সিরাজগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি ঘিরে সহিংসতার সময় দুই বিএনপি কর্মী ও এক যুবদল নেতা হত্যার ঘটনায় আওয়ামীগের সাবেক সংসদ সদস্য ড. জান্নাত আরা হেনরী, অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার সহ জেলা আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের ৯০০ জনের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। তবে এনায়েতপুর থানায় হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ ও ১৫ পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় এখনও কোনো মামলা হয়নি।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) রাতে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা তিনটি দায়ের করা হয়।
মামলা তিনটিতে ৪৬৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা জেলা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী বলে জানাগেছে।
মামলার বাদীরা হলেন, পৌর শহরের মাছুমপুর দক্ষিণপাড়া মহল্লার নিহত জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রঞ্জু শেখের স্ত্রী মৌসুমি খাতুন, গয়লা মহল্লার নিহত যুবদলকর্মী আব্দুল লতিফের বোন সালেহা খাতুন এবং একই মহল্লার নিহত সুমন শেখের বাবা গঞ্জের আলী।
মামলায় উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন, সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কেএম হোসেন আলী হাসান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ তালুকদার, সাংগঠনিক সম্পাদক দানিউল হক মোল্লা, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শামীম তালুকদার লাবু , সিরাজগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র সৈয়দ আব্দুর রউফ মুক্তা, সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম সজল, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক সেলিম আহম্মেদ, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুর রহমান, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রাশেদ ইউসুফ জুয়েল, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জাকিরুল ইসলাম লিমন, সাধারণ সম্পাদক সুমন রহমান পীর, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আহসান হাবিব খোকা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ বিন আহমেদ।
সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গত ৪ আগস্ট সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে উল্লেখিত আসামিদের নির্দেশ, ইন্ধন বা সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে তিনজনকে গুলি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। এ হত্যায় জ্ঞাত ও অজ্ঞাত ৯০০ ব্যক্তির নামে মামলা করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে জোর চেষ্টা চলছে।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি ঘিরে সহিংসতার জেলায় ছাত্র-জনতার সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামীলীগের নেতা কর্মিদের সাথে পৃথক সংঘর্ষে এনায়েতপুর থানার ১৫ পুলিশসহ জেলায় মোট ৩২ জন নিহত হয়।
আন্দোলনের প্রথম দিনে (৪আগষ্ট) থানায় অগ্নিসংযোগ করে ১৫ পুলিশকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে একজন ওসি, পাঁচজন এসআই, একজন এএসআই এবং আটজন কনস্টেবল ছিলেন। এছাড়া শিক্ষার্থী শিহাব ও সিয়াম ছাড়াও ইব্রাহিম নামে এক তাঁত শ্রমিক নিহত হন।
তিনটি হত্যার ঘটনায় (বেলকুচি-চৌহালী) সাবেক সংসদ সদস্য ও মন্ডল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মমিন মন্ডলসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের প্রায় দেড় হাজার নেতাকর্মীর নামে এনায়েতপুর থানায় তিনটি পৃথক মামলা করা হয় তবে। ১৫ পুলিশ হত্যাকান্ডের এখনও কোনো মামলা হয়নি।
এবি /এসআর