নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে ৭টি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে তালাবদ্ধ। ভোগান্তির শিকার সেবা প্রার্থীরা। অভিযোগ বিএনপির নেতাকর্মীরা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়গুলোতে তালাবদ্ধ করে রেখেছেন। শুধু তাই নয়, ইউপি চেয়ারম্যানদের নামে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ও আহতদের স্বজনরা রাজনৈতিক মামলা দায়ের করায় আত্মগোপনে চলে যাওয়ার কারণে তালাবদ্ধ করে রাখেন তারা। ফলে জন্ম মৃত্যু নিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদ, ট্রেড লাইসেন্স, নাগরিক সনদ, চারিত্রিক সনদসহ ৩০টি সেবা বন্ধ রয়েছে। সেবাগুলো বন্ধ থাকার কারণেই ভোগান্তিতে পড়েছেন সেবা প্রার্থীরা। দ্রুত সমস্যা সমাধান করে সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য দাবি জানিয়েছেন ভোগান্তিতে থাকা সাধারণ মানুষ।
এদিকে বিএনপির এক শীর্ষ নেতা টাকার বিনিময়ে প্রতিটি পরিষদে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বানানোর রফাদফা করেছেন বলে ইউপি সদস্যরা অভিযোগ তুলেছেন।
জানা যায়, উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে সোনারগাঁও উপজেলা গঠিত। ইউপি চেয়ারম্যান পরিষদের না থাকার কারনে পুরো উপজেলায় ৪ লাখ ৩৫৮ জন মানুষের সেবা বন্ধ হয়ে আছে। সোনারগাঁওয়ের কাঁচপুর, সাদিপুর, জামপুর, নোয়াগাঁও, বৈদ্যেরবাজার, পিরোজপুর, শম্ভুপুরা ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয় তালাবদ্ধ করে রাখেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তবে বাকি তিনটি পরিষদ তালা বদ্ধ করার পায়তারা করছেন বলে অভিযোগ উঠে। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর বিএনপির নেতাকর্মীরা একের পর এক ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের সামনে ইউপি চেয়ারম্যানদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করে। এক পর্যায়ে ইউপি কার্যালয়গুলোতে তারা তালাবদ্ধ করে দেয়। এ ঘটনায় ক্ষুদ্ধ হয় সেবা প্রার্থীরা।
ইউনিয়ন পরিষিদ বিধিমালা সূত্রে জানা যায়, ইউপি চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকলে চেয়ারম্যানদের কাজ পরিচালনা এবং জনসেবা অব্যাহত রাখার জন্য স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯-এর ধারা ৩৩, ১০১ এবং ১০২ অনুযায়ী বিভাগীয় কমিশনার বা জেলা প্রশাসক স্ব স্ব অধিক্ষেত্রের সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যানকে আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ করবেন।
ইউপি সদস্যদের দাবি, ইউপি চেয়ারম্যানরা রাজনৈতিক মামলায় আসামী হয়ে আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পর বিএনপির নেতাকর্মীরা সচিব ও ইউপি সদস্যদের বের করে দিয়ে কার্যালয়গুলো তালাবদ্ধ করে দেয়। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছেন সেবা প্রার্থীরা। তাছাড়া চেয়ারম্যানদের অনুপস্থিতির সুযোগে বিএনপি পন্থী ইউপি সদস্যরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য তারাও ইন্ধন যোগাচ্ছেন। এতে কোন সরকারী নিয়ম ও নীতির তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। গত ১৭ সেপ্টেম্বর সকালে জামপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ১১ জন ইউপি সদস্য এসে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে আসলে সোনারগাঁও থানা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক আমির হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপির নেতাকর্মীরা সচিব বদরুজ্জামান ও ইউপি সদস্যকে অকথ্য গালিগালজ করে অপমান অপদস্থ করে বের করে দেয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ইউপি সদস্য জানান, আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ও আহতদের স্বজনরা হত্যা ও হত্যা চেষ্টা মামলা দেয়। মামলা দেওয়ার পর থেকে চেয়ারম্যানরা গ্রেপ্তার এড়াতে আত্ম গোপনে চলে যায়। আত্মগোপনে যাওয়ার কারনে পরিষদের কার্যক্রমে অংশ নিতে পারছেন না। এ সুযোগে তাদের মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বহিস্কার করানোর জন্য উঠে পড়ে লাগেন। বহিস্কারের আগেই পছন্দের ইউপি সদস্যদের ১৫-২০ লাখ টাকার বিনিময়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বানানোর মিশনের নেমেছেন বিএনপির এক শীর্ষ নেতা।
পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মফিজুর রহমান সুমন বলেন, সচিব পদে সরকারীভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত। তারা যে সরকার আসবেন সেই সরকারের হয়ে কাজ করবেন। বিএনপির দলীয় চেয়ারম্যান আসলে তাদের হয়ে জনগনের সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। এখন বিএনপি নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের পরদিন হুমকি ধামকি দিয়ে সচিবদের বের করে দিয়ে তালা দেওয়ার কারণে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে।
কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সভাপতি ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুল বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকলে ইউপি সদস্যদের মধ্য থেকে প্যানেল চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করবেন এটা স্বাভাবিক। তবে কেউ টাকার বিনিময়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বানানো বোকামি ছাড়া কিছুই না। ইউপি বিধিমালা বলতে কিছু রয়েছে। সেই বিধিমালার আলোকে পরিষদ পরিচালিত হবে।
সোনারগাঁও থানা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান জানান, সচিবরা নিয়মিত অফিস করছেন। চেয়ারম্যানরা গ্রেপ্তার এড়াতে অফিস করছেন না। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে নাগরিক সেবা নিয়মিত করার জন্য সকল প্রকার সহযোগিতা করবে।
সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা রহমান বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানরা অনিয়মিত অফিস করলে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। অব্যাহতির পর নিয়ম অনুযায়ী প্যানেল চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করবেন। তবে প্যানেল চেয়ারম্যানে সমস্যা হলে প্রশাসক নিয়োগ করা হবে। তবে টাকার বিনিময়ে যে কাউকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেওয়ার সুযোগ নেই।
এইচএমআর/এসআর