অনিয়মে ভরপুর ‘মিঠাই’, আউটলেট বন্ধ করে দিল ভোক্তা অধিকার
Published : Thursday, 22 August, 2024 at 5:14 PM Count : 163
মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার বিক্রি করায় মিঠাই এর কারওয়ান বাজার শাখা বন্ধ করে দিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। একই সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত জনস্বার্থে এই শাখা বন্ধ থাকবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পূর্ব অভিযোগের ভিত্তিতে মিঠাই এর আউটলেটে অভিযানে যায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অভিযানের নেতৃত্ব দেন ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক, ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল।
জানা যায়, মিঠাই এর খাবারের মেয়াদ নিয়ে অভিযোগ তুলে ভুক্তভোগী এক ভোক্তা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন। তার পরীপ্রেক্ষিতে সত্যতা যাচাই করতে কারওয়ান বাজারে মিঠাই এর আউটলেটে যায় ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তা। এসময় অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।
অভিযানে দেখা যায়, নিয়মিত বাসি এবং মেয়াদহীন খাবার বিক্রি করতো মিঠাই। কিছু খাবারের মেয়াদ ২ থেকে ৩ দিন আগে শেষ হলেও সেগুলো বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এছাড়া চালান ভাউচারে ৪ কেজি মিষ্টি আনার কথা থাকলেও দোকানে ১০ থেকে ১৫ কেজি মিষ্টি পাওয়া যায়। সেগুলো কবে আনা হয়েছে তার কোনো প্রমাণাদি দেখাতে পারেনি। পাশাপাশি দধি, পাউরুটিসহ বিভিন্ন বেকারী পণ্যের মেয়াদ নেই। গন্ধ হয়ে গেছে এমন পণ্য দোকানে বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে।
আরও দেখা যায়, আগস্টের পরিবর্তে সেপ্টেম্বর মাসের তারিখ দিয়ে মেয়াদের ট্যাগ লাগানো হয়েছে। দোকানে বসে পণ্যের মোড়কে মেয়াদ লাগানো আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও সেই কাজটি নিয়মিত করতো মিঠাই। দোকানে বসেই পণ্যের মোড়কে মেয়াদ লাগিয়ে আসছিল। কোনো পণ্যের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে সেই স্টিকার তুলে আবার নতুন করে মেয়াদ লাগানো হতো।
এছাড়াও ভোক্তা স্বার্থ বিরোধী আরও অপরাধের বিষয়ে জানতে চাইলে দায়িত্বরত ম্যানেজার অপরাধ স্বীকার করেন।
ভোক্তা স্বার্থ বিরোধী বিভিন্ন অপরাধ আমলে নিয়ে ভোক্তা অধিকার আইন ২০০৯ অনুসারে তাৎক্ষণিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে জনস্বার্থে প্রতিষ্ঠানটি পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়।
অভিযানের বিষয়ে আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে একজন কাস্টমার আগেই অভিযোগ দিয়েছিলেন- যে এখানে (মিঠাই) মিষ্টিতে মেয়াদ দেওয়া থাকে না। সরেজমিনে তদন্ত করতে এসে দেখলাম, আসলেই মিষ্টিতে কোনো মেয়াদ ছিল না। মিঠাই এর ইনভয়েস যাচাই করে দেখলাম, হয়তো মিষ্টি আসে দুই কেজি কিন্তু স্টকে থাকে ৪ কেজি। বাকি ২ কেজি হয়তো আরও তিন দিন আগের মিষ্টি, সেগুলো সংরক্ষণ করে এখানে বিক্রি করছে। শুধু মিষ্টি নয় এখানে যেসব পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে সেগুলোর বেশিরভাগই মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। সেই মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যগুলো এখানে বিক্রি করা হচ্ছে। দই, ডোনেট, পাউরুটিসহ প্রত্যেকটা পণ্যেরই মেয়াদ শেষ।
তিনি আরও বলেন, আরও একটি বিষয় খেয়াল করলাম, আজকে তারিখ ২২ আগস্ট ২০২৪ কিন্তু পণ্যের মোড়কে তারিখ দেওয়া ছিল ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪। অর্থাৎ উৎপাদন তারিখ অগ্রিম দেওয়া হয়েছে। এসব অনিয়ম মেনে নেওয়ার মত না। এছাড়া আউটলেটের ম্যানেজার প্রতিদিন সকালে দোকানে বসে পণ্যের মোড়কে তারিখ লাগিয়ে দেন। এতে করে মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যের লেবেল তুলে আবার নতুন করে মেয়াদ লাগিয়ে দেওয়া যায়। এতে করে এই আউটলেট থেকে ভোক্তারা প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছিল। এই সকল অপরাধে এই প্রতিষ্ঠানটিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ করা হয়েছে। এবং একদিনের জন্য এই প্রতিষ্ঠানটির সকল প্রকার কার্যক্রম জনস্বার্থে বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এসআর