্তার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ভাঙনের কারণে ওই ইউনিয়নের আতারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনে পদ্মা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। চৌমাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও পাঠদান বন্ধ রয়েছে। আতারপাড়া, চৌমাদিয়া, দিয়াড়কাদিরপুর গ্রামের প্রায় ৭৫০টি পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এলাকার বেশ কিছু বাড়িঘর পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি দপ্তরের হিসাবে, নাটোরের লালপুর উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার বিঘা জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া রাজশাহীর ৯ হাজার ৬৮১ বিঘা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১৪ হাজার ৮৫৭ বিঘা ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। লালপুরের বিলমাড়িয়া ইউনিয়নের নওশারা সুলতানপুর, চাকলা বিনোদপুর, দিয়াড়শংকরপুর, আরাজি বাকনাই, রসুলপুর ও মোহরকয়া আংশিকসহ প্রায় ১৮টি চর এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাবে গত এক সপ্তাহ ধরে পদ্মার পানি বেড়েছে।

রাজশাহীর পবা উপজেলার ৮ নম্বর হরিয়ান ইউনিয়নের (চর খিদিপুর) মেম্বার সহিদুল ইসলাম বলেন, মধ্যচরে পদ্মার ভাঙন দেখা দিয়েছে। খিদিরপুর চরে বন্যার পানি ঢুকেছে। চরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ কেউ লোকালয়ে চলে আসছেন। গবাদিপশুসহ অন্য মালামালের জন্য অনেকেই আসতে পারছেন না।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উত্তরাঞ্চলীয় পানিবিজ্ঞান পরিমাপ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে পদ্মার পানি বেড়েছে। তবে বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাংখা পয়েন্টে পানি কমেছে। ফলে ভাটিতেও পানি কমবে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী পাঁচ দিন পানি কমতে পারে।

এফএ/এসআর

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,