আশুলিয়ায় স্থানীয়দের সাথে শ্রমিকদের সংঘর্ষ, আহত ৩০
Published : Thursday, 5 September, 2024 at 10:18 PM Count : 124
সাভারের আশুলিয়ায় চলমান অস্থিরতার মধ্যে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সাথে স্থানীয় লোকজনের সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ৩০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। তাদেরকে উদ্ধার করে স্থানীয় নারী ও শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে বেশ কিছু কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে অধিকাংশ কারখানাতেই স্বাভাবিক উৎপাদন কাজক্রম অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে শিল্প পুলিশ। এছাড়া ইটপাটকেলের আঘাতে শিল্প পুলিশের সদস্য আহতসহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে দুইজনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কারখানার নিরাপত্তার জন্য কিছু কিছু মূল ফটকে অবস্থান করছেন। কোথাও দাবি আদায়ে শ্রমিকরা কারখানার সামনে অবস্থান নিয়েছেন। তবে গতকাল যেসব কারখানা বন্ধ ছিল, আজ সেগুলোর অধিকাংশেই কাজ চলছে। এর মধ্যে সকালে অনন্ত গার্মেন্টস এর শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশ করলেও কাজ না করে বিভিন্ন দাবী আদায়ে কাজ বন্ধ করে বসে থাকে। এসময় মালিকপক্ষ শ্রমিকদের কিছু দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও শ্রমিকরা তা না মেনে কারখানা থেকে বেরিয়ে যায়। কারখানায় বিশৃঙ্খলা করে বেরিয়ে যাওয়ার পথে অতর্কিতভাবে ৫০-৬০ জন ব্যক্তি লাঠিসোঁটা হাতে হামলা চালালে বেশ কয়েকজন শ্রমিক আহত হন। একই ঘটনা ঘটে পাশ্ববর্তী নিউজ এইজ কারখানায়। সকালে শ্রমিকরা কারখানাটিতে প্রবেশ করলেও ভিতরে ঢোকার কিছুক্ষণ পরই দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত কাজ করবে না জানিয়ে বেরিয়ে যায়। পরে মালিকপক্ষ কারখানাটি ছুটি ঘোষণা করে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও আহত শ্রমিকের সাথে কথা বলে জানা যায়, সকালে আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকার কয়েকটি কারখানার আশেপাশে স্থানীয় ৫০-৬০ জনের একটি গ্রুপ লাঠিসোঁটা হাতে অবস্থান নেয়। পরে আন্দোলনকারী শ্রমিকরা কাজ না করে কারখানা থেকে বেরিয়ে এলে লাঠিয়াল গ্রুপটি তাদের উপর হামলা চালায়। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ৩০ জন শ্রমিক আহত হন। শ্রমিকদের বিক্ষোভের মুখে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পর্যায়ক্রমে বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের জিরাবো এলাকা পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে অবস্থিত বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে ছুটি ঘোষণা করা কারখানাগুলোর সুনির্দিষ্ট কোন সংখ্যা জানা যায়নি।
নরসিংহপুর এলাকার শারমিন গ্রুপের কারখানাগুলো গতকাল সকালে বন্ধ ঘোষণা করা হলেও আজ সেগুলো উৎপাদন চলছে। এসময় কারখানার সামনে পুলিশের পাশাপাশি কয়েকজন যুবকে লাঠি হাতে পাহাড়া দিতে দেখা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক নিজেকে শারমিন গ্রুপের স্টাফ দাবি করে বলেন, 'আমরা কারখানার নিরাপত্তায় সড়কের পাশে অবস্থান নিয়েছি। কারণ অন্য কারখানার শ্রমিক ও চাকরি প্রত্যাশীর নামে বহিরাগতরা কারখানায় হামলা করে।
শারমীন গ্রুপের নিরাপত্তাকর্মীরা জানান, বেলা ১২ টার পর কারখানার শ্রমিকরা কাজ না করে বেরিয়ে যাওয়ার সময় নিরাপত্তাকর্মীদের মারধর করে। এতে রাশেদুল গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য আশুলিয়ার নারী ও শিশু হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এর আগে সকালে শ্রমিকদের ছোড়া ইট পাটকেলে শিল্প পুলিশের কর্মকর্তা ও সদস্য আহত রয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে তাদের পরিচয় জানা যায়নি। এসময় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির তৈরির অভিযোগে নরসিংহপুর এলাকা থেকে স্থানীয় জনতা দুই জনকে আটক করে শিল্প পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে।
নারী ও শিশু হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মিরাজুল ইসলাম জানান, সকাল থেকে তারা ২০-৩০ জনকে আহত শ্রমিককে চিকিৎসা দিয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই হাতে, মাথায় আঘাত, ফ্যাকচারের মত আঘাত নিয়ে এসেছেন।
সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে আশুলিয়ার নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পলাশবাড়ী এলাকায় গিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ইপিক গ্রুপের পিজিসিএল গার্মেন্টসের শ্রমিকরা। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। এছাড়া আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকায় বেশ কয়েকটি কারখানার সামনেও বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকরা। তবে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এবং বিশৃঙ্খলা এড়াতে শিল্পাঞ্চলে শিল্প পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং বিজিবির সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।
শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, আগের তুলনায় বৃহস্পতিবার পরিস্থিতি অনেকটাই ভালো রয়েছে। সকালে অধিকাংশ কারখানার শ্রমিকরা স্বাভাবিকভাবে কাজে যোগ দিয়েছেন। তবে হাতে গোনা কয়েকটা কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করলে সেসব কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া কারখানায় হামলার সময় শ্রমিকদের সহযোগিতায় দুই জনকে আটক করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ওএফ/এসআর