For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের বাকি ২ লাখ টাকা

Published : Sunday, 1 September, 2024 at 5:58 PM Count : 79

৫ আগস্ট টানা গণঅভ্যুত্থানের মুখে ১৬ বছর ক্ষমতায় শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে  যান। এর পর থেকেই একে একে বেরিয়ে আসতে শুরু করে আওয়ামী লীগ দলীয় নেতাদের দুর্নীতির ও অনিয়মের ফিরিস্তি। বেরিয়ে আসছে চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ নানা অপকর্মের তথ্য।

তবে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসছে দলটির ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন অপকর্ম। সারাদেশের ন্যায় রাজশাহী কলেজেও একক আধিপত্য রেখেছিল সংগঠনটি।

ইতোমধ্যেই তাদের প্রধান নেতাকর্মীদের দখলে থাকা রুম থেকে উদ্ধার হয়েছে বিপুল দেশীয় অস্ত্র, মদ, গাজাসহ বিকৃত যৌনাচারের নানা উপকরণ। এর বাইরেও দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের নামে ক্যাম্পাস ও হল সংলগ্ন এলাকার ক্যান্টিন-ডাইনিংয়ে বাকি খাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

পাওনাদারদের দাবি, দলীয় প্রভাব খাটিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃস্থানীয় নেতাদের পরিচয়ে হুমকি-ধামকি দিয়ে বাকি খেতেন তারা। বকেয়া টাকা চাইলে হামলা-ভাঙচুরসহ ক্যান্টিন বন্ধেরও হুমকি দিতেন তারা।
অভিযোগ উঠেছে, রাজশাহী কলেজ ক্যানটিন ও ডাইনিংয়ে প্রায় দুই লাখ টাকার বকেয়া রেখে ছাত্রলীগের একটি অংশ গা ঢাকা দিয়েছে। গত তিন বছর ধরে ছাত্রলীগের সদস্যরা ক্যান্টিনে খেয়ে টাকা না দিয়ে চলে যেতেন। একাধিকবার টাকা চাওয়ার পরেও কোনো প্রতিকার পাননি তারা। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান মেলেনি।

যদিও কলেজ প্রশাসন বলছে, এ বিষয়ে তারা অবগত ছিলেন না। ক্যানটিন ও ডাইনিং পরিচালনাকারী ব্যবসায়ীরা ছাত্রলীগ নেতাদের এই বকেয়া টানতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন।

এই পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। বিশেষ করে রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের নেতারা, যারা কলেজের ছাত্রও নন, তাদেরও নিয়মিতভাবে ক্যানটিন-ডাইনিংয়ে বিনা পয়সায় খাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। টাকা চাইলে তারা হুমকি দিতেন, এমনকি বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে ফ্রি খাবারের সঙ্গে চাঁদাও আদায় করা হতো ব্যবসায়ীদের থেকে। ফলে ডাইনিং পরিচালনাকারীরা ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাননি।

ক্যান্টিন ও ডাইনিং পরিচালনাকারীরা জানিয়েছেন, রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতাদের নামে বিপুল বকেয়া জমেছে। বিশেষ করে, বর্তমান ছাত্রলীগ সভাপতি রাশিক দত্তর নামে ৩ হাজার ৪৩০ টাকা, সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম জাফরের নামে ১৭ হাজার ৯৯৫ টাকা এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাঈমের নামে ১১ হাজার ১৭৪ টাকা বকেয়া রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য নেতাদের নামেও বেশ কিছু টাকা বাকি রয়েছে।

মুসলিম ছাত্রাবাসের ডাইনিংয়ে বকেয়ার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। ওই ডাইনিংয়ে বাকি ১ লাখ ২০ হাজার টাকারও অধিক। এখানে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা পিয়াসের নামে ৬০ হাজার টাকা এবং মেহেদি হাসান ও রাফির নামে যথাক্রমে ১৫ হাজার ও ১০ হাজার টাকা বকেয়া রয়েছে। এ ছাড়া ইমন, সিয়াম, সিজারসহ আরও অনেক নেতার নামে ২ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বাকি রয়েছে।

এদিকে, সাবেক হোস্টেল সুপার আনিসুজ্জামান মানিকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ব্যবসায়ী ও হোস্টেলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের। জানা গেছে, তিনি নিজেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে পরিচয় দিতেন। দায়িত্বে থাকাকালীন তিনি ছাত্রলীগ নেতাদের নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ না করে ছাড় দেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শিক্ষার্থীদের দাবি, আনিসুজ্জামান মানিকের সময়ে হোস্টেলের পরিবেশ ক্রমশ অবনতির দিকে ধাবিত হয়। তিনি সরকার দলের ছাত্রনেতাদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন। যা শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শিক্ষাগত বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তার দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে হোস্টেলে নানা অনিয়ম ও অসঙ্গতির ঘটনা বৃদ্ধি পায়, যা বারবার বলেও কোনো সমাধান মেলেনি।

সাবেক হোস্টেল সুপার আনিসুজ্জামান মানিক বলেন, হোস্টেলের ডাইনিংয়ের সঙ্গে কলেজ প্রশাসনের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা তাদের মতো ব্যবসা করেছে। ছাত্রলীগের বাকি সম্পর্কে কোনো কিছুই জানা নেই।

ক্যানটিনের দায়িত্বে থাকা আবুল মাসুদ বলেন, বাকির খাতা লিখতে লিখতে আমি দিশেহারা। এগুলো নিয়ে অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি। আমি অনেকবার অধ্যক্ষসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের বলেছি, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

বর্তমান হোস্টেল সুপার মো. গোলাম রাব্বানি জানান, দায়িত্ব গ্রহণের পরই বকেয়ার তথ্য কলেজ প্রশাসনকে জানিয়েছেন এবং দ্রুত বাকি আদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাশিক দত্ত, সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম জাফর, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি নূর মোহাম্মদ সিয়াম ও সাধারণ সম্পাদক সিরাজুম মুবিন সবুজকে একাধিকবার ফোন দিলেও ফোন রিসিভ করেননি তারা।

রাজশাহী কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. ইব্রাহিম আলী বলেন, আমি এ বিষয়ে অবগত নই, তবে উপদেষ্টা কমিটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

আরএইচএফ/এসআর

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,