রাজশাহী মহানগরীর ‘গলার কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে অতিরিক্ত অটোরিকশা। প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত অটোরিকশা চলে ছোট্ট এই শহরটিতে। এ অবস্থায় যানজট কমাতে একটি কৌশল বের করে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক)।
অটোরিকশাগুলোকে মেরুন ও সবুজ—দুই রঙ করতে বাধ্য করা হয়। তারপর শিফট ভাগ করে অটোরিকশা চলাচল করতে দেওয়া হয়। তাতে মহানগরীর যানজট কিছুটা কমে। কিন্তু এখন আবার সব অটোরিকশা একসঙ্গে চলছে সড়কগুলোতে। ফলে শহরে অটো জট স্থায়ী রূপ নিয়েছে।
ট্রাফিক পুলিশ কিংবা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে শুধু আগের নিয়মে শিফট মেনে অটোরিকশা চালানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে। যারা নিয়ম মানছে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ফলে পরিস্থিতিরও উন্নতি হচ্ছে না। সিটি করপোরেশন বলছে, পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে। তবে পুলিশ কিছুটা সময় নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করতে চায়।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, আগের সব অটোরিকশার নিবন্ধন বাতিল করে ২০২১ সালে নতুন করে ৮ হাজার ৯০০টির নিবন্ধন দেওয়া হয়। কিন্তু শহরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার। এছাড়া অগণিত ব্যাটারিচালিত রিকশা আছে। ব্যাটারিচালিত রিকশার নিবন্ধন আছে মাত্র ১৪ হাজার ২৬২টির। এই রিকশা-অটোরিকশা একসঙ্গে শহরে নামলে যানজট দেখা দেয়। তাই ২০১৯ সালের দিকে অটোরিকশাগুলোর সময় ভাগ করে দেওয়া হয়। মাসের প্রথম সপ্তাহে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত মেরুন রঙ এবং বেলা আড়াইটা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সবুজ রঙের অটোরিকশা চলাচলের সিদ্ধান্ত হয়। আর পরের সপ্তাহে সকাল ৬টা থেকে ২টা পর্যন্ত সবুজ এবং আড়াইটা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মেরুন রঙের অটোরিকশা চলাচল করার কথা। এতোদিন এভাবেই চলছিল।
কিন্তু গত ৫ আগস্টের পর পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়লে সব রিকশা-অটোরিকশা একসঙ্গে নেমে পড়ছে রাস্তায়। যার যখন খুশি, তখন রাস্তায় নেমে পড়ার কারণে শহরের প্রায় প্রতিটি এলাকায় দেখা দিয়েছে যানজট। গত রোববার মহানগরীর সাহেববাজার, গণকপাড়া, রেলগেট, শিরোইল বাস টার্মিনাল এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, দুই রঙের অটোরিকশাই চলাচল করছে। ফলে এসব এলাকায় তুমুল অটো জট দেখা দিচ্ছে।
রেলগেট এলাকায় অটোরিকশাচালক জুলফিকার আলী বলেন, এখন আর টাইম-মাইম নাই। যার যখন খুশি গাড়ি চালাচ্ছে। আমিও চালাচ্ছি। গাড়ি চললে ব্যাটারিগুলো ভালো থাকে। দুই পয়সা আয়-রোজগারও হয়। এখন সবাই একসঙ্গে গাড়ি চালাচ্ছে বলে আমিও চালাচ্ছি। প্রশাসন যদি আবার কড়াকড়ি শুরু করে তাহলে তখন আবার নিয়ম মেনেই চালাতে হবে।
রেলগেট এলাকায় কথা হয় শালবাগান এলাকার বাসিন্দা সাবিয়ার রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, শহরটা তো ছোট। এই ছোট শহরে এতো রিকশা-অটোরিকশার প্রয়োজন নাই। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা হয়ে গেছে অতিরিক্ত। যারা রাস্তায় রিকশা-অটোরিকশা চালাচ্ছে, তারাও বাধ্য হয়েই রাস্তায় নেমেছে। এখানে তো আর তেমন কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা নেই। আগে যেভাবে দুই শিফটে গাড়িগুলো চলত, সেভাবে চললেই ভালো হয়। তাহলে যানজট কম হবে।
জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সারোয়ার হোসেন বলেন, আমরা আগে মাঝেমধ্যে রাস্তায় অবস্থান নিয়ে লাইসেন্স চেক করতাম। অনেক নম্বরের বিপরীতে একাধিক গাড়ি চলে, কিংবা লাইসেন্স নেই এ রকম গাড়ি পেলে জব্দ করতাম। আর নির্ধারিত শিফট অমান্য করে গাড়ি চালালে ব্যবস্থা নিত পুলিশ। এখন সব কার্যক্রমই বন্ধ। আমাদের আরও সময় লাগবে। এখন আমরা সতর্ক করতে মাইকিং করছি। দ্রুতই হয়তো ট্রাফিক পুলিশ নিয়ম অমান্যকারী চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার নূর আলম সিদ্দিকী বলেন, এক মাসের বেশি সময় ধরে মানুষ যার যেভাবে ইচ্ছা, সেভাবে চলছে। আমরা মোটিভেশনাল পর্যায়ে আছি। তাদের বোঝাচ্ছি। এখনো মামলা পর্যায়ে যাচ্ছি না। এক মাসের বেশি সময় ধরে ট্রাফিক আইনে কোনো মামলাও হয়নি। মামলা দেওয়ার জন্য আমাদের কজ মেশিনের দরকার হয়। ৫ আগস্ট আগুনের ঘটনায় কিছু কজ মেশিন পুড়ে গেছে, কিছু নষ্ট হয়েছে এবং কিছু ভালো আছে। আমরা গুছিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। সবকিছু একটু স্বাভাবিক পর্যায়ে এলে আমরা আমার ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করব।
আরএইচএফ/এসআর