আধুনিক রেলে অর্থ-নথি বহনে এখনও ব্রিটিশ সিন্দুকেই আস্থা
Published : Monday, 9 September, 2024 at 7:23 PM Count : 163
ক্যাশ সেইফ বা ভ্রাম্যমাণ সিন্দুক। শুনতে বেশ অবাক লাগছে; এই যুগে আবার সিন্দুকের ব্যবহার! হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন। এই ভ্রাম্যমাণ সিন্দুক রেলওয়েতে ব্যবহার হয়ে আসছে ব্রিটিশ আমল থেকে। ছোট ছোট স্টেশনগুলো থেকে লোকাল ট্রেনের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ সিন্দুকে করে টাকা ও মূল্যবান কাগজপত্র আনা-নেওয়ার হয়ে থাকে।
স্টেশনগুলোতে টিকিট বিক্রি বা বুকিংয়ের টাকা-পায়সা একটি চামড়ার ব্যাগে ঢুকানো হয়। ব্যাগটি সিলগালা করে ভ্রাম্যমাণ সিন্দুকে ফেলা হয়। এরপরে ট্রেনে চলে আসে অঞ্চল ভিত্তিক রেলওয়ে ক্যাশ অফিসে।
রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্রিটিশ শাসনের সময় ভ্রাম্যমাণ সিন্দুকগুলো দিয়ে রেলওয়ের দূর-দূরান্তের স্টেশনগুলো থেকে টিকিট বিক্রির টাকা, গুরুত্বপূর্ণ কাজগপত্র আনা-নেওয়া হতো। ব্রিটিশ শাসন নিশ্চিহ্নের এতো বছর পরেও দেশের রেলওয়েতে এই ভ্রাম্যমাণ সিন্দুক ব্যবহার রয়ে গেছে। তবে দেশের রেলওয়ে আধুনিক ও গতিশীল হয়েছে। এসেছে অনেক পরিবরর্তন। কিন্তু ব্রিটিশদের রেখে যাওয়া ভ্রাম্যমাণ সিন্দুকের পরিবর্তে বিকল্প কিছু নিয়ে আসা হয়নি। বরং ব্রিটিশ রেলওয়ের রেখে যাওয়া সিন্দুক ব্যবহারে এখনও আস্থা রয়েছে রেলওয়ের।
রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে ভ্রাম্যমাণ সিন্দুকগুলো দেখা যায়। স্টেশনের বুকিং অফিসের সামনে এগুলো রাখা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ সিন্দুকগুলোর উপরে বেশিকিছু চামড়ার ব্যাগ রাখা হয়েছে। চামড়ার ব্যাগগুলোতে বিভিন্ন স্টেশনের নাম লেখা রয়েছে। মূলত এই চামড়ার ব্যাগগুলো নাম অনুযায়ী স্টেশনগুলোতে দেওয়া হয়। টিকিট বিক্রির টাকা ও গুরুত্বপূর্ণ নথি ব্যাগগুলোর মধ্যে দিয়ে সিলগালা করা হয়। ব্যাগগুলো ভ্রাম্যমাণ সিন্দুকে ফেলা হয়। তবে মজার বিষয় হচ্ছে- তালা না খুলেই চামড়ার ব্যাগ সিন্দুকে ফেলা যাবে। কিন্তু তালা না খুললে সিন্দুকের ভেতর থেকে কিছু বের করা সম্ভব না।
রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা জানায়, ব্রিটিশ শাসনামলের ১৯৬২ সালে ইন্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি প্রথম বাংলায় রেলপথ স্থাপন করে। ব্রিটিশ আইনে পরিচালিত হত ট্রেন। আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে, পাকিস্তান ইন্টার্ন রেলওয়ে এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে হওয়ার পরও কিছু সংশোধন ছাড়া ব্রিটিশ আইনে পরিচালিত হচ্ছে রেল। বর্তমানে বড় স্টেশনগুলোর টাকা ব্যাংকে জমা হলেও মফস্বল এলাকার স্টেশনের টাকা পুরনো নিয়মে ক্যাশ সেইফের মাধ্যমে ক্যাশ অফিসে আনা হয়। ব্রিটিশ নিয়ম অনুসরণ করে কাজ করলে চুরি বা হারানোর আশঙ্কা নেই বলছেন রেল সংশ্লিষ্টরা।
এই চামড়ার ক্যাশ ব্যাগে করে টাকা ও আয়ের ডকুমেন্ট সিলগালা করেন স্টেশন মাস্টার। তারপর গার্ডের তত্ত্বাবধানে ক্যাশ সেইফে বুঝিয়ে দেন। ট্রেন পরিচালকের নিরাপত্তা হেফাজতে পাঠানো হয়। থাকেন নিরাপত্তা বাহিনীর একজন সদস্য। সিন্দুকের মতো দেখতে ক্যাশ সেইফে দুই স্তরে তালা থাকে। যে স্টেশন থেকে বক্সে টাকার ব্যাগ দেওয়া শুরু হবে সেই স্টেশন মাস্টার নিচের কার্ড লেবেল বন্ধ করে দিবেন। আর শেষ স্টেশন মাস্টার ওপরের মুখ কার্ড লেবেল দিয়ে সিলগালা করে দিবে। স্টেশন থেকে টাকার ব্যাগ ঢুকানোর সময় গাইডেন্সে স্টেশন মাস্টার স্বাক্ষর করেন। সেখানে কোন স্টেশন থেকে কয়টি ব্যাগ নিয়েছে তা উল্লেখ থাকবে। আর স্টেশনে থাকা গাইডেন্সে গার্ড স্বাক্ষর করেন।
রাজশাহী রেল স্টশনের কুলি সরদার মিলন আলী জানান, আমরা প্রতিদিন ট্রেনে তুলে দেয়। বেশিরভাগ বরেন্দ্র ও মধুমতি এক্সেপ্রেস, এছাড়া মহানন্দা, উত্তরাসহ অন্য ট্রেনে তুলে দেওয়া হয়। এরপরে সেগুলো বিভিন্ন স্টেশনে পৌঁছে যায়। আমরা দীর্ঘদিন থেকে এমনভাবে দেখে আসছি।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সুপারভাইজার ক্যাশ ইউটনেস (স্বাক্ষী) মিজানুর রহমান জানান, ব্রিটিশ শাসনামল থেকে হয়ে আসছে। স্টেশনগুলো থেকে টাকা পাঠানোর নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে চলে আসছে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ২৩৮টি স্টেশন রয়েছে। এরমধ্যে ব্যাংকিং এর আওতায় আসেছে ৭৩টি স্টেশন। বাকি স্টেশনগুলোর টাকা পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের রাজশাহী ক্যাশ অফিসে এই মাধ্যমে। তবে ব্যাংকিং হয়ে যাওয়া স্টেশনগুলোর কাগজপত্রগুলোও ক্যাশ সেইফ বা ভ্রাম্যমাণ সিন্দুকের মাধ্যমে আসে।
তিনি আরও বলেন, ট্রেনের গার্ড রুমে এই ক্যাশ সেইফ বা ভ্রাম্যমাণ সিন্দুক থাকে। এরপরে একজন পাহারায় থাকেন। স্টেশনের টাকা ও তার হিসাব একটি চামড়ার ব্যাগে ভরে সিলগালা করে তার পরে ভ্রাম্যমাণ সিন্দুকে ফেলা হয়। ওই সব স্টেশনে দায়িত্বরত ব্যক্তি ও যিনি চামড়ার ব্যাগটি বুঝে নিলেন তাদের স্বাক্ষর থাকে। প্রতিটি স্টেশনের নাম লেখা থাকে ব্যাগগুলোতে।
আরএইচএফ/এসআর