নালিতাবাড়ীতে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
Published : Monday, 9 September, 2024 at 11:05 AM Count : 525
শেরপুরের নালিতাবাড়ীর ১০ নং যোগানিয়া ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম করে দলীয় প্রভাব খাঁটিয়ে রাস্তার পাশে লাগানো সরকারি গাছ কাটা, বাজারে শেড ঘর নির্মাণে অনিয়ম, বয়স্ক ও বিধবা ভাতা এবং প্রতিবন্দি ভাতা কার্ড দেওয়াসহ সাব-মার্সিবল পাম্প প্রদানে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযুক্ত আব্দুল লতিফ উপজেলার ১০ নং যোগানিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
তার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর যৌথ ভাবে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন যোগানিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন।
অভিযোগে জানা গেছে, সম্প্রতি যোগানিয়া ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তালতলা বাজারে চারটি টিনশেড ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেন তিনি। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ লাখ টাকা। তালতলা বাজার থেকে তালুকপাড়া ঈদগাঁ মাঠের রাস্তা থেকে এনজিও প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড ভিশনের রোপিত বড় আকারের ২২টি মেহগনি গাছ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে একক সিদ্ধান্তে কেটে ফেলেন চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ। প্রায় ২০ বছর আগে লাগানো ওইসব গাছসহ ২৫০টি মেহগনি গাছের চারা রোপণ করে এনজিও সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন। এছাড়া ওই ইউনিয়নে সরকারি বরাদ্দকৃত ঘরের ভিটওয়াল ১০ ইঞ্চির পরিবর্তে করা হচ্ছে ৫ ইঞ্চি করে গাঁথুনী করেন।
রাস্তায় লাগানো গাছ পরিচর্যাকারীরা জানান, এনজিও ওয়ার্ল্ড ভিশনের সাথে চারা রোপণের সময় শর্ত ছিল গাছগুলো বন বিভাগ ও ইউএনও'র অনুমতি সাপেক্ষে দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রয় করা হবে। গাছ বিক্রির মূল্যের তিন ভাগের একভাগ পাবে রাস্তার পাশের জমির মালিক। একভাগ পাবে গাছ পরিচর্যাকারী ও বাকি একভাগ অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা করা হবে। কিন্তু প্রায় তিন মাস পূর্বে চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ জোরপূর্বক আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে বড় বড় ২২টি মেহগনি গাছ কেটে নিয়ে যান। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৫ লক্ষ টাকা। একই ইউনিয়নের গড়াকুড়া মসজিদ বাজারে একটি টিনশেড ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ না করেই কাজের বিল উঠিয়ে নিয়েছেন। অসমাপ্ত কাজ ফেলে রাখায় ওই বাজারের ব্যবসায়ীরা ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছেন।
গাছ পরিচর্যাকারী ফজিলা বেগমের ছেলে ফজল হক জানান, গাছ কাটার সময় আমরা বাঁধা দিলেও চেয়ারম্যান লতিফ আমাদের কথা মানে নাই। আমাদেরকে ও রাস্তার পাশের জমির মালিককে গাছ বিক্রির কোনো অংশ দেওয়াতো দূরের কথা বিক্রিত ওইসব গাছের ডালপালা পর্যন্ত চেয়ারম্যান নিয়ে গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, চেয়ারম্যান লতিফ ও তার লোকজন জোরপূর্বক যোগানিয়া ইউনিয়নে ও নালিতাবাড়ী পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জমি দখল করেছেন।
লিখিত অভিযোগকারী আব্দুর রাজ্জাক ও শাহাদাত হোসেন জানান, চেয়ারম্যানের কাছ থেকে যেকোনো ধরনের সেবা পেতে হলে গুনতে হয় ঘুষের টাকা। টাকা দিতে না পারলে সেবা প্রত্যাশীদের বলা হয় নির্বাচনের সময় প্রচুর টাকা খরচ করেছি। সেই টাকা এখন তুলতে হবে। তাই সেবা পেতে হলে অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে।
এর আগেও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদকের কাছে একাধিকবার তার অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল। কাজ না হওয়ায় এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য ও সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরীর কাছেও লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন ভুক্তভোগীরা।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফের মুঠোফোনে একাধিক বার কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদ রানা জানান, শেডঘর নির্মাণের অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সব ধরনের নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছি। এছাড়া রাস্তার পাশে লাগানো সরকারি গাছ এভাবে কাটার এখতিয়ার চেয়ারম্যানের নেই। এসব অনিয়ম তদন্তপূর্বক তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
-এমএস/এমএ