ঘন ঘন লোডশেডিং, নালিতাবাড়ীতে জনজীবন বিপর্যস্ত
Published : Tuesday, 24 September, 2024 at 12:50 PM Count : 183
তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে বেড়েছে প্রচন্ড গরম। একইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিং। এ কারণে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। লোভশেডিং এর কারণে বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
এই উপজেলায় ৫৪ হাজার পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহককে দুটি সাব-ষ্টেশনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। গরমের সময় প্রতিদিন ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৮ মেগাওয়াট। তাই প্রতি এক ঘন্টা পর পর লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে।
তীব্র গরমে দেরিতে বিদ্যুৎ পাওয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন গ্রাহকরা। তাই ভুক্তভোগী পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকরা দ্রুত সময়ের মধ্যে এর সমাধান চান।
এলাকাবাসী জানান, চলমান আশ্বিন মাসেও মেঘমুক্ত আকাশ আর তীব্র খরতাপে সূর্যের চোখ রাঙানিতে জনজীবনে নেমে এসেছে অসহনীয় দুর্ভোগ। তাপমাত্রার দাপটে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। গরমে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে শিশু, বৃদ্ধ ও নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ।
প্রতিদিন বেলা বাড়ার সাথে সাথে বেড়ে যায় তাপমাত্রা। বর্তমানে ৩৫ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করছে। এতে শহর ও গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষদের পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। রিকশাচালক থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রমজীবী ও দিনমজুররা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। তীব্র এই গরমে মানুষজন কাজে যেতে পারছেন না। সংসার পরিচালনায় ন্যুনতম উর্পাজন করতে না পারায় এসব স্বল্পআয়ের মানুষ তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
অন্যদিকে, বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন বিলের হিসেব করতে গ্রাহকের বাড়িতে রিডিং লিখতে গিয়ে গ্রাহকের রোষানলে পড়ছেন।
উপজেলার বারমারী এলাকার কৃষি শ্রমিক হাবিবুর রহমান বলেন, প্রচন্ড গরমের কারণে আমন ধান ক্ষেত সেচ সংকটের হুমকিতে পড়েছে। এছাড়া অতিরিক্ত গরমের কারণে ক্ষেত খামারে বেশিক্ষণ কাজ করা যায় না। গরম বেশি হওয়ায় কাজ করতে গেলে শরীর থেকে প্রচুর ঘাম বের হয়। অতিরিক্ত ঘাম বের হওয়ার কারণে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাপপ্রবাহের কারণে শ্রমিকরা এখন বাড়তি মজুরি দিয়েও অনেকেই কাজ করতে আগ্রহী হচ্ছেন না। গরমের কারণে কৃষকরা মাঠে কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এই মাত্রাতিরিক্ত গরমের কারণে তারা এখন আর মাঠে কাজ করতে চান না।
কৃষক শাহ জামাল বলেন, দিন-রাতে কতবার বিদ্যুৎ যায় তার কোনো হিসেব নেই। তার উপর আশ্বিন মাসের শুরুতে এসেও তীব্র দাবদাহ শুরু হয়েছে। এমন সময়ে বিদ্যুতের লোডশেডিং এ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি আমরা। রাতের বেলায় অতিরিক্ত গরমের কারণে শিশু ও বৃদ্ধসহ পরিবারের কেউই ঠিকমতো ঘুমাতে পারেনা।
অটোরিকশাচালক মফিজুল ইসলাম বলেন, প্রচন্ড গরমের কারণে রোজগারের জন্য রিকশা নিয়ে বাইরে যেতে পারছি না। আমাদের তেমন আয় হচ্ছে না। আগে দিনে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় হতো। এখন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকার মতো রোজগার হয়। এতে রিকশা মালিকের জমার টাকা দিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। আর নিজের সংসারের খরচ কিভাবে মিটাবো তা ভেবে পাচ্ছি না।
এ ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নালিতাবাড়ী জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. আখতারুজ্জামান বলেন, নালিতাবাড়ী উপজেলায় দুটি সাব স্টেশনে ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু প্রতিদিন গড়ে ৭ থেকে ৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। গ্রাহকের চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ সরবরাহের কারণে লোডশেডিং বেড়েছে। আমরা আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সমস্যা সমাধান হবে। এমনকি আরো বেশি বরাদ্দ প্রাপ্তির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। এ জন্য সবাইকে ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।
-এমএস/এমএ